ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি জাতির উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়াবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৪
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি জাতির উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়াবে

ঢাকা: দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি ডিগ্রি চালু প্রয়োজন। এতে জাতির উদ্ভাবনী ক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি দেশের বিভিন্ন সমস্যা দেশের মানুষই সমাধান করতে পারবে।

তবে এ পিএইচডি ডিগ্রি যাতে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজে লাগে সেজন্য প্রয়োজন কঠোর নীতিমালা।

বুধবার (১০ জুলাই) ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। বসুন্ধরা আবাসিকের ইডব্লিউএমজিএল মিলনায়তনে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে দৈনিক কালের কণ্ঠ।

কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও সহকারী সম্পাদক আলী হাবিবের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ও পিএইচডি নীতিমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ।

এছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির উপচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মিয়া, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান পিএইচডি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের পরিচালক ও স্কুল অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের ডীন অধ্যাপক এসকে. তৌফিক এম. হক পিএইচডি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষণা বিভাগের পরিচালক ও গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের ডিন অধ্যাপক ড. কবিরুল ইসলাম।

আলোচকদের বক্তব্যে অধ্যাপক ড. কবিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে প্রচলিত আছে যে, আমরা পিএইচডি প্রোগ্রামটি সাধারণত ৩ বছরে জন্য করে থাকি। এ ৩ বছরের মধ্যে যদি আমরা একটা গুণগতমান মেইনটেইন করতে চাই, তাহলে আলোচনা করতে হবে যে, এর গুণগতমান কীভাবে তৈরি করতে হবে। গুণগত মানের ব্যাপারে কেউ কোনো ছাড় দেয়নি। আমরা যদি ৩ বছরের একটা কাঠামো চিন্তা করি তাহলে প্রতি বছরে ২টি করে সেমিস্টার হয়। আমি মনে করি, প্রত্যেক সেমিস্টারের শেষে যদি একটা এসেসমেন্টের কাঠামো থাকে তাহলে গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব। কারণ, গুণগতমান নিশ্চিত করতে হলে এসেসমেন্টের কোনো বিকল্প নেই। আমরা যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক কাঠামোতে পিএইচডি তৈরি করতে পারি, তবে গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আমি মনে করি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি কঠিন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়, তাহলে পিএইচডি প্রোগ্রামের গুণমান নিশ্চিত হবে।

এসকে. তৌফিক এম. হক বলেন, সরকার গবেষণাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ইউজিসিও চায়, দেশের প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই বেশি করে গবেষণার মধ্যে নিয়োজিত হোক। সারাবিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয় জগতে বলা হয়, গবেষণা ছাড়া পিএইচডি কখনোই সম্ভব নয়। পিএইচডি প্রোগ্রাম না থাকলে গবেষণার বিকাশ হয় না। পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েতেই তা করেনি। গবেষণা করার জন্যই পিএইচডি প্রোগ্রাম অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে যেটা হয় যে ফেকাল্টি নিজ উদ্যোগে কিছু প্রকাশনা করেন। আমরা মনে হয় সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার জায়গা হচ্ছে পিএইচডি যখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হবে তখন এটি গবেষণার দ্বারকে একটা বড় জায়গায় উম্মোচন করবে।

আরেকটা বড় সম্ভাবনার জায়গা হচ্ছে যে র‌্যাংকিং। আমাদের র‌্যাংকিংয়ে অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে। সেই র‌্যাংকিংয়ে আরও ভালো করার সুযোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পিএইচডির কারণে। কারণ র‌্যাংকিংয়ে একটা বড় প্রশ্ন থাকে তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ে কতজন পিএইচডির শিক্ষার্থী রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর হয় শূন্য। এই জায়গায় আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পিছিয়ে যাই। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। আমাদের র‌্যাংকিংয়ে আরও বড় সুযোগ তৈরি করবে। আরেকটা বড় বিষয় হচ্ছে, আমরা পাবলিক-প্রাইভেটের এ বিভাজনের মধ্যে থাকতে চাই না।  

