শাবিপ্রবি (সিলেট): শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেনকে শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন সমন্বয়করা এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেন নবনিযুক্ত প্রোভিসি অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন। এদিন বিকেলে নতুন প্রশাসকদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠক হয়। বৈঠকের এক পর্যায়ে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। শপথবাক্য পাঠ করান সমন্বয়ক পলাশ আহমেদ। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমন্বয়কদের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু করেন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
শপথবাক্য পাঠ করানোর ভিডিওতে প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব, শাবিপ্রবির সমন্বয়ক টিমের সদস্যদের উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
ভাইরাল হওয়া শপথবাক্যের ভিডিওতে দেখা যায়, শুকরিয়া যে, আমরা ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি লাভ করেছি। আজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোভিসি ও ট্রেজারার পদে যোগদানের মুহূর্তে ২৪ জুলাইয়ের সব শহীদদের স-স্বত্বচিত্তে স্মরণ করছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।
মহান জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে আমরা শপথ করছি যে, বিপ্লবী সরকার কর্তৃক যে দিক-নির্দেশনা আমরা পেয়েছি এবং জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সচেষ্ট থাকবো। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য আপসহীনভাবে নিয়োজিত থাকবো। আমাদের বিদ্যা, গবেষণা সৎ কাজের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাবিপ্রবি দেশের জনগণের এবং বিশ্ববাসীকে আলোর পথ দেখাতে যেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করবো।
শপথবাক্য পাঠ নিয়ে ফজলে রাব্বি নামে এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন, আজ সমন্বয়করা যা করেছে! লজ্জা ‘শপথ গ্রহণ’
সাব্বির রহমান নামে আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, প্রোভিসি, ট্রেজারার স্যারদের শপথবাক্য পাঠ করানোর আপনারা কারা? ফাজলামোর একটা সীমা থাকা উচিত। শিক্ষকের মর্যাদা ফাজলামোর জিনিস না। রাষ্ট্র গঠনের নামে একের পর এক আইন ভঙ্গ আর অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছেন। পাওয়ার প্রাকটিস করতে গিয়ে নিজের বিবেক বিসর্জন দিচ্ছেন। আপনাদের এসব নোংরা ক্ষমতা প্রদর্শনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম।
মো. হাসিবুর রহমান নামে আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, পাহাড়ে আগুন জ্বলছে। আমাদের ভাইয়েরা, বোনেরা গুলি খাচ্ছে, বাসা ছেড়ে জঙ্গলে লুকাই আছে। আর সমন্বয়ক শপথ নিয়া পড়ে আছেন। একটু তো সজাগ হোন। না হয় কাল আপনার পাহাড়ের বন্ধুর সামনে মুখ দেখাইতে পারবেন তো? নিজেরে মাফ করতে পারবেন তো!
এ বিষয়ে জানতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিবকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনিযুক্ত প্রশাসকদের শপথবাক্য পাঠ করাতে কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা আছে কি না? জানতে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪
আরবি