ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

‘শিক্ষক সমাজ’-এর চাপে জাবিতে শিক্ষক নিয়োগ স্থায়ীকরণ স্থগিত

জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১২
‘শিক্ষক সমাজ’-এর চাপে জাবিতে শিক্ষক নিয়োগ স্থায়ীকরণ স্থগিত

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকদের চাপের মুখে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩টি প্রভাষক পদের শিক্ষক নিয়োগ স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়ার নির্বাচনী সভা হওয়ার কথা ছিল।



কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের আন্দোলনরত শিক্ষকরা এই নিয়োগ স্থায়ীকরণ ঠেকানোর জন্য নির্বাচনী সভা অবরোধ করার ঘোষণা দেয়।

এর আগে ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিককে নিয়োগ স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া স্থগিত করার জন্য দাবি জানালে রেজিস্ট্রার উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিয়োগ স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান শিক্ষক সমাজ ব্যানারের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন।

পরে শিক্ষকরা ‘উপাচার্য প্রত্যাখ্যান মঞ্চ’-এ নিয়োগ স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়ার নির্বাচনী সভায় অবরোধের ঘোষণা দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষক নিয়োগ স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়ার নির্বাচনী সভা স্থগিত করা হয়।

শিক্ষক সমাজ ব্যানারের শিক্ষকরা বলেন, ‘গত ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে আমরা মেধাহীন ও অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তারপরও দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাহীন, অযোগ্য ও গণনিয়োগের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমাজ সবসময় সোচ্চার। ’

শিক্ষকরা জানান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩টি পদের মোট ৮ জন প্রার্থী আবেদন জমা দেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের মধ্যে শুধুমাত্র ৩ জনকে কার্ড দেয়। কার্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নুরুল আলমের ছেলে ও ছেলের স্ত্রী রয়েছেন।

এ বিষয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিভাগের ৩টি প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগ স্থায়ীকরণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা স্থগিত করেছে। ’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষকরা নিয়োগের বিষয়ে আপত্তি জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে। ’

এর আগে ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের সময় ‘শিক্ষক সমাজ’-এর শিক্ষকদের অবরোধের কারণে প্রার্থীরা উপাচার্য বাসভবনের দেওয়াল টপকে নির্বাচনী সভায় অংশগ্রহণ করেন।

২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার লক্ষ নিয়ে গড়ে ওঠা শিক্ষক সমাজ ব্যানারের শিক্ষকরা প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাহীন গণনিয়োগের বিরোধিতা ও গণনিয়োগ বাতিলের দাবি করে আসছিলেন।

পরবর্তীতে গত ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের হাতে খুন হওয়ার ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকরাও প্রতিবাদ করেন এবং বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষক ও ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুবায়ের আহমেদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ১৩ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কার করে।

পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেলেও মেধাহীন ও গণনিয়োগের প্রতিবাদে শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে।

সেই আন্দোলনই পরবর্তীতে উপাচার্য পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।  

‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, সন্ত্রাস বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা, সন্ত্রাসীদের লালন-পালন, পৃষ্ঠপোষক, অছাত্র সন্ত্রাসীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর সুযোগ দেওয়া সর্বোপরি প্রশাসনের মদদ দান বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এ মামুনকে লাঞ্ছনার বিচার, সব শিক্ষার্থীর সহঅবস্থান নিশ্চিতকরণ, গণনিয়োগ বন্ধ ও রিভিউ কমিটির মাধ্যমে অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল, ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের অপতৎপরতা বন্ধ করা, বিভিন্ন পর্বে ভর্তি ব্যয়, পরীক্ষা ও উন্নয়ন ফি বৃদ্ধি বন্ধ করা ও ৭৩-এর অধ্যাদেশ পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষে উপাচার্য প্যানেলসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে (ডিন, সিন্ডিকেট, সিনেট ও রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট) বিধি মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সমুন্নত রাখা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১২
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।