এ বিষয় ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। দেশের শিক্ষাঙ্গণে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় অবদান রাখছে তাদের মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন রয়েছে, তেমনি অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও অবদান রাখছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন জাতীয় ইনিস্টিটিউট হিসেবে কাজ করছে। আমার মনে হয়, পিএইচডিটা চলে আসলে এ সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েগুলোতে রিসোর্স খুবই সামান্য রয়েছে। আমরা সরকারের কাছ থেকে কিংবা অন্যান্যভাবে সাহায্য-সহযোগিতা সব সময় পাই না, ফলে রিসোর্স সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না। আমার মনে হয়, এ চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডির জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আরেকটা হচ্ছে, গবেষণার সংস্কৃতিটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সেই অর্থে ছিল না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুরু থেকে টিচিং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তৈরি হয়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা শুরু হয়েছে। তো আমাদের এ চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে, যাতে আমাদের গবেষণার সংস্কৃতি তৈরি হয়।

অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ঢালাওভাবে পিএইচডির অনুমতি দেওয়া উচিত কিনা সেটি ভেবে দেখা দরকার। এটি অত্যন্ত বিশেষায়িত ধরনের ডিগ্রি। ঢালাওভাবে দেওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু বিভাগ কিংবা প্রোগ্রামকে নির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠির ভিত্তিতে আমরা উপযুক্ত মনে করবো। সেটি অনুমোদনের জন্য আমাদের আলাদা করে ইউজিসির কাছে আবেদন করতে হবে। এটির উদ্দেশ্য হচ্ছে গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা। আমাদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতাতে কিছু না কিছু প্রভাব কিংবা হস্তক্ষেপের ভয় থেকেই যায়। সেই প্রভাব বা হস্তক্ষেপের ব্যাপারটা অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠভাবে কিছু মাপকাঠির ভিত্তিতে মোকাবিলা করতে হবে। এ বিষয়টি আমরা নীতিমালাতে যত পরিষ্কারভাবে আনতে পারবো, ততই আমাদের জন্য কাজটি সহজ হবে। ইউজিসিকে তাদের পর্যায়ে থেকে একটি সার্বিক নজরদারি রাখতে হবে। এ নজরদারির মধ্যে কিছুদিন পর পর বিশ্লেষণ করতে হবে যে, সমাজে কি ধরনের পিএইচডি হোল্ডার পাঠাচ্ছি ও কত সংখ্যক পাঠাচ্ছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি আমাদের একটি গভীর আশার জায়গা। আমরা পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এ সুযোগটি কাজে লাগাতে চাই।

অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ বলেন, পিএইচডি কিন্তু সার্বজনীন শিক্ষার বিষয় নয়, এটা আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে। প্রতিটি জিনিসের তো একটি উদ্দেশ্য থাকে। আমি একটি জিনিস করলাম, সেটার সুফল, ফসলটা ঘরে তুলতে পারলাম না, দেশ, জাতি প্রতিষ্ঠান লাভবান হলো না। শুধু নামের আগে ড. বসলো, এ ধরনের পিএইচডি যেন আমরা উৎসাহিত না করি। কোনো ব্যক্তির পিএইচডি করার কারণটা আগে উদঘাটন করা দরকার। পাশপাশি ওই ব্যক্তির উৎসাহ, মেধা, দক্ষতা ও সক্ষমতা আছে কিনা সেটাও দেখা দরকার। সেসঙ্গে পেশাজীবনে এর ব্যবহার হবে কিনা সেটাও দেখা দরকার। ঢালাওভাবে পিএইচডির পক্ষে আমি না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির সম্ভাবনা অনেক জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাব্লিকেশনের সংখ্যা ও মান দিন দিন বাড়ছে। এখন আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে, যারা গবেষণা করে জাতির উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেবেন। কারণ আজকের যুগে উদ্ভাবন ছাড়া কোনো জাতি উন্নত হতে পারবে না। তবে, পিএইচডির ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আমাদের এই পিএইচডি করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে সাপোর্ট দিতে হবে। যাতে সে হতাশ না হয়। এছাড়া যারা পিএইচডি করাবেন তাদের পেশাগত ট্রেনিং দিতে হবে। যিনি পিএইচডি করছেন তাকে বিষয়ভিত্তিক একটি দুটি কোর্স করানো যেতে পারে। যা তাকে পিএইচডি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। যেমন ইংরেজির কোর্স করানো যেতে পারে। মানসম্মত পিএইচডির জন্য ছয় মাস অন্তর অন্তর রিভিউ করা দরকার, পাব্লিকেশন বের করা দরকার। পিএইচডি করার জন্য ইন্ডাস্ট্রি ও সরকারি ফান্ডিং অত্যন্ত জরুরি।

অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মিয়া বলেন, দেশের সমস্যার তো অভাব নেই। আমাদের সমস্যা আমাদের সমাধান করতে হবে। বাইরের বিশেষজ্ঞ যারা আমাদের দেশে আসেন, তারা আমাদের দেশের সংস্কৃতি এবং আমাদের অনেক সমস্যার সঙ্গে ওইভাবে অভ্যস্ত নন। ফলে ওনারা ওনাদের মতো করে একটি প্যাকেট আমাদের ধরিয়ে দিয়ে চলে যান। পরে প্যাকেট খোলার পরে দেখা যায়, ওটা তো আমার এখানে ফিট করে না। এ কিন্তু আমাদের বাস্তবতা। সুতরাং, আমরা যদি পিএইচডিগুলো, বিশেষ করে গবেষণা আমাদের এখানে করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমাদের দারুণ সম্ভাবনা আসবে। আমরা আমাদের দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। এরই মধ্যে আমরা একটি উন্নয়নের পথে আছি। এটাকে বেগবান করতে এ পিএইচডি-গবেষণা দরকার।

তিনি আরও বলেন, বেসরকরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো- মানসম্মত শিক্ষক। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা যখন ভালো মানের পিএইচডি করা শিক্ষক যখন আমরা খুঁজি, তখন আমরা পাই না। যখনই শুনি, একজন পিএইচডিধারী শিক্ষক বাইরে থেকে আসবে, তখনই তাকে নেওয়ার জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ি। ফলে মানসম্মত শিক্ষকের আমাদের দারুণ অভাব। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়, চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ফান্ডিং। আমাদের দেশে এখন বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি আসছে। আমরা যদি ভালো সমস্যা নিয়ে ওনাদের কাছে যেতে পারি, তাহলে আমরা ভালো সহযোগিতা পাবো এবং ফান্ডিংয়েরও সুযোগ হবে। পিএইচডির জন্য যেসব সুবিধা দেওয়া দরকার, সেটি দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকলেও সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। বিশেষ করে লাইব্রেরি সুবিধা ও ল্যাব সুবিধা।

এসব চ্যালেঞ্জ সমাধানে তিনি বলেন, আমরা যদি মানসম্মত পিএইচডি দিতে পারি, তাহলে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি আমাদের কাছে আসবে, আমাদের ফান্ড আসবে। এ মানের জন্য মানসম্মত শিক্ষার্থী লাগবে। মানসম্মত শিক্ষার্থী না নিলে মানসম্মত পিএইচডি পাওয়া যাবে না। এটা নিশ্চিত করতে কীভাবে ছাঁকনি দিয়ে মানসম্মত শিক্ষার্থী বের করা যায়, সেটা নীতিমালায় থাকতে হবে। তবে শুধু মানসম্মত শিক্ষার্থী নিলেও হবে না, সেসব শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো গবেষণা করছে কিনা, সেটিও মনিটরিং করতে হবে। তাহলে আমরা মানসম্মত পিএইচডি পাবো। এবং একদিন আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারবো, আমরাও পারি। কিন্তু সিস্টেমটা আমাদের ঠিক করতে হবে।

অধ্যাপক ড. আব্দুর রব বলেন, ইউজিসি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রির অনুমোদন দেওয়া হবে। ফলে এখন আমাদের মানের দিকটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। ইউজিসি যে নীতিমালা দাঁড় করছে, তা মানতে হবে। মাস্টার্স করে পিএইচডি ডিগ্রিতে ভর্তি হলে কোর্স সংখ্যা বেশির প্রয়োজন হবে না। অন্যথায় অনেক কোর্সের প্রয়োজন বাড়তে পারে। শিক্ষকদের বিশেষ করে সুপারভাইজার হতে বিশেষ যোগ্যতা থাকতে হবে। এখন থেকেই তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। তবে পিএইচডি ডিগ্রি সবার জন্য নয়। এ ডিগ্রি করতে যে ব্যয় হবে তার যৌক্তিকতা বিবেচনা করতে হবে। শুধুমাত্র ডিগ্রি অর্জনের জন্য এ ডিগ্রি না। ফলে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার উদ্দেশ্য আগে জানতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। পিএইচডি ডিগ্রির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের জন্য চেকলিস্ট দেওয়া হবে। চেকলিস্ট পূরণের সক্ষমতা যাদের থাকবে কেবল তাদের এ ডিগ্রি দেওযার অনুমোদন দেওয়া হবে। পিএইচডি প্রথম থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত যে প্রক্রিয়ায় যাবে, প্রতি সেমিস্টার শেষে শিক্ষার্থীদের যাচাই করা হবে। কোনো সেমিস্টারে শিক্ষার্থীরা ভালো করতে না পারলে পরবর্তী ধাপে যেতে পারবে না। যাচাইয়ে একটি কমিটি বা উপদেষ্টা প্যানেল থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দেশি বা বিদেশি পরীক্ষক থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব বিভাগ গুণগত শিক্ষা দিতে পারবে, সেসব বিভাগের শিক্ষকদের সুপারভাইজার হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। আবার যে বিভাগে যোগ্য শিক্ষক থাকবে, সেই বিভাগে পিএইডি অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। তবে বিভাগভিত্তিক সুপারভাইজার নির্ধারণ না করে নীতিমালায় যোগ্যতা যোগ করা যেতে পারে। এখানে বলা যেতে পারে, অনলাইনে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়া শিক্ষকদের আমরা সুপারভাইজার হতে দেব না।

