ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

আরবি শিখিয়ে রেমিটেন্স বাড়ানোর টার্গেট সরকারের

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪
আরবি শিখিয়ে রেমিটেন্স বাড়ানোর টার্গেট সরকারের

ঢাকা: বিদেশ গমনেচ্ছুদের আরবি ভাষার প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে পাঠিয়ে সেখানকার বাজার ধরার জন্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রত্যেক উপজেলায় ভাষাপ্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হবে।


 
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এস্টাবলিশমেন্ট অব ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রেনিং সেন্টারস-২ (এফএলটিসি-২) প্রকল্পের আওতায় এসব কেন্দ্রে কম্পিউটার-সফটওয়ার দিয়ে আরবির পাশাপাশি অন্যান্য ভাষাও শিখবেন বিদেশ গমুনেচ্ছুরা।
 
এফএলটিসি’র প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন শিক্ষাভবনে নিজ দপ্তরে বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের জনশক্তিকে দক্ষ করে রেমিটেন্স বাড়ানোই আরবি ভাষা শেখানোর উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। ”
 
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, “রেমিটেন্সের ৬৪ শতাংশই আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদশি প্রবাসীদের ৮১ শতাংশ কাজ করেন। কিন্তু তারা আরবি ভাষায় দক্ষ নন। ”
 
“মধ্যপ্রাচ্যে যারা কাজ করেন তারা অধিকাংশই নিম্ন আয়ের কাজগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আরবি ভাষা না জানার জন্যই তাদের আয় কম। অথচ একই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে শুধু আরবি জানার কারণে অন্য দেশের কর্মজীবীরা সেখানে বেশি উপার্জন করছে। ”
 
এই অপূর্ণতা কাটিয়ে উঠতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চাকরি প্রত্যাশী এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য আরবি ও অন্যান্য ভাষা প্রশিক্ষণ কার‌্যক্রম পরিচালনায় জেলা/উপজেলাওয়ারী খণ্ডকালীন ভাষা প্রশিক্ষক প্যানেল তৈরির কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
 
এতে আরবি, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ ও জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ দানের যোগ্যতা এবং সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষী দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আগ্রহীদের আবেদন আহ্বান করা হয়েছে।
 
কর্মসূচিতে ভাল সাড়া পাওয়া যাবে আশা করে জসীম উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হবে। প্রত্যেক কেন্দ্রে একজন করে ম্যানেজার থাকবেন। এসব কেন্দ্রের খণ্ডকালীন প্রশিক্ষকদের যথাযথ সম্মানীর ব্যবস্থাও রয়েছে। পরে চাহিদা অনুযায়ী আরো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হবে।
 
নবনিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান সম্প্রতি বাংলানিউজকে বলেন, দক্ষতার সঙ্গে আরবি ভাষায় কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে আরো রেমিটেন্স আনা সম্ভব। এজন্য আরবি ভাষা শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।  
 
আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে সম্প্রতি বিদেশি ভাষা শিক্ষার উপর একটি সেমিনারে আরবি ভাষা শিক্ষা নিয়েই মূলত জোর আলোচনা হয়।
 
এফএলটিসি’র প্রকল্প পরিচালক বলেন, “আরবি শেখানোর জন্য ১০ দিনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে, যার জন্য প্রশিক্ষক খোঁজা হচ্ছে। ”
 
প্রশিক্ষকদের বাছাই করে উপজেলাওয়ারী প্যানেল তৈরি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ওইসব কেন্দ্রে আরবিসহ ইংরেজি, জাপানি, ফ্রেঞ্চ ও কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা দেওয়া হবে।
 
আরবি শেখানোর জন্য শিক্ষাসচিবের আগ্রহের কথা জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক জানান, স্কুলের কম্পিউটার ল্যাবগুলোতে সফটওয়ার ব্যবহার করে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে তিনি (শিক্ষাসচিব) ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব করতে চান। প্রত্যেক উপজেলায় একটি ল্যাবকে মডেল হিসেবে পরিণত করা হবে।
 
বাংলার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা শেখাতে ২০০৬ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। শিক্ষাবোর্ড ও প্রকল্প থেকে আয়ের অর্থে ২০১২ সালের জুন পর‌্যন্ত তা চলমান থাকে। সাড়ে ১৫ কোটি টাকার ওই প্রকল্প ২০১২ সালের আগস্ট মাসে আবার চালু হয়। এফএলইটিসি নামের এই প্রকল্পে সাড়ে ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার, যা আগামী ১৫ ডিসেম্বর শেষ হবে।
 
বর্তমানে ঢাকায় দুইটিসহ সারাদেশে ১২টি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। আগামী বছরের জুন পর‌্যন্ত এই প্রকল্প বর্ধিত করে ৩০টি কেন্দ্র স্থাপিত হবে। তবে আরো পাঁচ বছর প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কথা চলছে বলে জানান জসীম উদ্দিন।
 
গত ৩ নভেম্বর ১৮ জেলার সরকারি কলেজে একটি করে বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কলেজ অধ্যক্ষকে এফএলটিসি থেকে চিঠি পাঠানো হয়।
 
এসব কেন্দ্রে প্রতি ব্যাচে ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থী তিন মাসের কোর্স করেন। এক হাজার ৩৫০ টাকা ফি দিয়ে দেড় ঘণ্টা করে ৪০টি ক্লাস করানো হয়। সাধারণত ইংরেজি, আরবি, কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা দেওয়া হলেও চাহিদার ভিত্তিতে ফ্রেঞ্চ ও জাপানি ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়। তবে স্প্যানিশ ভাষাও এবার শুরু করা হবে।
 
ভাল চাকরি পাওয়ার প্রত্যাশা, স্মার্টলি কথা বলতে শেখা, ভোকাবোলারি স্কিল রপ্ত করার আগ্রহ নিয়ে এসব কেন্দ্রে প্রার্থীরা ভর্তি হন জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, তারা অনেকেই ফ্লুয়েন্টলি কথা বলতে পারেন।
 
এ পর‌্যন্ত ২৫ হাজার জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নৌ-বাহিনীর ২০০ জন, পুলিশের ১৫০ জন আরবি শিখেছেন। যশোর ও চট্টগ্রামে জাপানি ও আরবি ভাষা শেখানো হচ্ছে।

মিরপুর কেন্দ্রে ১২ জন পোশাককর্মী জাপানি ভাষা শিখেছে, যার মধ্যে নয় জনই জাপানে গিয়ে মাসিক আড়াই লাখ টাকা আয় করছেন বলে জানান এফএলটিসি প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।