ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ফিরে দেখা ২০১২: জাবির আলোচিত বিষয় জুবায়ের হত্যা

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১২
ফিরে দেখা ২০১২: জাবির আলোচিত বিষয় জুবায়ের হত্যা

জাবি: ২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যা।

এছাড়া এ হত্যাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতি কর্মীদের আন্দোলনের ফলে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের পদত্যাগ ও নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের যোগদান।



গত ৮ জানুয়ারি রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হাতে গুরুতর জখম হয়ে পরের দিন সোমবার সকালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ।

এ হত্যাকে কেন্দ্র করে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে শিক্ষার্থী ও ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে শিক্ষকরা।

প্রথমদিকে, তাদের দাবি ছিল জুবায়ের হত্যাকারীদের বিচার। কিন্তু তৎকালীন প্রশাসন দাবি মেটাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে হয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরকে।

এ সময় তার স্থলাবিশিষ্ট উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রাণরাসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে।

পরবর্তীতে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দিতে গিয়ে শিক্ষকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ‘সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে একত্রিত হয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পরে পুলিশ মোতায়েন করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দেওয়া হয়, যাতে অধ্যাপক আনোয়ার হন দ্বিতীয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন।

গত ২৮ এপ্রিল তৎকালীন উপাচার্যপন্থি হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠি, রড ও লোহার পাইপ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি কর্মীদের বেধড়ক মারধর করে।

১৭ ডিসেম্বর সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় ৪ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কৃতরা হলেন- মওলানা ভাসানী হলের ৩৬তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম মাহতাব মেহেদি স¤্রাট, ১ মাস বহিষ্কৃত ও ৩ হাজার টাকা জরিমানা, সঙ্গে ১ মাস ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত, বাংলা বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম অর্ণব, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৩৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুর রহমান শাকিল, দর্শন বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এম জি রাব্বী রানা ২ মাস বহিষ্কৃত ও ২ হাজার টাকা জরিমানা সঙ্গে ২ মাস ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত।

এছাড়া রিভিউ কমিটির পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের এমফিল গবেষক শেখ শরিফুল ইসলাম শরিফ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহমেদ ও বিবিএ প্রোগ্রামের ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিঠুন কুমার কুন্ডুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সিন্ডিকেটে ‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’-এর সভাপতি কলি মাহমুদ ও সহ-সভাপতি মঈন মুনতাসিরকে বিভ্রান্তিমূলক কাজ না করার জন্য সতর্ক করা হয়।

এছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ খাবার ফাও খাওয়াকে কেন্দ্র করে মওলানা ভাসানী হলের সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক খবির উদ্দিন ও আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে।

পরবর্তীতে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক খবির উদ্দিন উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে  ডিসিপ্লিনারি কমিটির বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ৫ জনকে ৩ মাসের বহিষ্কার ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করা হয়।

বহিষ্কৃতরা হলেন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহমেদ, রকিবুর রহমান উল্লাস ও একই বিভাগে ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শাকিল এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৩৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি শাওন ও সিফা সালেহীন শুভ।

যাদের হারালাম:
৭ মার্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তানজিলা রহমান তন্বী ঢাকার শ্যামলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।

৩০ জুলাই সোমবার সাভারের আশুলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম হোসেন নিহত হন।  

তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানায়। তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

২৫ নভেম্বর রোববার ঢাকার বাংলামোটরের প্লানার্স টাওয়ারের নিচে একটি টিনের চালার ওপর থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের ৩৮তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী ফয়সাল করিম অন্তুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে মওলানা ভাসানী হলের ২১৯ নং কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী।

ডিন নির্বাচন:
২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি অনুষদের ডিন ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ ব্যানারে নির্বাচিত হন গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন ও জীব বিজ্ঞান অনুষদ থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল খায়ের। ‘সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে নির্বাচিত হন কলা ও মানবিকী অনুষদ থেকে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মোহম্মদ কামরুল আহসান।

এছাড়া সমাজবিজ্ঞান অনুষদে ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ ব্যানারে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আমির হোসেন নির্বাচিত হন।

শিক্ষক সমিতির নির্বাচন:
২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও সম্পাদক নির্বাচিত হন গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. শরিফ উদ্দিন।

এছাড়া নির্বাচনে সহসভাপতি পদে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, কোষাধক্ষ পদে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শরিফুল হুদা রিপন, যুগ্মসম্পাদক পদে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান মনির নির্বাচিত হন।

নির্বাচনে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির সমর্থিত ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ ব্যানার সহসভাপতি ও দুটি সদস্য মোট ৩টি ও আওয়ামী পক্ষের মূল ধারার গ্রুপ, জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থি শিক্ষকরা ‘সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানার সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১২ পদে জয় লাভ করেন।

উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন:
২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৫০ ভোট পেয়ে প্রথম হয়েছিলেন অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির। ৩৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।

একই সংখ্যক ভোট পেয়ে লটারির মাধ্যমে তৃতীয় হন অধ্যাপক নূরুল আলম। এছাড়া প্যানেলের অপর দুই প্রতিযোগী অধ্যাপক আফসার আহমেদ পান ১৮ ভোট এবং শামসুল কবীর খান পান ৩ ভোট।

পরবর্তীতে আচার্য মো. জিল্লুর রহমান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে জাবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন।

সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি, শিক্ষা পর্ষদ ও অর্থ কমিটির নির্বাচন:
২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে ৬ জন, শিক্ষা পর্ষদ ক্যাটাগারিতে ৬ জন, অর্থকমিটি ক্যাটাগরিতে ১ জন শিক্ষক প্রতিনিধি মনোনয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে শিক্ষক প্রতিনিধি, শিক্ষা পর্ষদ ও অর্থ কমিটি এ তিন ক্যাটাগরিতে ১৩ জন প্রতিনিধি নির্বাচনে ‘সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ’-এর ৭ জন ও ‘মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি’-র ৬ জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১২
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।