ময়মনসিংহ: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আবাসিক হলগুলোতে সিট বাণিজ্য, ডাইনিংয়ের টাকা আত্মসাৎ, গেস্টরুমে নির্যাতন, র্যাগিংসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তবে বিগত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো পালিয়েছেন বাকৃবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এর ফলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় উন্নতি হয়েছে হলের ডাইনিংগুলোর খাবারে। গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে ডাইনিং চালু করেছেন। এতে পরিবেশন করা হচ্ছে মানসম্পন্ন খাবার, যা বিগত সময়ের চেয়ে অনেক ভালো। এ ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৫ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের কিছু সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজের উদ্যোগে ডাইনিং চালু করেছেন। এতে একশ টাকায় তারা দুইবেলা খাবার পাচ্ছেন। খাবারের স্বাদ ও মানের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ডাইনিংয়ে দুপুরের আয়োজনে ছিল কোয়ার্টার সাইজের মুরগির রোস্ট, পোলাও, ডাল দিয়ে মুরগি এবং সবজি। রাতের খাবারে ছিল ভাত, ডাল, মুরগি অথবা ডিম ও ভর্তা। অন্যান্য হলগুলোতেও একই অবস্থা।
গত ১৮ আগস্ট বাকৃবির ৬৪তম জন্মদিন উপলক্ষে বাকৃবির আশরাফুল হক হলে অবস্থানরত ১২৬ শিক্ষার্থীরা মিলে খাবারের বিশেষ আয়োজন করেন। এতে জবাই করা হয়েছে দুটি খাসি। এছাড়াও ছিল পোলাও, মিষ্টি, পায়েস, সফট ড্রিংক, সবজি ও ডাল। শিক্ষার্থীদের চাঁদা এবং হল প্রশাসনের সহায়তায় এই আয়োজন করা হয় বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
বর্তমানে অল্প টাকায় মানসম্মত খাবার খেতে পারছেন বলে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা জানায়, আগে যে টাকায় খুব সাধারণ পর্যায়ের নিম্নমানের খাবার পেতেন, এখন সেই একই টাকায় তারা মানসম্মত খাবার খেতে পারছেন। তাই ডাইনিংয়ে খাওয়ার জন্য রীতিমতো ভিড় তৈরি হয়েছে হলগুলোতে। শিক্ষার্থীরা সবাই হলে এলে খাবারের মান আরও ভালো হবে বলে জানান একাধিক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আগে ডাইনিং নিয়ন্ত্রণ করতেন ছাত্রলীগের নেতারা। তারা ডাইনিংয়ের টাকা নিজেরা ভোগ করতেন। এতে ডাইনিংয়ের খাবারের মান হতো নিম্নমানের। ফলে কেউ ডাউনিংয়ে খেতে চাইতেন না। কিন্তু জুনিয়রদের জোর করে ডাইনিংয়ে খাওয়ানো হতো। তবে অনেকেই বাইরের হোটেলে খেতেন। কখনও কখনও পুরো মাসের টাকা নিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন খাওয়ার পরই বন্ধ হয়ে যেত ডাইনিং। এতে বিপাকে পড়তে হতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের। কিন্তু ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ থাকায় কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পেতেন না। তবে এখন আমরা আশা করছি, সকল সাধারণ শিক্ষার্থী ডাইনিংয়ে ভালো খাবার পাবেন এবং সারা মাস ডাইনিং চালু থাকবে। এতে শিক্ষার্থীদের খাবার কষ্ট আর থাকবে না বলে আমরা মনে করছি।
সজীব, সুমন নামে দুই শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগের নোংরা ছাত্র রাজনীতির কারণে হলে হলে ছিল গ্রুপিং। ফলে তাদের কারণে কখনো সবাই মিলে বিশেষ আয়োজন করা হতো না। বিশেষ আয়োজনের টাকা ও খাবারে কোনো অধিকার ছিল না শিক্ষার্থীদের।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৪
এমজেএফ