ঢাকা: দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সারা দেশে জুয়েলারি শিল্পকারখানা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর। তিনি বলেন, আপনারা যে যেখানে পারেন একক বা যৌথভাবে ছোট ছোট শিল্প তৈরি করেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানি করেন।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দুপুরে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের বাজুস কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
বাজুস ডিস্ট্রিক্ট মনিটরিং স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায়ের সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় বাজুসের সাবেক সভাপতি এম এ ওদুদ খান, বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, আজকে যারা ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় এসেছেন তাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সব ব্যবসায়ীকে এক হতে হবে। কারণ, মাথা যদি ঠিক না থাকে তাহলে সারা দেশে ঠিক থাকবে না। এজন্য আপনারা একজন আরেকজনকে সাহায্য সহযোগিতা করেন। আমি আমার পুরো কমিটিসহ বাংলাদেশ আপনাদের সাথে আছে। একজন আরেকজনকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে সহযোগিতা করেন। সবাই এক হলে জাতীয় যে মূল্যের সমস্যার কথা বলছেন, সেটা সমাধান করা যাবে না। এজন্য একজন আরেকজনকে উৎসাহী করেন। আমরা সবাই এক পরিবার। আর পরিবারের দায়িত্ব হলো, একজন আরেকজনকে দেখে রাখা।
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের বাজুস কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা | ছবি: শাকিল আহমেদ
আমাদের অনেক দূর যেতে হবে উল্লেখ করে বাজুস সভাপতি বলেন, আপনারা যে যেখানে পারেন একক বা যৌথভাবে ছোট ছোট শিল্প তৈরি করেন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানি করেন। আমি চাই, আপনারা দেশে জুয়েলারি শিল্প তৈরি করেন। দেশ বিদেশে ঘুরেন। বিদেশে রপ্তানির চিন্তা করেন। শুধু জেলাভিত্তিক থাকলে চলবে না, দেশব্যাপী করতে হবে। এজন্য বড় চিন্তা করতে হবে। আর বড় চিন্তা করতে মেধার প্রয়োজন হয়। মেধার জন্য দেশ বিদেশ ঘুরতে হবে। সেখান থেকে দেখে এসে দেশে শিল্প করেন। তিল তিল করে তাল হবে। এক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তার জন্য আপনাদের পাশে আছি।
ভ্যাট ট্যাক্স প্রসঙ্গে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, আপনারা যে ভ্যাট ট্যাক্সের সুবিধা চাচ্ছেন, সেটা গার্মেন্টস শিল্প পেয়ে থাকলে তার থেকে বেশি আপনারা পাবেন।
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের বাজুস কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা | ছবি: শাকিল আহমেদ
তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার একটাই আশা, আপনারা সবাই আগে বাজুসের সদস্য হন। সদস্য না হলে আগামীতে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাবে। বর্তমানে মেম্বারশিপ নিতে যে সহজ প্রক্রিয়া রয়েছে, আগামীতে সেটা নাও থাকতে পারে। তাই যত দ্রুত পারেন মেম্বারশিপ নেন।
বাজুসের সাবেক সভাপতি ও ডিস্ট্রিক্ট মনিটরিং স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, সরকার স্বর্ণ নীতিমালা ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই নীতিমালা পরিপূর্ণ নয়। স্বর্ণ নীতিমালায় শুধু আমদানির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু রপ্তানি করা, শিল্প গঠন করাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় আমরা নীতিমালায় পাইনি। ফলে যারা স্বর্ণের ডিলার রয়েছেন, তারা আনতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর দেশে রূপান্তরিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বাজুসের দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা আর বিদেশ নির্ভর থাকবে না। এ দেশেই শিল্পকারখানা স্থাপন করে স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হবে।
বাজুসের সাবেক সভাপতি এম এ ওদুদ খান বলেন, স্বর্ণ ব্যবসা করতে হলে সবাইকে বাজুসের সদস্য হতে হবে। আর সদস্য হতে শুধু ট্রেড লাইসেন্স লাগে। আগামীতে কেউ ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করতে পারবেন না। এজন্য আমরা জেলা প্রশাসককে চিঠি দেবো। অনেকে অভিযোগ করেন প্রশাসন হয়রানি করে। এ থেকে মুক্তি পেতে ব্যবসায়ীদের স্বর্ণ কেনার সময় অবশ্যই বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার পরামর্শ দেন। তাহলে পুলিশের হয়রানি কমে যাবে। এর ফলে নির্দ্বিধায় ব্যবসা করতে পারবেন। এছাড়া সনাতনী পদ্ধতিতে স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করা অপরাধ। এটা নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করে বন্ধ করতে হবে। এটা বাস্তবায়ন করলে সারা দেশে এক রেট চালু করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২২
জিসিজি/এমজেএফ