ঢাকা: বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) মোটরযান চুক্তির আওতায় ভারত ফ্রি ট্রানজিট দিলেও ভুটানের অবকাঠামো দুর্বলতার জন্য তা আটকে আছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
শনিবার (১৭ সেপ্টম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ওভারসিস করেসপনডেন্ট অব বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি প্রাধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশকে ফ্রি ট্রানজিট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি একটু পরিষ্কার করলে ভালো হয়- সাংবাদিকদের এমন কথায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর সফল হয়েছে। আর ট্রানজিটের বিষয়ে, ভারত ছাড়াও নেপাল ও ভুটান থেকেও আমাদের দেশে পণ্য আসে। ট্রানজিট নিয়ে আলোচনা হলে তারা বলেছে তারা এ সুবিধা দেবে। আর ফ্রি ট্রানজিট মানে আমাদের দেশের ওপর দিয়ে সেখানে পণ্য যাবে। এছাড়া ট্রানজিট আমাদের বাড়ানো দরকার।
তিনি বলেন, আমরা তৈরি পোশাক রপ্তানি করি। ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে বাই এয়ারে পণ্য পাঠাই। অনেক সময় দেখা যায় ট্যাকনিকাল কারণে আমরা সময় মতো পণ্য দিতে পারি না। কার্গো বিমানগুলোকে পণ্য লোড না করেই ফিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে আমরা কলকাতা পোর্ট ব্যবহার করে সেখান থেকে পণ্য পাঠিয়ে থাকি। ভারতের সঙ্গে যখন এই বিষয়ে আলাপ হয়, তখন বলেছি আমাদের এ সুযোগ বাড়ানো দরকার নৌ ও রেল পথে। এক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব দেন ট্রাকের পরিবর্তে রেলে পণ্য পাঠাও। এতে সড়কে চাপ কম পড়বে। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের সে ধরনের রেল ব্যবস্থা নেই। তাই তোমরা আমাদের এই ব্যবস্থা করে দাও। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার সেক্রেটারিকে ডেকে হিসেব নিকেশ করতে বলেছেন। তাই বলা যায় পজেটিভ আলোচনা হয়েছে।
২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী ভারত হয়ে নেপাল, ভুটানের ট্রানজিট বিষয়ে কী হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিবিআইএন এর আওতায় ভারত সেটা দিতে রাজি। তবে ভুটান এখানো রাজি হচ্ছে না। তারা বলছে আমাদের একটু সময়ের প্রয়োজন, কারণ আমাদের অবকাঠামো সে রকম নয়। আর নেপাল খুবই পজেটিভ। ভুটান আরও বলেছে যে, তাদের সেখান থেকে পণ্য পরিবহণে ভারত রাজি আছে।
ভারতে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে দেশে গত বছর আমরা ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছি। ফলে ৪ বিলিয়ন খুব বেশি না, এটা সম্ভব। কেননা, আমরা যখন সার্বিকভাবে ৫১ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম, তখন আমার মন্ত্রণালয় বলেছিল ৪৫/৪৬ বিলিয়ন হবে। কিন্তু ৫১ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। আগামী চার বছরে, প্রতিবছর হাফ হাফ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব বলে আমি মনেকরি।
তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হচ্ছে, নদীর পানি বন্টন সবমিলিয়ে ৭টি চুক্তি হয়েছে। এতে করে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে। বাংলাদেশের তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করছে ভারত, আরও চাইলে বাংলাদেশ বিবেচনা করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে।
অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের ফলে পাট শিল্পের যে ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই পাটের ক্ষেত্রে বিষয়টি তুলেছেন। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা খুবই ট্যাকনিক্যাল, আমি খুব বেশি কিছু জানি না এ ব্যাপারে। তখন দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবকে বসে ঠিক করার কথা বলেন। আমরা অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছি। ভারত যেটা করেছে সেটা আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী করতে পারে না। এটাও ঠিক যে আমরা সরাসরি আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে যেতে পারি। তবে, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে সেভাবে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সচিব পর্যায়ে কিছু আলোচনাও হয়েছে।
আয়োজক সংগঠন ওকাবের আহ্বায়ক কাদির কল্লোল, সদস্য-সচিব নজরুল ইসলাম মিঠু এবং সিনিয়র সদস্য ফরিদ হোসেনসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
>>> আর পড়ুন: ‘২০২৬ সালে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পৌঁছাবে’
‘ভারত ও চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে’
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭,২০২২
জিসিজি/এমএমজেড