ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ধাক্কা ওমিক্রনের নেতিবাচক প্রভাব ব্যাংকিং খাতসহ পুরো অর্থনীতিতে পড়বে বলে মনে করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
সংগঠনটি বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া চিঠিতে এ কথা উল্লেখ করে বলেছে, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ হঠাৎ তীব্রতর হওয়ায় দেশের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে ২২ জানুয়ারি দেওয়া চিঠিতে এ সব কথা লিখেছেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন- এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেশের বিরাজমান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ওপর সারাদেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে এফবিসিসিআই। এ সভায় ব্যবসায়ী নেতারা উল্লেখ করেন যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখনও সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলে এখনও অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ওই চিঠিতে এফবিসিসিআই বলেছে, কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ হঠাৎ তীব্রতর হওয়ায় দেশের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সরকার এরই মধ্যে নতুন করে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। অর্ধেক জনবল নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে কোভিড পুনরায় বিস্তার লাভ করায় লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ও ফ্রেইট চার্জ বাড়ছে। এতে দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধার মেয়াদ বাড়ানো না হলে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনিচ্ছাকৃত খেলাপী গ্রাহকে পরিণত হবে, যা ব্যাংকিং খাতসহ পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সারা দেশের চেম্বারের নেতৃবৃন্দ ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়া আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখার দাবি করেছেন।
এফবিসিসিআই চিঠিতে আরও বলেছে, দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্বকারী শীর্ষ সংগঠন
এফবিসিসিআই ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের দাবির প্রতি সহমত পোষণ করেছে। এ অবস্থায় বিদ্যমান কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে বিনা শর্তে ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়া আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ব্যাংক বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল রাখতে সক্রিয় সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসবে।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার পর এখন ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণে আবার ব্যবসা বাণিজ্যে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় অনেক ব্যবসায়ীর ঋণের কিস্তি দেওয়ার সক্ষমতা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সময় না বাড়ালে ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই খেলাপি হবেন, যা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, মহামারিকালীন মন্দা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা এখন আরো বেশি দরকার। মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। কিন্তু অন্যান্য প্রণোদনা তহবিলের অর্থ প্রায় শতভাগ ছাড় হলেও এসএমই প্রণোদনার বড় অংশ বিতরণ হয়নি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ছোট আকারের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর অনীহা আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২২
এসই/এসআই