ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অবৈধ দারুল ইহসানে ভর্তি হতে সাবধান!

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১২
অবৈধ দারুল ইহসানে ভর্তি হতে সাবধান!

ঢাকা: দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনটি সত্যিকারের ক্যাম্পাস তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। গত মার্চে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধের সুপারিশ করা হলেও এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ফলে প্রকৃত মালিক বলে দাবিদার ৪টি ক্যাম্পাসই নিজেদের মতো করে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে। আর এতে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে পা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়ার পারমর্শ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃপক্ষ বলছে, মিডিয়াতে দারুল ইহসানের বিরুদ্ধে এতো সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়া ঠিক হবে না। তদন্ত  কমিটির সুপারিশ কার্যকর হলে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি গ্রুপই বর্তমানে নিজেদের মতো করে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে। প্রতিটির ভর্তি শাখা শনিবার বাংলানিউজকে জানিয়েছে, তারাই মূল দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি।

ধানমন্ডি ৯/এ তে অবস্থিত ক্যাম্পাসটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার ইসলাম। এ ক্যাম্পাসটি প্রায় আটটি বিষয়ে সম্মান প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে বলে শনিবার বাংলানিউজকে নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি শাখা।

যে গ্রুপটি দাবি করছে দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির মূল ক্যাম্পাস সাভারের আশুলিয়ায় গণকবাড়িতে, সেখানকার উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। এ ক্যাম্পাসটিও বর্তমানে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে।

উত্তরায় অবস্থিত দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রহমত ই হুদা। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি চলছে। ভর্তি শাখা জানিয়েছে, ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তিতে বাড়তি ছাড়ও পাওয়া যাবে। যেমন সাধারণভাবে বিবিএ সম্পন্ন করতে ২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা খরচ হলেও ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তি হলে খরচ পড়বে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

তবে মিরপুর ১ নং এ দারুস সালামে অবস্থিত ক্যাম্পাসটিতে কোন উপাচার্য বর্তমানে নেই বলে জানিয়েছে ভর্তি শাখা। তবে সব বিভাগেই শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে।

এর আগে ২০১০ সালের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মালিকানা সঙ্কট, অনিয়ম, দুর্নীতি ও আউটার ক্যাম্পাসের মাধ্যমে সনদ বাণিজ্য বন্ধসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হককে প্রধান করে এক সদস্যবিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়। দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি বন্ধের সুপারিশ করে গত মার্চ মাসে বিচার বিভাগীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে জমা দেয় কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ জারি করার পর ২০০৬ সালের ২ এপ্রিল সংঘ স্মারক নিবন্ধনের মাধ্যমে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী নকী হাইকোর্ট বিভাগে ৩১৮৯/২০০৮ নং রিট দরখাস্ত দাখিল করেন। এর মাধ্যমে তারা ২৯ টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা সম্পর্কে স্থগিতাদেশ লাভের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ৩৩টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করে। ওই স্থগিতাদেশের সুযোগ নিয়ে অপর ৩টি ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালিত ৩টি ক্যাম্পাস বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৭০টি আউটার ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কোনো স্থগিতাদেশ না থাকার ফলে তা চালানো বেআইনি।

২টি ট্রাস্টি বোর্ডের দাখিলি ৬৭৯৯/২০১১ এবং ৮১৪৪/২০১১ নং রিট পিটিশনে প্রদত্ত আদালতের আদেশের মাধ্যমে উভয় ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালিত হচ্ছে এবং তাদের নিযুক্ত দুই ব্যক্তি ভিসি পদের দায়িত্ব পালন করছেন।
রিপোর্টে বলা হয়, ওই দুই ব্যক্তিসহ অপর দুই ক্যাম্পাসে ওইসব পদে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দীর্ঘকাল শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে তদন্ত কমিশনের কাছে তাদের ওইসব পদে দায়িত্ব পালনের যোগ্য মনে হয়নি।

বেআইনিভাবে প্রতিষ্ঠিত বিধিবিধান ও আইন-আদালতের আদেশবিহীন কোনো কোনো গ্রুপের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বর্তমানে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ার কারণে ওইসব ক্যাম্পাসের তহবিলে ঘাটতি পড়ায় তদন্ত কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, এই ঘাটতি পূরণের লক্ষে আউটার ক্যাম্পাস খুলে অর্থের বিনিময়ে সনদ দেওয়া হচ্ছে।

কমিটির তদন্তে দেখা যায়, অযোগ্য শিক্ষক দিয়ে শিক্ষাদান, তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণিপ্রাপ্ত ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের নামমাত্র পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহণ করে বা পরীক্ষা গ্রহণ না করে বিভিন্ন কোর্সের ডিগ্রি সনদ দেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ কারণে ১৯৯২ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৭ ধারা, ২০১০ সালের আইনের ৬ ধারার বিধান লঙ্ঘন এবং ৩৬ ধারার বিধান অনুসারে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত না হওয়ায় এ বিশ্ববিদ্যালয়টির সাময়িক অনুমতি প্রত্যাহার বা বাতিল করা আবশ্যক বলে কমিটি মনে করে। তবে এ সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়ার কথাও রিপোর্টে বলা হয়েছে।

কমিটির সুপারিশে আরও বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতা নির্ধারণসহ যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, উপযুক্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি, নিয়মিত পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন কোর্সের শিক্ষার গুণগত মান ররক্ষা করার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শন ও পরিদর্শনে উদঘাটিত ত্রুটি সংশোধনে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কোর্স বন্ধ করাসহ অন্য যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) প্রদান করা একান্ত আবশ্যক।

জানা গেছে, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির চারটি মালিকপক্ষের পাঁচটি প্রধান শাখার কোনটি বৈধ এ বিষয়ের নিষ্পত্তি করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি শাখাই সরকারের একই নিবন্ধন নম্বর দেখাচ্ছে। ফলে কারা জালিয়াতি করছে, তা স্পষ্ট নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক আতিফুল হাই শিবলী শনিবার বাংলানিউজকে বলেন, “এখনও মন্ত্রনালয় কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তদন্ত কমিটির সুপারিশ কার্যকরা করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ হবে। ”
 
মার্চ মাসের বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধের সুপারিশ কেন মানা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। ”
মন্ত্রণালয়ের ওপর রাজনৈতিক চাপ রয়েছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে তার ব্যাপারে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক নয়, সম্ভবত টাকার চাপ রয়েছে। ”

শাখাগুলোর বর্তমানে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর ব্যাপারে ইউজিসি সদস্য বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা শিক্ষার্থীরা এবং তাদের অভিভাবকরাতো অবুঝ নয়। তারা মিডিয়াতে এতো রিপোর্ট দেখে, তারপরও কেন ভর্তি হবে? এটি কোন বিশ্ববিদ্যালয়?”

বাংলাদেশ সময় ১৩৩৬ ঘণ্টা,  আগস্ট ১১, ২০১২
এমএন/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।