ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বরগুনায় ২ দিনে ২ কোটি টাকা মাছ বিক্রি

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২২
বরগুনায় ২ দিনে ২ কোটি টাকা মাছ বিক্রি

বরগুনা: বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে এখন প্রতিদিনই ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এরই মধ্যে রোববার ও সোমবার দুই দিনে ৩৮ হাজার কেজি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিক্রি হয়েছে যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা।

 

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটায় প্রায় দুই কোটি টাকার মত এসব মাছ বিক্রি হয়েছে।

খুচরা ক্রেতারা বলেন, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। আর ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। ১ কেজি ওজনের বেশি হলে প্রতি কেজির দাম ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা।

বরগুনার পাথরঘাটার বিএফডিসির মার্কেটিং অফিসার বিপ্লব কুমার সরকার বাংলানিউজকে জানান, গত দুই দিনে বিএফডিসি মৎস্য বাজারে মোট ৩৮ হাজার ১৫ কেজি মাছ বিক্রি হয়েছে। তার মধ্যে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২২ হাজার ২১৭ কেজি অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হয়েছে ১৫ হাজার ৭৯৮ কেজি। মোট মাছ বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, ইলিশের ওজন ছিল ৬০০-৭০০ গ্রাম। কিন্তু সোমবার পাওয়া ইলিশের ওজন ৮০০ থেকে ১৪০০ গ্রাম। এখন প্রতিদিনই যেমন ট্রলারের সংখ্যা বাড়বে, মাছের সংখ্যাও বাড়বে, তেমনি রাজস্ব বাড়বে বলেই আশাবাদী।

এক নজরে বরগুনা জেলার সাধারণ তথ্যাবলী:
আয়তন ১৯৩৯.৩৯ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা ১২ লাখ ৩০ হাজার, উপজেলা ৬টি, ইউনিয়ন ৪২টি, মৎস্য চাষি ৮২ হাজার ২২৬ জন, মৎস্যজীবী ৪৭ হাজার ৪৪০ জন, নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৫ হাজার ১৫৩ জন, মৎস্য আড়ত ২০৮টি, মৎস্য হ্যাচারি সরকারি -দুটি, বেসরকারি-চারটি, চিংড়ি হ্যাচারি একটি (বেসরকারি), মৎস্য নার্সারি ৬৯টি (বেসরকারি), মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র একটি সরকারি (পাথরঘাটা), সরকারি পুকুর ৪১৪টি, বেসরকারি পুকুর ৮৫ হাজার ৭৩১টি, জেলায় মাছের মোট উৎপাদন ১ লাখ ৯ হাজার ৭০ মেট্রিক টন, রেণু উৎপাদন এত হাজার ৮২৫ কেজি (সরকারি বেসরকারি), চিংড়ির পি.এল উৎপাদন ৪ লাখ (বেসরকারি), ইলিশ উৎপাদন ৭৩ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন।

বরগুনায় নিবন্ধিত জেলে পরিবারের সংখ্য বরগুনা সদর উপজেলায় ৭৭৭৮, আমতলী ৬৭৮৯, পাথরঘাটা ১১৪১১, বেতাগী ৩০৫০, বামনা ১১৫৬, তালতলী ৭১২৫ জন। মোট ৩৭৩০৯ জন জেলে রয়েছে।

জেলায় মাছের উৎপাদন ও চাহিদা:
মাছের মোট উৎপাদন ১ লাখ ৯ হাজার ৭০ মেট্রিক টন। মাছের মোট চাহিদা ২৬ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত মাছের পরিমাণ ৮২ হাজার ১৩৩ মেট্রিক টন।

বিগত পাঁচ বছরে মাছের উৎপাদন:
২০১৫-১৬ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৭৩০৩ (মেট্রিক টন) ও সামুদ্রিক ৭৪৭০০ মেট্রিক টন। মোট ৯২০০৩ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৭৩৫৩ মেট্রিক টন ও সামুদ্রিক ৭৫১৫০ (মেট্রিক টন) মোট ৯২৫০৩ মেট্রিক টন উৎপাদন।  

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৮৩৭১ মেট্রিক টন ও সামুদ্রিক ৮০০৯৭ মেট্রিক টন। মোট ৯৮৪৬৮ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৯৬৭৪ মেট্রিক টন, সামুদ্রিক ৮৩৫৮২ মেট্রিক টন। মোট ১০৩২৫৬ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ২১২৪০ মেট্রিক টন, সামুদ্রিক ৯০১২৬ মেট্রিক টন। মোট ১০৯০৭০ মেট্রিক টন উৎপাদন।

বিগত পাঁচ বছরে ইলিশ শিকার:
২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সাগরে ৬০০৭০ মেট্রিক টন, নদীতে ১৭৩৫ মোট ৬১৮০৫ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৬-১৭ সাগরে ৬২২৭৭ মেট্রিক টন, নদীতে ২০২১ মোট ৬৪৩৬৮ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৭-১৮ সাগরে ৬৬৯১৭ মেট্রিক টন, নদীতে ৪৮২২ মোট ৭১৭৩৯ মেট্রিক টন  উৎপাদন। ২০১৮-১৯ সাগরে ৬৭০৩৩ মেট্রিকটন, নদীতে ৪৮৫০ মোট ৭১৮৮৩ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৯-২০ সাগরে ৬৮২৩০ মেট্রিক টন, নদীতে ৫১৫১ মেট্রিক টন মোট ৭৩৩৮১ মেট্রিক টন উৎপাদন।

৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ শিকার নিষিদ্ধকালীন কার্যক্রম:
অভিযান ২৪০টি, মোবাইল কোর্ট ৩টি, গণসচেতনতা সভা ৩৫টি, আটক মাছের পরিমাণ ৩ হাজার ০৮৬ মেট্রিক টন, আটক জালের পরিমাণ ১ হাজার ৩৯৮ পক্ষ মিটার, আটক জালের আনুমানিক মূল্য ৪২ হাজার ৯৫ লাখ টাকা, আটক নৌযান ও দায়ের করা মামলা ১৩টি নৌযান ৩টি মামলা, জরিমানা ২ লাখ ৭৬৪ টাকা নিলাম ২ হাজার ৫২৪ জন।

জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জাল ভর্তি মাছ পাওয়ায় জেলেদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। তারা তড়িঘড়ি করে নদী ও সাগর মোহনায় মাছ শিকার করে পাথরঘাটাসহ বরগুনার বিভিন্ন বাজারে মাছ নিয়ে এসেছেন তাদের প্রত্যেকটি ফিশিং বোর্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ দেখা গেছে। ধারণা করছি গত বছরের তুলনায় এ বছর বড় সাইজের বেশি ইলিশ ধরা পড়বে। তবে বড় সাইজের ইলিশের দাম একটু বেশি থাকে বাজারে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের গবেষক ড. লোকমান হোসেন বলেন, মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরবর্তী সময়ে তারাই সুফল ভোগ করে। সাগরে এখন ইলিশ ও অন্যান্য মাছ আকারে যেমন বড় হচ্ছে, তেমনি উৎপাদনও বাড়ছে।  

তিনি আরও বলেন, নদীতে তৈরি হচ্ছে নাব্যতা-সংকট। নষ্ট হচ্ছে ইলিশের খাদ্য ও স্বাভাবিক চলাচল। এর ফলে সমুদ্র থেকে ইলিশ মিঠাপানিতে এসে প্রজনন মৌসুমে ডিম ছাড়তে পারছে না। তাই সবার আগে নদীতে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। তাহলে ইলিশ বাঁচবে; রক্ষা পাবে দেশের মৎস্যসম্পদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।