নীতিমালা শক্ত হলে তা পিএইচডি ডিগ্রির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে গাইড করবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এতে প্রতিটি বিষয়ে ইউজিসিকে গাইড করার প্রয়োজন হবে না। পাশাপাশি পাবলিক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যে বৈষম্য আছে, তা ভবিষ্যতে থাকবে না। বর্তমানে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুবই ভালো করছে। এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান এবং বাজারে তার গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করা হবে। যেন সে ডিগ্রিধারীর চাহিদা থাকে। আলংকারিক পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণকে আমরা নিরুৎসাহিত করবো। কেন পিএইচডি ডিগ্রি নেবেন, তা রাষ্ট্র, সমাজ ও আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কি ভূমিকা রাখবে তা বিবেচনা করা হবে।

কোয়ালিটি রিসার্চের দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নীতিমালা তৈরির কমিটি এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, ল্যাব সুবিধা ও প্রয়োজনীয় দক্ষ শিক্ষকসহ সব বিষয় নিশ্চিতের পরেই পিএইচডি দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হবে। নিয়ম না মানলে অনুমোদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। পিএইচডি ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার আগের অভিজ্ঞতা এবং আকাঙ্ক্ষা জেনে নেওয়া হবে। এ ডিগ্রি পরবর্তীতে কিভাবে কাজে লাগাবেন তাও দেখা হবে। ডিগ্রি নিয়ে নামের আগে শুধু 'ড.' বসাবেন তা হবে না। নীতিমালায় এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনাগুলো সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। আজকের এ আয়োজনটিও আমরা সে চিন্তা থেকেই করেছি। তো আজকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে আপনারা আলোচনা করবেন। সেগুলো আমরা আমাদের পত্রিকার মাধ্যমে তুলে ধরবো। যাতে দেশের মানুষ, শিক্ষক, ছাত্রসমাজ ও চিন্তাশীল মানুষেরা বুঝতে পারে যে, আমরা কেন চাই আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পিএইচডি ডিগ্রির ব্যবস্থা থাকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতেও এ ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা আশা করবো আজকে আপনাদের প্রাণবন্ত আলোচনার মধ্যদিয়ে আমরা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছাতে পারবো।

সঞ্চালনায় আলী হাবিব বলেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি করার সুযোগ থাকলেও, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি করার সুযোগ ছিল না। এখন আগের সে অবস্থান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সরে আসার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার নতুন করে চিন্তা-ভাবনা চলছে এবং নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। দেশে বর্তমানে যে ১১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি কোর্স চালু করার জন্য খসড় নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এক সময় বলা হতো, দেশে এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কেন হচ্ছে, এত বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার আছে কিনা। কিন্তু এখন প্রমাণ হয়েছে যে, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা রয়েছে। চাহিদার ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েগুলো কাজ করছে। এখন আলোচনা হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু নিয়ে। শুধু চালু করলেই হবে না। চালু করার পর কি কি সমস্যার মধ্যে আমাদের পড়তে হতে পারে তা নিয়ে ভাবতে হবে। এ প্রোগ্রাম নিয়ে একাধিক আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ ও যারা এসব নিয়ে ভাবেন তারা এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। সব আলোচনা শেষ হলে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পিএইচডি প্রোগ্রামের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে মনিটরিংয়ের দিকে জোর দিতে হবে। ইউজিসিকে কঠোর একটি তদারকির জায়গায় যেতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৪
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।