ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খুলনায় বাগদা চিংড়ির উৎপাদনে ধস, দাম চড়া

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২১
খুলনায় বাগদা চিংড়ির উৎপাদনে ধস, দাম চড়া

খুলনা: ‘সাদা সোনা’ খ্যাত বাগদা চিংড়ি ভরা মৌসুমেও খুলনার চাষিদের মুখে হাসি নেই। বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে ধস নেমেছে।

যার কারণে লোকসানের মুখে পড়ছেন চিংড়ি চাষিরা।

যদিও চাষিরা বলছেন, এবার চিংড়ির দাম ভালো। কিন্তু ঘেরে কাঙ্ক্ষিত মাছ উৎপাদন না হওয়ায় অনেকে মহাজন ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। উৎপাদন ব্যয় না ওঠায় চাষ ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে ভেনামি চিংড়ি চাষেরও চিন্তা ভাবনা করছেন।

খুলনা জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক ড. মো. ফরিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা জেলায় বাগদা ঘের রয়েছে ২৩ হাজার ৪শ ৪০টি। দাকোপে ২ হাজার ৫শ ১৬টি, পাইকগাছায় ৩ হাজার ৯শ ৪০টি,  কয়রা ৭ হাজার ২শ’টি, বটিয়াঘাটায় ৮শ ১১টি, ডুমুরিয়ায় ৭ হাজার ৮শ ২১টি, রূপসায় ১ হাজার ১শ ৫১টি ও তেরখাদায় ১টি ঘের রয়েছে।

এদিকে চাষি ও ঘের মালিকরা বলছেন, করোনাকালে নানা সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার মধ্যে ঘেরে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। অতিখরা, অতিবৃষ্টি, পোনার মান খারাপ ও ভাইরাসের কারণে ভালো মানের মাছ উৎপাদন হয়নি। চিংড়ি শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের আন্তরিকতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

পাইকগাছার লতা গ্রামের চিংড়ি ঘের মালিক শামীম মোরশেদ বলেন, আমার দেড়শ বিঘা বাগদা চিংড়ির ঘের আছে। এবার বাগদার দাম বেশি কিন্তু উৎপাদন খারাপ। চিংড়ি বড় হয়নি। দাম গত দুই বছরের তুলনায় ভালো। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও মাছের মান খারাপ হওয়ায় উৎপাদন কম হয়েছে। আগে ভাইরাস না লাগলেও বর্তমানে সামান্য লেগেছে। এতে কিছু মাছ মরে যাচ্ছে। ছোট মাছের দাম কম হলেও বড় চিংড়ি বর্তমানে ৭শ টাকা বেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কয়রার মহারাজপুরের খড়িয়ার বিলের বাগদা চাষি খোকন বলেন, ঘেরে এবার বাগদা চিংড়ির উৎপাদন  খুব খারাপ। চিংড়ি চাষ খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। দেখা যায় আগের বছর যার ভালো হয়েছে। এবার তার ভালো হয়নি। আমার ২২ বিঘা জমিতে ঘের রয়েছে। এ বছর উৎপাদন কম হলেও গত বছরের তুলনায় দাম ২০০-২৫০ টাকা কেজিতে বেশি। মাছের পোনা যখন ছাড়া হয় তখন বৃষ্টি কম হওয়ায় পানি অতিরিক্ত লবণাক্ত হয়ে যাওয়ায় মাছ চাষ ভালো হয়নি। পরে আবার অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে মাছ ভেসে গেছে। যার কারণে মাছ যা ছাড়া হয়েছে তার সব পাওয়া যায়নি।

দাকোপের ঘের মালিক বিজন বৈদ্য বলেন, এবার প্রথমে চিংড়ি চাষে পানি সংকট দেখা দিয়েছিল। এতে ঘের মালিকরা পরিচর্যায় বাধাগ্রস্ত হয়েছিলেন। পরে আবার বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বর্ষণে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ঘের তলিয়ে গেছে। এতে ভেসে গেছে বাগদা চিংড়ি। এবার তুলনামূলক ঘেরে মাছে ভাইরাসের আক্রমণ কম। তবে চিংড়ির সাইজ খুব একটা বড় হয়নি। যদিও বাজারে বড় চিংড়ির চাহিদা ও দাম উভয়ই বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার বাগদার ভরা মৌসুম চললেও মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কম। মাছের আড়তগুলোতে গতবারের তুলনায় মাছ উঠছে অর্ধেক। যদিও দাম গত দুই বছরের তুলনায় কেজি প্রতি ২০০-২৫০ টাকা বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২১
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।