ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রায় ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে রাজনীতি একেবারেই নিষিদ্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি যে অবস্থায় রয়েছে, সে অবস্থায় চান মাত্র ০.২ শতাংশ শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন সংসদের সভাপতি ফাহিম হাসান মাহদী।
৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে গুগল ফর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮টি বিভাগ ও ১০টি ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ থেকে ২৩-২৪ সেশনের মোট ২ হাজার ২৩৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।
জরিপে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, দলীয় রাজনীতি শিক্ষা পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এরমধ্যে ৮৩.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতিকে একেবারেই নিষিদ্ধ চান। সংস্কার করে রাজনীতি রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।
জরিপের তথ্যমতে, ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতির কোনো গুরুত্ব নেই বলে মনে করেন। ১ শতাংশ দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের ওপর ‘খুবই ইতিবাচক’ প্রভাব ও ২ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘ইতিবাচক’ প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন। এক শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিকল্প হিসেবে ৮১.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন। ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী কেবল ছাত্র সংসদ চান, দলীয় রাজনীতি চান না।
ক্যাম্পাসভিত্তিক বা হলভিত্তিক দলের কমিটি প্রদানকে ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী সমর্থন করেন না। ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতির সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং সমর্থন করেন না। ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমের কারণে তাদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেছেন।
জরিপে অংশগ্রহণকালে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।
যেসব শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির প্রত্যাশা করেছেন, তারা কারণ হিসেবে ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতৃত্ব নির্মাণ এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি প্রকৃত অর্থেই জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি করতে সক্ষম নয় বলে মত দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।
যেসব শিক্ষার্থীরা রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়েছেন, তারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কারণ হিসেবে পূর্বের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা (গণরুম ও গেস্টরুম, টর্চার সেল, জোরপূর্বক রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করানো ইত্যাদি) উল্লেখ করেছেন। এছাড়া দলীয় ছাত্ররাজনীতির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি ইত্যাদি বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাবি গবেষণা সংসদ।
এই জরিপের ওপর কয়েকটি সুপারিশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ। প্রস্তাবগুলো হলো—দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণ করা; ডাকসু পুনর্জীবিত ও সংস্কার; শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন কমিটি গঠন; শিক্ষা ও গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
এফএইচ/এমজেএফ