ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সংবাদ সম্মেলনে ঢাবির শিক্ষক

‘আমি বিভাগের নোংরা রাজনীতির শিকার’

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১২

ঢাবি: রেজাল্ট শিটে ঘষা-মাজার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের (ডিবি) সভায় শাস্তিপ্রাপ্ত  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক  ড. আমানুল্লাহ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, তিনি বিভাগের নোংরা রাজনীতির শিকার।

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের ব্যর্থতা তার ওপরে অন্যায় ভাবে চাপানো হয়েছে।

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের  সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান এবং বিষয়টির পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই পরীক্ষার শিটে ঘষা-মাজা, পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই টেবুলেশনের কাজ শুরু করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত  করে ড. আমানুল্লাহসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ড।

এর প্রতিবাদে ড. আমানুল্লাহ বিষয়টি নিয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

ড. আমানুল্লাহ বলেন, ‘‘যোগদানের সময় থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন পরীক্ষা কমিটিতে আমি সভাপতির দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ৪র্থ ব্যাচ ৩য় সেমিস্টার বিএসএস সম্মান পরীক্ষার সভাপতির দায়িত্ব আমি সুষ্ঠুভাবে পালন করি। ’’

‘‘ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে আমাকে না জানিয়ে পরীক্ষার টেবুলেটর, বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুব কায়সার নিজ দায়িত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে গিয়ে রেজাল্ট শিটে হস্তক্ষেপ করেন এবং টেবুলেশন শিটে একটি সংশোধনী আনেন এবং প্রতি-স্বাক্ষর করে দিয়ে আসেন। পুরো বিষয়টিই ঘটে আমার অজ্ঞাতসারে। ’’

তিনি দাবি করেন, পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে না জানিয়ে কিংবা লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি রেজাল্ট শিটে হাত দিতে পারেন না। এ ব্যাপারে মাহবুব কায়সার একটি লিখিত পত্র গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বরাবরে প্রেরণ করেছেন এবং নিজের ভুল স্বীকার করেছেন।   বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে যাই এবং আমার লিখিত বক্তব্য প্রদান করি। এ ঘটনার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই বলেও কর্তৃক্ষকে জানাই। ’’  

‘‘সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের এক সভায় মাহবুব কায়সার এবং আমাকে পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা শনিবার অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে। ’’
 
ড. আমানুল্লাহ বলেন, ‘‘আমি সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে, আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। ওই পরীক্ষার আমি কোনো কোর্স শিক্ষক নই। আমি কোনো ছাত্র-ছাত্রীর রেজাল্ট শিটে ঘষা-মাজা করিনি এবং এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। ব্যাপারটির সঙ্গে যিনি জড়িত তিনি এ ব্যাপারে সুষ্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছেন। ’’

‘‘এ পরিপ্রেক্ষিতে আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং তার অফিসের কর্মচারীরা এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কারণ,পরীক্ষা কমিটির সভাপতির অনুমতি ছাড়া কোনো টেবুলেটর সুরক্ষিত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ফলাফল শাখায় প্রবেশ এবং প্রকাশিত রেজাল্ট শিটে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। পরীক্ষা কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়া কোনো ধরনের ফলাফল সংশোধনও গ্রহণযোগ্য নয়। ’’

‘‘এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানাননি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কিংবা তার কোনো কর্মকর্তা আমাকে না জানিয়ে গোপনে মাহবুব কায়সারকে সহযোগিতা করেছেন। এতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে কোনো ধরনের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের খাম-খেয়ালিপনা এবং দায়িত্বে অবহেলা সুষ্পষ্ট। অনেকের মতে, তিনি বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থকেন নিজের ব্যক্তিগত কাজে। ’’

ড. আমানুল্লাহ  আরো বলেন, ‘‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে গত প্রায় ২০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে অধ্যাপনা, গবেষণা ও বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের পরিবর্তনে আমি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের সহযোগিতায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। উপরোক্ত ঘটনাটির পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের কোন্দল, দলাদলি এবং বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনাও জড়িত। প্রয়োজনে সেগুলোও জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। ’’

তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সাম্প্রতিক   সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমি জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং বিষয়টির পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। ’’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক বাংলানিউজকে বলেন, শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের শাস্তি হয়েছে।

তবে তিনি মাহবুব কায়সারের টেবুলেশন শিট সংশোধনীর বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১২
এমএইচ/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।