ঢাকা: গেণ্ডারিয়ার দয়াগঞ্জ মোড়ে নারিন্দার ৫১,শরৎগুপ্ত রোডের সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বর্ধিত করা হচ্ছে কলেজে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে দেড়শটি পদের।
শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে দেড়শ’র বেশি পদে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা সোহেল রহমানও গেছেন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে। উত্তীর্ণ হয়ে পরের শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।
এরপর নিয়োগ পেলেন তিনি, কিন্তু তা পেয়ে হতাশ হয়েছেন সোহেল। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করা সোহেলের বেতন ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। তবে সেটা যোগদানের সময় থেকে নয়। আগামী জুলাইয়ে কলেজ শাখা চালু হওয়ার পর কার্যকর হবে।
তাহলে এখন নিয়োগ হওয়ার পর সোহেলের কাজ? উত্তরে কর্তৃপক্ষ জানান, আপাতত অফিস করবেন, স্কুল শাখার শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেবেন।
তবে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বলা হয় সবার শেষে। আর সেক্ষেত্রে ভালো করতে পারলেই জুলাইয়ের আগে চূড়ান্ত হবে চাকুরি। প্রতিদিন বিভিন্ন স্কুলে, কোচিং সেন্টারে, এমনকি প্রয়োজনে বাসায় গিয়ে শিক্ষার্থী ‘জোগাড়’ করতে ক্যাম্পেইন করতে হবে শিক্ষকদের।
এ জন্যে প্রতিদিন একশ’ টাকা করে দেওয়া হবে নিয়োগকৃত প্রভাষককে। হতভাগা প্রভাষক যেন এই ফাঁদে জড়িয়ে আবার পালাতে না পারে, সে কারণে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদপত্রের মূল কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
চাকরি প্রার্থী পরিচয়ে কথা বললে, কলেজের অধ্যক্ষ নবুওয়াত এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান কোন বিষয়ে পড়াশোনা করেছি। সব কিছু জানার পর ভবিষ্যতে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে আবেদন করতে পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলানিউজের পরিচয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নবুওয়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কলেজের দুটি শাখায় বৃহৎ আকারে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নও হয়েছে।
কলেজ তো এখনও শুরু হয়নি, তবে নিয়োগকৃত শিক্ষকরা কী করবেন?-এমন প্রশ্নের উত্তরে নবুওয়াতের সহজ উত্তর, বিভিন্ন স্কুল আর কোচিং সেন্টার থেকে এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসবেন। তাইলেই তো বোঝা যাবে, কে কত পারদর্শী!
‘এছাড়া স্কুল শাখায় ক্লাস নেবেন তারা,’—যোগ করেন তিনি।
শিক্ষকদের কী শিক্ষার্থী ভর্তি করানো কাজ? প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ বলেন, আমরা তো কাউকে জোর করছি না। কয়েকদিনের মধ্যেই আরও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা থানার কাছাকাছিই ১০ এ/১ বড় মগবাজারে সানি হিলস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বরের মধ্যে মেইলে এবং সরাসরি প্রায় শতাধিক চাকরিপ্রার্থী ৯টি বিষয়ের জন্যে সিনিয়র শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদের জন্যে আবেদন করেন।
বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে সক্ষম এসব প্রার্থীদের স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শিক্ষাগত যোগ্যতার অধিকারী হওয়ার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
এই প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রত্যাশীদের অভিযোগ, মূলত আগে থেকেই এসব পদের প্রার্থী ঠিক করে রাখা ছিল। নামকাওয়াস্তে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হিমেল বাংলানিউজকে বলেন, সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে ৪৭জনের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরমধ্যে বেশিরভাগই ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী।
‘পরবর্তীতে যোগাযোগ করে জানতে পারি, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কোনো প্রার্থীরই চাকরি হয়নি, নিয়োগ আগে থেকেই ঠিক করা ছিল,’—যোগ করেন তিনি।
কলেজগুলোর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ শুনে বিস্মিত হয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এ ধরনের কলেজের খবর আমরা পাইনি। যদি এমপিওভুক্ত হয়, তবে মাউশি প্রতিনিধি ছাড়া নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে না।
‘এমপিওভুক্ত ছাড়াও যদি কোনো কলেজ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে, সেটা অনৈতিক। শিক্ষকের বেতন কখনও শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর নির্ভর করবে না,’—যোগ করেন তিনি।
বি:দ্র: দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসাসহ যে কোনো ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা অভিভাবকেরা কোনো ধরনের সমস্যা সর্ম্পকে জানাতে মেইল করুন [email protected] ।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