ঢাকা: আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন বুধবার (৩০ নভেম্বর)। শেষ সময়ে কর অঞ্চলগুলোর করসেবা কেন্দ্রে কেন্দ্রে করতাদারা ভিড় জমাচ্ছেন।
করোনা মহামারির কারণে টানা তিন বছর ধরে আয়কর মেলা করছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করদাতাদের সুবিধা দিতে আয়কর মেলার পরিবর্তে এনবিআরের অধীন সারাদেশের ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে মেলার আঙ্গিকে উৎসবমুখর পরিবেশে আয়কর সেবা মাস উদযাপন চলছে।
মেলার মতো আয়কর সেবাকেন্দ্রগেুলোতে আয়কর রিটার্ন, টিআইএন বিতরণসহ আয়কর সম্পর্কিত সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ১ নভেম্বর সেবা মাস শুরু হয়ে শেষ হচ্ছে কাল।
রাজধানীর শান্তিনগর থেকে কর অঞ্চল-১ এ রিটার্ন জমা দিতে এসেছেন আতিকুর রহমান কাউসার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আগামীকাল আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। আসব আসব করে আসা হয়নি, আজ এলাম। তবে এখানে এসে দ্রুত আয়কর রিটার্ন জমা জমা দিতে পেরেছি। তবে আমার মতো অনেকে ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেননি, কেউ কেউ শেষ দিন আসবেন। অনেকে আগামীকালও হয়তো আসতে পারবেন না। এ জন্য সময় বাড়ানো প্রয়োজন।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আয়কর মেলা হতো। অফিসের কাজ শেষে উৎসবের আমেজে এসে লোকজন আয়কর রিটার্ন দিতেন। সেবার ধরনভেদে এনবিআর থেকে স্মারক উপহার দেওয়া হতো। কর অঞ্চলগুলোতে এক ধরনের আনন্দমুখর পরিবেশ বিরাজ করতো। তবে সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ভোগান্তি ছিল।
দেখা গেছে, চলতি বছর নভেম্বরে কর অঞ্চলগুলোতে চলমান সেবা মাসে রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ডেস্কে কথা বলে দ্রুত সেবা পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজনে রিটার্নের ফরম পূরণেও সহযোগিতা দিচ্ছেন কর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জামালপুরের নাজমুন্নাহার কর অঞ্চল-১ এ আয়কর রিটার্ন জমা দিতে এসেছেন। আয়কর রিটার্নের ফরম পূরণ থেকে শুরু থেকে জমা দেওয়া পর্যন্ত চার জায়গায় সেবা নিয়েছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সেবার নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি ডেস্কের এক কর্মচারী রুক্ষ আচরণ করেছেন। এটি ভালো লাগেনি। তবে তিন ডেস্কে ভাল আচরণ পেয়েছি।
কর অঞ্চলের ৭ এর কর্মকর্তা রাশিদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, মাসের শুরুর দিকে দিনে দুয়েকজন করদাতা এসেছিলেন। মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে লোক বাড়তে শুরু করে। আজ সকাল থেকে এত মানুষ আসছেন, দুপুরে লাঞ্চ করতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত পাইনি। তবে আয়কর রিটার্ন ফরম ফিলআপ দ্রুত ও নির্ভুল হচ্ছে। এ কারণে আয়কর রিটার্ন বেশি জমা হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে। গত বছর একাধিকবার সময় বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা নেওয়া হয়। আয়কর রিটার্ন জমা পড়ে ২৫ লাখ ৪৮ হাজার। রাজস্ব আহরিত হয় ৮৪ হাজার কোটি টাকা। এবার ৩০ লাখ অতিক্রম করে যাবে। তবে ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। নতুন করে সময় না বাড়লে অনেকেই রিটার্ন জমা দিতে পারবেন না।
করোনা মহামারির কারণে মানুষের আয়-রোজগারের ওপর চাপ পড়ে। অনেকে চাকরি হারান। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের কর্মজীবীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ছে। সময় না বাড়লে হয়তো অনেকেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন না।
এনবিআর সূত্রটি জানায়, শেষ দিনে লক্ষ্য পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সভাপতিত্ব করবেন। সেখান থেকে সময় বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২১ঘন্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২২
জেডএ/আরএইচ