ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চা-শিল্পে দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে ২০ কোটি টাকা: বিটিএ

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২২
চা-শিল্পে দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে ২০ কোটি টাকা: বিটিএ পাতা উত্তোলনের দৃশ্য। ছবি: বিটিএ

মৌলভীবাজার: বাংলাদেশের চা-শিল্প যখন বিশ্ববাজারে প্রভাব বিস্তার করছে। ঠিক তখনই আন্দোলনের নামে ৩ হাজার ৫শ কোটি টাকার বাজারকে ঝুঁকিতে ফেলছে বলে আশঙ্কা করছেন চা সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা।



চা-বাগানে শ্রমের দৈনিক ৩শ টাকা মজুরির দাবি করা হলেও একজন শ্রমিক দৈনিক প্রায় ৪শ টাকা সমপরিমাণ সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে জানিয়েছে চা-বাগান মালিকপক্ষদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।

প্রত্যক্ষ সুবিধার মধ্যে দৈনিক নগদ মজুরি ছাড়াও ওভারটাইম, বার্ষিক ছুটি ভাতা, উৎসব ছুটি  ভাতা, অসুস্থজনিত ছুটি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিল ভাতা, কাজে উপস্থিতি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিলের ওপর প্রশাসনিক ভাতার মাধ্যমে সর্বমোট গড়ে দৈনিক মজুরির প্রায় দ্বিগুণ নগদ অর্থ দেওয়া হয় বলে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) এক বিবৃতি দেয় বিটিএ।

বিটিএর উদ্যোক্তারা গণমাধ্যমকে বলছেন, শ্রমিকদের সামাজিক উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য দৈনিক ১৭৫ টাকার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে এখন ১৬৮টি বাণিজ্যিক চা উৎপাদনের বাগান কাজ করছে। যেখানে ১ দশমিক ৫ লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। উপরন্তু, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩ শতাংশ চা উৎপাদন করে।   ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশি চায়ের বাজারের মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৫শ কোটি টাকা জিডিপিতে এই শিল্পের অবদান প্রায় ১ শতাংশ।

চা শ্রমিকদের ধারাবাহিক কর্মবিরতি ও আন্দোলনের কারণে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৬৮ চা বাগানে থেকে দৈনিক ২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যমানের চা-পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি বাগান মালিকদের।

চা শ্রমিকদের মজুরিসহ নানান সুবিধার ব্যাখ্যা দিয়ে তারা জানান, খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভর্তুকির মাধ্যমে দুই টাকা কেজি দরে মাস প্রতি শ্রমিককে প্রতি মাসে প্রতি ৪২ দশমিক ৪৬ কেজি চাল অথবা গম রেশন দেওয়া হয়। তাছাড়া শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রায় ৯৪ হাজার ২শ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য বন্টন করা হয়েছে।

১৯০ বছরের পুরনো শিল্প হিসেবে বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোনো শিল্পের তুলনায় অনেক আগে থেকেই শ্রমিক আইন অনুসরণ করা হচ্ছে প্রতিটি চা-বাগানে। শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নিশ্চিতে ১৬ সপ্তাহের মজুরিসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির পাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা।

একজন শ্রমিকের বসত বাড়ির জন্য পরিবার প্রতি ১ হাজার ৫৫১ স্কয়ার ফিট করে বাড়িসহ সর্বমোট ৫ হাজার ৮শ বিঘা জায়গা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দুটি বড় গ্রুপের ও ৮৪টি বাগানের হাসপাতালে ৭২১ শয্যার ব্যবস্থা, ১৫৫টি ডিসপেনসারসহ সর্বমোট ৮৯১ জন মেডিক্যাল স্টাফ নিয়োজিত আছেন।

শ্রমিকদের সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রাথমিক, জুনিয়র ও উচ্চ বিদ্যালয় মাইল সর্বমোট ৭৬৮টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে যেখানে এক হাজার ২শ ৩২ শিক্ষকের মাধ্যমে এখন ৪৪ হাজার ১৭১ জন শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে।

এছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের ভাতা, বিভিন্ন রকম শ্রমিক কল্যাণ সূচি যেমন বিশুদ্ধ খাবার পানি, ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, পূজা, বিনোদন প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে সামগ্রিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়াও, চা শ্রমিকের অবসরের পর তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে থাকে, যা একজন চা-শ্রমিকের চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে।

এর আগে, বিগত ২০১২ সাল থেকে ১০ বছরে চায়ের নিলাম মূল্যের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১৬ হারে বাড়লেও চা-শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয় ৯৪ দশমিক ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।