ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ফল বিপর্যয়ের অপর নাম মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ!

ফেরদৌস আহমেদ, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১২
ফল বিপর্যয়ের অপর নাম মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ!

মৌলভীবাজার: চলতি বছর পাসের হার মাত্র ৬০ শতাংশ; একাডেমিক ভবনের সংকট, ১৫ বছরেও অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু না হওয়া; শিক্ষক পদে ৩৩টির মধ্যে ১৮টিই শূন্য; বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকা এবং পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় নিয়েই ৩০ বছর ধরে চলছে মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ।

জেলার একমাত্র সরকারি মহিলা কলেজ এটি।

এ কলেজের ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়ার প্রধান কারণ একাডেমিক ভবন সংকট বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

তারা জানান, কলেজে পরীক্ষার সময় অন্য শ্রেণীর ক্লাস বন্ধ থাকে। এভাবে চলে বছরের প্রায় অর্ধেকটা সময়। ফলে, পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হয়।

এছাড়াও মোট শিক্ষকের বেশির ভাগ পদ শূন্য থাকায় কলেজটি ৩০ বছর ধরে ফল বিপর্যয়ের গণ্ডি থেকে বের হতে পারছে না। মহিলা কলেজ সরকারিকরণ হয়েছে ১৫ বছর আগে। সরকারিকরণের পর থেকেই অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালুর দাবি জানানো হলেও তা শোনার যেন কেউ নেই! ফলে, এ অঞ্চলের ছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠাকাল: জেলার নারীশিক্ষাকে উন্নত করতে মরহুম ডা. সৈয়দ আব্দুল হক, সৈয়দ শামসুল ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষানুরাগী স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রায় ৪ একর জমির মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজটি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। সরকারিকরণ হয় ১৯৯৭ সালে।

বর্তমান অবস্থা: কলেজের পাশেই রয়েছে, বেগম দুররে সামাদ রহমান ছাত্রীবাস। কিন্তু, এখানে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় অনেকেই ছাত্রীনিবাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ৪ তলা বিশিষ্ট এ ছাত্রীনিবাসে বর্তমানে ছাত্রীর সংখ্যা ১শ ২ জন।

কলেজটিতে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষায় মোট ১ হাজার ৮শ ছাত্রী রয়েছেন। কলেজে (নতুন ও পুরাতন মিলে) মোট ৩৩ জন শিক্ষকের পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১৫ জন। বাকি ১৮ জন শিক্ষকের পদই শূন্য।

ফলে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, কম্পিউটার বিভাগ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান বিষয় এখানে পড়ানো হয় না। কলেজটির গড় পাসের হার ৬০ শতাংশ। গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে। কারণ, এ-প্লাস পাওয়া ছাত্রীরা এ কলেজে ভর্তি হয় না।

এছাড়া, এখানে বাইরের শিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষকরা পাঠদানে মনোযোগী হন না এবং সুযোগ পেলেই এ কলেজ ছেড়ে অন্য কলেজে বদলি হয়ে যান।  

মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজে ইংরেজি, বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত, ইসলামী শিক্ষা বিষয় চালু রয়েছে।

অধ্যক্ষের কথা: কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে জানান, কলেজের পাশে একটি জলাশয় রয়েছে। এ জলাশয়টি যদি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জেলা প্রশাসন হস্তান্তর করে, তাহলে এটি ভরাট করে ছাত্রীদের জন্য একটি বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরি করা যেতো।  

অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন, কলেজের সামনের রাস্তায় বখাটেদের উৎপাত রয়েছে। ছাত্রীরা কলেজে আসা-যাওয়ার সময় তাদের উত্ত্যক্ত করে বখাটেরা।

কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান মো. আব্দুল মালিক বাংলানিউজকে জানান, পরীক্ষার জন্য আলাদা ভবন না থাকায় বছরের ৫ থেকে ৬ মাসই কলেজটিতে পাঠদান ব্যাহত হয়। সুনামগঞ্জ জেলায় নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য দ্রুত কলেজটিতে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করা প্রয়োজন।

মৌলভীবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদ হোসেন মক্কু বাংলানিউজকে জানান, কলেজটি গত আড়াই দশক ধরে এ অঞ্চলের নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু, শিক্ষক সংকট ও আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র না থাকার কারণে ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।

অভিভাবক ও মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দেলওয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, কলেজটির অবস্থান শহরের অভিজাত এলাকায়। এখানে লেখাপড়ারও সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। ভালো ফলাফলের জন্য একাডেমিক ভবন নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

ছাত্রীদের কথা: কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রুকশানা বাংলানিউজকে জানান, ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রির ক্লাস নিয়মিত হয় না। ফলে, এ বিভাগে ফলাফলও ভালো হয় না। চলতি বছর বিজ্ঞান শাখায় ৬০ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেন মাত্র ১৪ জন।  

মানবিক শাখার প্রথম বর্ষের ছাত্রী সাবিনা আক্তার চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, “কলেজে বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ বা আলাদা লাইব্রেরি নেই। এছাড়া ক্যান্টিন সমস্যা রয়েছে। কম্পিউটার শাখায় কোনো শিক্ষক নেই। ফলে, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে কিছুই শেখা হয় না। ”

ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী লাভলী বাংলানিউজকে জানান, তার শাখায় নিয়মিত পাঠদান হলেও কলেজে বিনোদন, ক্যান্টিন, লাইব্রেরিসহ শিক্ষক সংকট প্রকট। ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে ভালো ছাত্রীর অভাবই একটা অন্যতম কারণ বলে জানান তিনি।

এবিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে জানান, সরকারের চিন্তা ভাবনা আছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ভবন নির্মাণ করা। অচিরেই এর বাস্তবায়ন হবে।

মৌলভীবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শেখ মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে জানান, কলেজের শিক্ষার মান ও ফলাফল ভালো করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি আলাদা পরীক্ষা ভবন দরকার।

মঙ্গলবার পড়ুন সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১২
সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর; আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।