ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবিতে ভর্তিযুদ্ধ: আতঙ্ক নিয়েই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ

জনাব আলী, রাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১২
রাবিতে ভর্তিযুদ্ধ: আতঙ্ক নিয়েই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ

রাবি: কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও রাবি প্রশাসনের অভয়বাণী সত্ত্বেও মনের মধ্যে ভয় নিয়েই বৃহস্পতিবার অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বারবারই মনে পড়ছে মাত্র ২ দিন আগে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের ভয়াবহ সংঘর্ষের কথা।



এরপরও উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। ভর্তিচ্ছু নবীনদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে ক্যাম্পাস জুড়ে।

এদিকে, ২০১১ সালের তুলনায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ায় এবং ইউনিট পদ্ধতির পরীক্ষায় মাত্র ৬দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় ভর্তিচ্ছুদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার ও গোলাগুলির ঘটনায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা আতঙ্ক নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। মঙ্গলবারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ক্যাম্পাসে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছে ।

ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তি: নানা জল্পনা-কল্পনা ও অনিশ্চয়তাকে পেছনে ফেলে বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা। চলবে আগামী ৯ অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, ভর্তি পরীক্ষা ৬ অক্টোবর শুরু হয়ে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।

কিন্তু ২০১১ সালে চেয়ে এবার ভর্তিচ্ছুদের সংখ্যা এক লাখের বেশি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তি পরীক্ষা ২ দিন এগিয়ে এনে নতুন পদ্ধতি চালু করে। নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী একই ইউনিটের জোড় এবং বিজোড় রোল আলাদাভাবে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু নতুন এ পদ্ধতি বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন এক আইনজীবী।

এছাড়া ভর্তি পরীক্ষা শুরুর মাত্র ২ দিন আগে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিভ্রান্তি দূর করতে সংবাদ সম্মেলন : শিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ এবং নতুন পদ্ধতি নিয়ে রিটসহ নানা জটিলতা দূর করতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য জানান, ভর্তি পরীক্ষা বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হবে এতে কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। ভর্তিচ্ছু এবং তাদের অভিভাবকদের আশ্বস্ত করে তিনি জানান, ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ক্যাম্পাসে উদ্ভুত পরিস্থিতি এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

উপাচার্য আরও জানান, অন্যান্যা বারের চেয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে এক লাখের বেশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। তাই পরীক্ষা ব্যবস্থায় কিছু ব্যবস্থাপনাগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় তার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ভর্তিচ্ছুদের সংখ্যা : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। পরীক্ষা উপলক্ষে ইতোমধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আবাসিক হলসহ নগরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও মেসে উঠেছে। ২০১১ সালের তুলনায় এবার ভতিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি অনুষদভুক্ত ৪৯টি বিভাগের ৩ হাজার ৬শ ১৫ আসনের বিপরীতে চলতি শিক্ষাবর্ষে আবেদন করেছে ২ লাখ ৪২ হাজার ২শ ৬৪ জন। গত ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে প্রতিযোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ১শ ৫৯ জন।

উপচেপড়া ভিড়: ২০১১ সালের চেয়ে এবার প্রতিযোগী সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। এই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাও শেষ করতে হবে মাত্র ৬ দিনে। ফলে, সব শিক্ষার্থী একযোগে ক্যাম্পাসে অবস্থান করায় এ বছর পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক বেশি। এ কারণে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ভরে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আঙিনা। শহীদ মিনার, গোল্ডেন জুবুলি টাওয়ার, সাবাস বাংলাদেশ, প্যারিস রোড, পূর্বপাড়া, গণকবর, পশ্চিমপাড়া, আমতলা, সমকাল চত্বর, বৈশাখী চত্বর, টুকিটাকি চত্বর, মিডিয়া চত্বর, তুঁতবাগান, চারুকলা বিভাগ, পুরাতন ফোকলোর চত্বরসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় সরব।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া : বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জিয়াউল হল সরকার, বশির আহমেদ, জাহাঙ্গির, জ্যাম বলেন,‍‌‌‌“পুরো ক্যাম্পাসটাই উৎসব মুখর। পরীক্ষা দিতে এসে যে আনন্দটা আঁচ করতে পারি নাই, আজ পুরোপুরি তা উপলব্ধি করছি। ”  

ব্যবসায়ীদের আনন্দ : ভর্তিচ্ছুদের নিয়ে এখানকার ব্যবসায়ীদেরও আনন্দের কমতি নেই। কেননা বিপুল সংখ্যক ভর্তিচ্ছুরা পরীক্ষা দিতে আসায় এবং ক্যাম্পাসের হলগুলোতে অবস্থান করায় ব্যবসা ভালোই জমে উঠেছে। বিশেষ করে খাবারের দোকান মালিকরা এই সুযোগটা বেশি করে কাজে লাগিয়েছে। অনেকে খাবারের দাম লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে দিয়ে একতরফাভাবে ব্যবসা করছে।      

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি : নবীনদের আগমনে ক্যাম্পাসের সার্বিক চিত্র আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ভরে উঠলেও কিছু ক্ষেত্রে এখানকার শিক্ষার্থীদের একটু বিপাকেই পড়তে হচ্ছে। থাকা-খাওয়াসহ পড়ালেখাতেই এর প্রভাবটা বেশি পড়ে বলে অনেকের মন্তব্য।

শের-ই-বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আলামিন, শিমুল, সাদ্দাম, হিমুসহ অনেকে বলেন, “মাত্র ৪ দিনে সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার ফলে শিক্ষার্থীরা একযোগে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। আর রাজশাহীতে যাদের কোনো পরিচিত কেউ নেই তাদের হলে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ফলে, নিজেদের যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তেমনি চরম কষ্টের শিকার হতে হচ্ছে এখানে অধ্যায়নরত হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, অক্টোম্বর ০৪, ২০১২
সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।