ঢাকা: চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ও পরিবেশগত নানা আশংকা তৈরি হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
সম্প্রতি মহাজোট সরকার চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা এবং খুলনার বাগেরহাটের রামপালে দুটি বড় তাপবিদ্যুৎকন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার এ লক্ষ্যে নির্ধারিত এলাকায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও শুরু করেছে।
দেশের দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প খাতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি’ সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের আওতায় এই দুই প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ উৎপাদন শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে গত ২১ সেপ্টেম্বর এক সভায় প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আ স ম আলমগীর কবীর সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আনোয়ারার মাঝিরচরে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ঘোর বিরোধিতা করেছে। তারা জানিয়েছে এই প্রকল্প বাস্তবায়তি হলে বন্দরের কার্যক্রম এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল দারুণভাবে ব্যাহত হবে। সরাসরি বিরোধিতা না করলেও চট্টগ্রামে বিমানবাহিনী ঘাঁটি এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এই প্রকল্পের সীমানা নিয়ে সঙ্গত কারণেই অসন্তুষ্ট।
গত ২৬ আগস্ট এই প্রকল্প সম্পর্কিত এক সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-ব্যবস্থাপক (এস্টেট) জিল্লুর রহমান সেলিম বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য মাঝিরচর আদর্শ স্থান নয় বলে জানান। উপ-কমিশনার ফাইজ আহমেদ এর সভাপতিত্বে এসময় অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জমি অধিগ্রহণ) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান মিয়া, প্রকল্প পরিচালক এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিনহাজুদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক স্কোয়াড্রন লিডার আনিসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপরে উপ-ব্যবস্থাপক (এস্টেট) জিল্লুর রহমান সেলিম এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত বিভাগীয় প্রকৌশলী ইলিয়াস রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জনাব জিল্লুর রহমান জানান প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্পের প্রয়োজনে কাঁচামাল বহনকারী প্রায় ৮০০ জাহাজ তীরে ভিড়বে। এ কারণে নানা সমস্যায় জর্জরিত চট্টগ্রাম বন্দরের দৈনন্দিন কাজে বাধার সৃষ্টি হবে। এছাড়াও বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনশ মিটার উঁচু চিমনি এবং কয়লা-পোড়া ঘন ধোঁয়া বন্দরে ভেড়া এবং বন্দর ছেড়ে যাওয়া পণ্যবাহী দেশি-বিদেশি জাহাজের জন্য সমস্যা তৈরি করবে। সেই সঙ্গে দেশি-বিদেশি নাবিকরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির শিকার হবেন।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক স্কোয়াড্রন লিডার আনিসুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দরের ১৫ কি:মি: এর মধ্যে ৫০০ মিটারের বেশি উচ্চতার কোনো স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি বিমান বন্দর থেকে মাত্র ৮ কি:মি: দূরে অবস্থিত।
তিনি আশংকা প্রকাশ করেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং পরিত্যক্ত উপাদানসমূহ সামরিক ও বেসামরিক বিমান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করবে। এমনকি এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশংকাও রয়েছে।
নিরাপত্তাজনিত কারণে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলো শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের কার্যক্রম বর্জন করলে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে। তিনিও সকল সংশ্লিষ্ট মহলের অনুমতি সাপেক্ষে প্রকল্পের কাজ শুরু করার জন্য অনুরোধ করেন। সভায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে প্রকল্পের কাজ শরু করার অনুরোধ জানানো হয়।
ধারণা হয় যে, সরকার পর্যান্ত জরিপ ও গবেষণা ছাড়াই মাঝিরচরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে অর্থের যোগান এবং পরিবেশ বিপর্যয় ও নিরাপত্তা-ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে এ সম্পর্কে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১০