ঢাকা: গ্লোবাল টেকনোলজি লিডার শাওমি আজ তৃতীয় বছরের মতো ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ২০২১ সালের তালিকায় ২০২০ সালের চেয়ে ৮৪ ধাপ এগিয়ে শাওমির অবস্থান এখন ৩৩৮তম।
ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ তালিকায় ইন্টারনেট ও রিটেইল ক্যাটাগরিতে ২০২১ সালের দ্রুততম প্রবৃদ্ধির কোম্পানি হিসেবে এই অবস্থান দখল করেছে শাওমি।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) শাওমি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়।
শাওমির প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও সিইও লেই জুন বলেন, ‘আমাদের অতীতের অর্জনের থেকে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধিতেই আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ। শাওমি এখনও তরুণ কিন্তু উচ্চাভিলাষী একটি প্রতিষ্ঠান যা প্রেরণায় পরিপূর্ণ। আমি বিশ্বব্যাপী শাওমির ফ্যানদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই কেননা তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনই শাওমিকে করেছে প্রাণবন্ত ও উদ্যোমী।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, এটা শাওমির জন্য কোনো সীমা নয় এবং আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতে আমরা আরও শক্তিশালী ও দুর্দান্ত শাওমিকে দেখতে পাব। সামনের বছর ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ তালিকায় আমরা আরও অসামান্য রেকর্ড অর্জন করবো।
শাওমির আয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে শাওমি মোট আয় করেছে ২৪৫.৯ বিলিয়ন ইউয়ান। এটাই শাওমিকে ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ তালিকায় ৩৩৮তম স্থানে তুলে এনেছে। ২০২১ সালেও শাওমি দ্রুত প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। এ সময় কোম্পানিটি অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি করতে পেরেছে আয় ও মুনাফায়। যা প্রত্যাশিত আয়কে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে শাওমি আয় করেছে ৭৬.৯ বিলিয়ন ইউয়ান (চীনা মুদ্রা)। যা বার্ষিক হিসেবে বেড়েছে ৫৪.৭ শতাংশ। এই সময়ে মুনাফা এসেছে ৬.১ বিলিয়ন ইউয়ান, মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬৩.৮ শতাংশ।
ক্রমবর্ধমাণ এই প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে বাজারে হাই-অ্যান্ড ক্যাটাগরির স্মার্টফোন, সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রুত প্রবৃদ্ধি এবং কোম্পানির নতুন রিটেইল ব্যবসার উন্নয়ন।
শাওমির মূল লক্ষ্য হলো উদ্ভাবনী প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভালো অভিজ্ঞতা তৈরি করা। এর মাধ্যমে শাওমির হাই-অ্যান্ড ফোনের বাজার বিশেষ করে মি১০ ও মি১১ সিরিজ দিয়ে সেই অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে পেরেছে। ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে চীনের মূল ভূখণ্ডে ও বিশ্ববাজারে শাওমি ৪০ লাখের বেশি স্মার্টফোন সরবরাহ করেছে যার ডিভাইস প্রতি গড় মূল্য চীনে ৩০০০ ইউয়ান এবং বিশ্ব বাজারে ৩০০ ইউরোর চেয়ে বেশি।
শাওমির বৈশ্বিক সম্প্রসারণ প্রবৃদ্ধিকে আরও বাড়িয়েছে। গত ১৭ জুলাই বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিস শাওমিকে বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় ঘোষণা করেছে। এ সময় শাওমির সরবরাহ করা স্মার্টফোনের হিসাবে অ্যাপলকে পেছনে ফেলে, আর বাজার শেয়ার দখল করে ১৭ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজার হিসেবে ল্যাতিন আমেরিকায় বছরে ৩০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে, আফ্রিকার বাজারে প্রবৃদ্ধি করেছে ১৫০ শতাংশের বেশি। এছাড়া অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি পূর্ব ইউরোপে, যা ৫০ শতাংশ। শাওমির স্মার্টফোন এখন বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১২টি বাজারে শাওমি শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। আর বাজারে শেয়ারের দিক থেকে ইউরোপে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। সর্বশেষ ১৫ প্রান্তিকে ভারতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে শাওমি।
নতুন রিটেইলের ক্ষেত্রে ২০২০ সাল থেকে শাওমির ফিজিক্যাল স্টোরগুলোর দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চীনে মি হোম স্টোরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫০০ এর বেশি। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে ১ হাজারের বেশি শাওমি স্টোর রয়েছে। এর পাশাপাশি সারা বিশ্বেই শাওমির ফিজিক্যাল রিটেইল নেটওয়ার্ক খুব দ্রুত গড়ে তোলা হচ্ছে।
শাওমি গবেষণা ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রতিভায় বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি আরঅ্যান্ডডি দলকে অনুপ্রাণিত করায় নিত্য নতুন প্রযুক্তি উপহার দিতে পারছে শাওমি গ্রাহকদের। আর একারণেই শাওমি স্মার্ট ফ্যাক্টরি প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করতে পেরেছে।
শাওমির দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সিইও লেই জুন জানান, পরবর্তী দশকে শাওমি উৎপাদন শিল্পে নতুন চালিকাশক্তি হবে।
যখন স্মার্টফোন, এআইওটি এবং স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে শাওমি নেতৃত্ব দিচ্ছে, তখন সক্রিয়ভাবে স্মার্ট ইলেকট্রিক গাড়ির বাজারে প্রবেশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২১ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, সিইও লেই জুনের নেতৃত্বে শাওমি ইলেকট্রিক গাড়ির বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।
এজন্য এ খাতে আগামী ১০ বছরে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে শাওমি। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ করবে ১০ বিলিয়ন ইউয়ান বা ১.৫৫ বিলিয়ন ডলার। স্মার্ট ইলেকট্রিক গাড়ি শাওমির জন্য নতুন চালিকাশক্তি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০২১
এমআরএ