ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১২

নোয়াখালী: টেবুলেশন শিট বাইরে ফাঁস, কোচিং ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে অসদুপায় অবলম্বন ও ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ৫ম ও ৭ম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টায় ভর্তি কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম ভর্তি বাতিলের নোটিশ জারি করেন।



এর আগে এদিন সকাল ১০টা থেকে রাত পৌনে নয়টা পর্যন্ত শিক্ষক ও জেলা প্রশাসকের মধ্যে গড়িমসি, ফোনালাপের পর রাতে পরীক্ষা বাতিল ও স্থগিত করা হয়।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কোডিং নম্বর ও ফলাফল বাইরে ফাঁস, দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিবের অশোভন আচরণ করায় বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ৫ম ও ৭ম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা বাতিল এবং শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণীর পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

ভর্তি কমিটির কেন্দ্র সচিব ও নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মতিলাল সাহা বাংলানিউজকে জানান, পূর্ব ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ৫ম ও ৭ম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।

এতে ৫ম ও ৭ম শ্রেণীর ২৬০ আসনের জন্য ৮০৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। ফলাফল আগামী ২৯ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় প্রকাশ করার কথা। পরীক্ষা শেষে কোডিং করার পর খাতা মূল্যায়ন শুরু করেন শিক্ষকরা।
 
এসময় ভর্তি কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট পরীক্ষার শুরু থেকেই ছিলেন। খাতা মূল্যায়নের শেষ পর্যায়ে এসে জেলা প্রশাসক খাতাগুলো তার কার্যালয়ে নিয়ে ফলাফল প্রকাশের নির্দেশ দেন যা অনৈতিক।

নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয় কেন্দ্রে খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশের কথা। কিন্তু তিনি খাতাগুলো তার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘খাতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিলে উভয়ে বির্তকিত হওয়ার ভয়ে আমরা তাকে অনুরোধ করলেও তিনি অনৈতিকভাবে তা করার চেষ্টা করেন। ’

পরে ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের হুমকিও দেন তিনি। প্রতি বছরের নিয়ম ভেঙে সভাপতি শিক্ষকদের অভিভাবকদের প্রশ্নের সম্মুখীন করার চেষ্টা করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বাংলানিউজকে জানান, সভাপতি নিয়ম বহিভূর্তভাবে তার প্রতিনিধিদের দিয়ে কৌশলে অবৈধ লেনদেন করে নিজেদের পছন্দের পরীক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পরীক্ষা বাতিল করেছে।

কয়েকজন অভিভাবক বাংলানিউজকে জানান, শিক্ষক ও জেলা প্রশাসক কেউই ভালো নয়। শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য করেন। আর জেলা প্রশাসক রাজনৈতিক চাপে এসব করেন। অনেক শিক্ষক মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তির দায়িত্ব নেন।

তাদের প্রশ্ন, জেলা প্রশাসক এখন কোচিংয়ের কথা বলেন কেন? সারা বছর জেলা প্রশাসকের সামনে শিক্ষকরা কোচিং করালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এখন আমাদের সন্তানের ক্ষতি করছেন।

কেন্দ্র সচিবের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ভর্তি কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকরা বাইরের কোচিং সেন্টারে কোচিং করান এবং কোচিংয়ের প্রশ্নই ভর্তি পরীক্ষায় দেন। এবছর আমি কৌশলে সব কোচিং সেন্টার থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করি। ভর্তি পরীক্ষার এবারের প্রশ্ন আমি তৈরি করি এবং কোচিংয়ের কোনো প্রশ্নই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে দেওয়া হয়নি। আজকের পরীক্ষা শেষে পরীক্ষা মূল্যায়ন করে কোড নম্বর ম্যাজিস্ট্রেট নেন।

এরপর ফলাফল নিয়ে রোল নম্বরের সঙ্গে কম্পিউটারে ফলাফল তৈরি করা শুরু করে। শিক্ষকরা যখন বুঝতে পেরেছেন তাদের কোচিং করানো শিক্ষার্থীরা পাস করতে পারবে না তখন তারা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে অশোভন আচরণ শুরু করেন। ’

তিনি আরও জানান, এছাড়া ফলাফল প্রকাশের আগে টেবুলেশন শিটের নম্বর ফাঁস করে দেন তারা। সব মিলিয়ে পরীক্ষা অস্বচ্ছ হওয়াতে বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা বাতিল ও শুক্রবারের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮,  ২০১২
সম্পাদনা: রাফিয়া আরজু শিউলী ও শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর- [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।