সিলেট: উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় গত দুই বছর দেশ সেরার সাফল্য অর্জন করলেও এবার তা ধরে রাখতে পারেনি সিলেট শিক্ষা বোর্ড।
পাসের হার ৭৯ দশমিক ১৬ শতাংশ নিয়ে একধাপ পিছিয়ে দেশের সাধারণ আটটি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে সিলেট বোর্ড।
বুধবার দুপুরে বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল মান্নান খান আনুষ্ঠানিক ফলাফল প্রকাশ করেন।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, চলতি বছরের সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা শাখা থেকে অংশ নেওয়া মোট ৫৭ হাজার ৫শ ৬১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ৪৫ হাজার ৫শ ৬৮ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন দুই হাজার ৭০ জন শিক্ষার্থী।
সেখানে ২০১৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ৪২ হাজার ৯শ ৮০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেন ৩৪ হাজার ৯ জন। ওই বছর পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ১৩ এবং ১ হাজার ৫শ ৩৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
দুই হাজার ৭০ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকেই সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। এদের সংখ্যা ১ হাজার ২শ ৫১ জন পেয়েছিল।
এছাড়া মানবিক বিভাগ থেকে ৩শ ২৪ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৪শ ৯৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের ১ হাজার ১শ ৮৭ জন ছেলে এবং ৮শ ৮৩ জন মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছেন।
এদের মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বাধিক ১ হাজার ৩শ ৭ জন, মৌলভীবাজার জেলায় ৪শ ৬ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ২শ ১২ জন ও সুনামগঞ্জ জেলায় ১শ ৪৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
এবার মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘এ’ গ্রেডে ৭ হাজার ৯শ ১ জন, ‘এ’ মাইনাস গ্রেডে ৮ হাজার ৬শ ১৭ জন, ‘বি’ গ্রেডে ১০ হাজার ১শ ২৬ জন, ‘সি’ গ্রেডে ১৪ হাজার ৭শ ৫৩ জন ও ডি গ্রেডে ২ হাজার ১শ ১ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। এছাড়া ১১ হাজার ৯শ ৯৩ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য ও ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ২০৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০ প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস করেছে। তবে কেউ পাস করতে পারেনি এমন কলেজ নেই। সার্বিক ফলাফলে সিলেট বোর্ডে এবার প্রথম হয়েছে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ (জেসিপিএসসি)। এই কলেজ সবচেয়ে বেশি ৪শ ১৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
তাছাড়া সিলেট এমসি কলেজ থেকে ২শ ৮, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ১শ ৫৬, হবিগঞ্জের বৃন্দাবন কলেজ থেকে ১শ ২২ ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে ১শ ২১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দুইবারের মতো এবারও সিলেট বোর্ডে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা ভালো করেছেন। তবে মানবিক বিভাগে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছেন। বিজ্ঞান ও বাণ্যিজ্য বিভাগে বেশি পাস করেছেন ছেলেরা।
এবার ২৬ হাজার ২শ ৮৪ জন ছেলে-পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ২০ হাজার ৮শ ১৫ জন। ছেলেদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ১৯ ভাগ।
অন্যদিকে ৩১ হাজার ২শ ৭৭ জন মেয়ে-পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ২৪ হাজার ৭শ ৫৩ জন। তাদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ১৪ ভাগ।
বিভাগভিত্তিক ফলাফলের মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছেন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগ থেকে ৭ হাজার ৫শ ৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৬ হাজার ৬শ ৯ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ০৪ ভাগ।
এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ২শ ৫১জন, ‘এ’ গ্রেডে ২ হাজার ৫শ ৭ জন, ‘এ’ মাইনাস গ্রেডে ১ হাজার ৪শ ৬২ জন, ‘বি’ গ্রেডে ৯শ ৬৫ জন, ‘সি’ গ্রেডে ৪শ ২৩ জন এবং ‘ডি’ গ্রেডে একজন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। এছাড়া ৮শ ৯৮ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন।
মানবিক বিভাগ থেকে ৩৮ হাজার ৬শ ৫৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ২৯ হাজার ১শ ৭৮ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৪৮ ভাগ।
এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩শ ২৪ জন, ‘এ’ গ্রেডে ২ হাজার ৯শ ৫৬ জন, ‘এ’ মাইনাস গ্রেডে ৪হাজার ৮শ ৩০ জন, ‘বি’ গেডে ৭ হাজার ৩৩ জন, ‘সি’ গ্রেডে ১২ হাজার ১শ ৩৮ জন এবং ‘ডি’ গ্রেডে ১ হাজার ৮শ ৯৭ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। এছাড়া ৯ হাজার ৪শ ৮১ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন।
বাণিজ্য বিভাগ থেকে ১১ হাজার ৩শ ৯৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৯ হাজার ৭শ ৮১ জন। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৮৪ ভাগ।
এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪শ ৯৫ জন, ‘এ’ গ্রেডে ২ হাজার ৪শ ৩৮ জন, ‘এ’ মাইনাস গ্রেডে ২ হাজার ৩শ ২৫ জন, ‘বি’ গ্রেডে ২ হাজার ১শ ২৮ জন, ‘সি’ গ্রেডে ২ হাজার ১শ ৯২ জন ও ‘ডি’ গ্রেডে ২শ ৩ জন ছেলে শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। এছাড়া ১ হাজার ৬শ ১৪ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন।
এদিকে, এইচএসসিতে সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে ৮০ দশমিক ৮৬ শতাংশ পাসের হার নিয়ে সিলেট জেলা প্রথম এবং ৭৭ দশমিক ১৮ শতাংশ পাসের হার নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সবশেষ স্থানে রয়েছে।
প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, সিলেট মহানগর জেলা থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ২৪ হাজার ৩৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ১৯ হাজার ৩শ ১০ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৩শ ৭ জন।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলা থেকে ১০ হাজার ৯শ ৫৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৮ হাজার ৬শ ৭০ জন। জেলায় পাসের হার ৭৯ দশমিক ০৪। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২১২ জন।
পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। এ জেলা থেকে ১২ হাজার ৮শ ৫৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ১০ হাজার ৯২ জন। জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০৬ জন।
৭৭ দশমিক ১৮ পাসের হার নিয়ে সবশেষে অবস্থান করছে সুনামগঞ্জ জেলা। এ জেলার ৯ হাজার ৭শ ১৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ৭ হাজার ৪শ ৭০ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪৫ জন শিক্ষার্থী।
ফলাফল প্রসঙ্গে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল মান্নান খান বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করায় সার্বিক ফলাফল এবার ভালো হয়েছে।
টানা তৃতীয়বারের মতো দেশ সেরা ফলাফল করতে না পারলেও পাসের হার ও জিপিএ-৫ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, আগষ্ট ১৩, ২০১৪
.jpg)
.jpg)
