ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সমস্যা বনাম মেহেরপুর সরকারি কলেজ

জুলফিকার আলী কানন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১২
সমস্যা বনাম মেহেরপুর সরকারি কলেজ

মেহেরপুর: শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাদপদ মেহেরপুর জেলার একমাত্র সরকারি কলেজেটি নানা সমস্যার জর্জরিত হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
 
কলেজটি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে একমাত্র উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্বেও এখানকার শিক্ষার্থীরা দিন দিন কলেজ বিমুখ হয়ে পড়ছে।



কলেজটিতে একাডেমিক ভবনের অভাব, শিক্ষক স্বল্পতা, হোস্টেল সংকট, বিজ্ঞানাগারে সরঞ্জাম সংকট, লাইব্রেরির বই সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। ফলে ভেঙ্গে পড়েছে এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা।

১৯৬২ সালে ৩৫ একর জমিও ওপর মেহেরপুর সরকারি কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে এটি সরকারিকরণ করা হয়।

১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষে বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ে এ কলেজে অনার্স কোর্স চালু হয়। এরপর ২০১১ সালে দর্শন ও ইসলামের ইতিহাসে অর্নাস চালু হয়।

এদিকে, অনার্স কোর্স চালু হলেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় ক্লাস নিয়মিত হয়না।

এ কলেজে একটি মাত্র ছাত্র হোস্টেল থাকলেও সেটিও ১৯৯৬ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর পর কলেজে আর কোনো ছাত্র হোস্টেল নির্মিত হয়নি। ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্বেও অদ্যবধি কোনো ছাত্রী হোস্টেল সেই সঙ্গে কমনরুমও নেই এ কলেজে।

কলেজ সূত্র জানায়, কলেজে লাইব্রেরিয়ানসহ ৪১ জন শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২৩ জন শিক্ষক।

এ কলেজের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, একজন শিক্ষক একাধারে অনার্স, ডিগ্রি ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ক্লাস নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। যার ফলে শিক্ষকদেরও ঠিকমত ক্লাস নেওয়া হয়না। ঠিকমত ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কলেজ বিমুখ হয়ে পড়েছে।

ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফারহানা জামান বাংলানিউজকে জানান,নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় এখন আর কলেজে আসতে মন চাইনা।

একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাইম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, কলেজের লাইব্রেরিতে পাঠ্যবই সংকট, বিজ্ঞানাগারে সরঞ্জাম স্বল্পতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতির নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে কলেজে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস হয়না। যার কারণে ক্লাস না করে বাড়ি যেতে হয়।

দর্শন বিভাগ থেকে অনার্স করে বেরিয়ে আসা ছাত্র মিল্টন হোসেন বাংরানিউজকে জানান, চার বছরের অনার্স কোর্সে ছয় বছর সময় লেগেছে। নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় ছাত্র ছচাত্রীদের মাঝে হতাশা নেমে আসে। এছাড়া ঠিকমত ক্লাস না হওয়ায় বাইরে প্রাইভেট পড়তে হয় ছাত্র ছাত্রীদের।

দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মহুয়া খাতুন বাংলানিউজকে জানান, কলেজের একটি পাঠাগার থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত বই না থাকায় শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এখানে জ্ঞানের আলো যেন অন্ধকারেই থাকছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষের ছাত্র মোস্তারুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মেহেরপুর সরকারি কলেজ। শিক্ষক, আবাসন সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা এখানে আসতে চান না। অথচ এ কলেজটিতে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার জন্য আমাদের বাবা মা অত্যন্ত আশা করে আছে।   আমরা কি পারছি তাদের সে আশা পূরণ করতে ?   


 রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আল-আমিন ইসলাম, বাংলানিউজকে জানান, কলেজটি ঐতিহাসিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোনো উন্নয়নের ছাপ দেখতে পায়নি। এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র। তাই কলেজটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করা হলে দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখার সুযোগ পাবে।
 
 এ সব বিষয়ে মেহেরপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে জানান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষক সংকট দূর হলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে।

তিনি আরও বলেন, এখানে ১৯৬৬ সাল থেকে স্নাতক (পাস) পর্যায়ে কলা ও বাণিজ্য এবং ১৯৭৭ সাল থেকে স্নাতক বিজ্ঞান (পাস) কোর্স চালু থাকলেও ১৯৮৩ সালে এনাম কমিটি ভূলবসতঃ বিজ্ঞার ও বাণিজ্য বিভাগকে উচ্চ মাধ্যমিক হিসেবে গণ্য করায়  স্নাতক পর্যায়ের প্রতিটি বিষয়ের জন্য চার জন শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না করে কেবল মাত্র একজন প্রভাষক ও একজন সহকারী অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি হয়।

ফলে দীর্ঘদিন ধরে ছাদ্রছাত্রীদের পাঠদানসহ আনুসাঙ্গিক কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গণ্য করার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ৩ শ্রেণির পদ সৃষ্টি না করায় স্বল্প সংখ্যক কর্মচারী দিয়ে প্রতিদিনের কাজকর্ম ও সুবিশাল ক্যাম্পাস রক্ষণাবেক্ষণার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১২
সম্পাদনা: মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।