ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির ওয়েবসাইটে কারিগরি ত্রুটির কারণে অনলাইন ভর্তি কার্যক্রমে ডিজিটাল ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ভর্তিচ্ছুরা। তবে কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিস এই কারিগরি ত্রুটির দায় এড়িয়ে উল্টো ভর্তিচ্ছুদেরই হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঢাবির জীববিজ্ঞান অনুষদের অধীন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে মেধাক্রম পাঁচশ’ এর মধ্যে থাকা এক ভর্তিচ্ছুর তথ্য ঘেঁটে ভর্তি ওয়েবসাইটে (admission.eis.du.ac.bd) ত্রুটির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছে বাংলানিউজ।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভর্তি কার্যক্রম চলাকালে ওয়েবসাইটে ত্রুটি দেখা দেয়। এর ফলে অনেক ভর্তিচ্ছুই অনলাইনে পছন্দক্রম পূরণে ভোগান্তির শিকার হন।
কিন্তু এ ব্যাপারে ভোগান্তির শিকার ভর্তিচ্ছুরা কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে যোগাযোগ করলে ওয়েবসাইটে ত্রুটির কথা বেমালুম অস্বীকার করা হয়। অফিসের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তারা অনেকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
ঢাবির ভর্তির নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তিতে ৪ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি গার্হ্যস্থ অর্থনীতি কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অনলাইনে কলেজ ও বিষয় পছন্দক্রম পূরণসহ ব্যক্তিগত যাবতীয় তথ্য পূরণ করতে বলা হয়। কিন্তু ওয়েবসাইটে ত্রুটির কারণে অনেক ভর্তিচ্ছুই এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা পূরণে ব্যর্থ হন। অনেকে আবার পূরণ করে সাবমিট করলেও ডাউনলোড লিঙ্ক পাননি। কেউ আবার একবার ডাউনলোড করার পর দ্বিতীয়বার আর ডাউনলোড লিঙ্ক খুঁজে পাননি।
মেধাক্রম ৫০০ এর মধ্যে থাকা ওই ভর্তিচ্ছু নির্দিষ্ট সময়ে তার পছন্দক্রম পূরণ শেষ সাবমিট করার পর ডাউনলোড করেন। কিন্তু সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভর্তি অফিস থেকে জানানো হয় তার পছন্দক্রম ওয়েবসাইট গ্রহণ (একসেপ্ট) করেনি। পরবর্তী সময়ে জরিমানা আদায় এবং ডিন অফিসের অনুমতি সাপেক্ষে তাকে আবারও পছন্দক্রম পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়।
ওই ভর্তিচ্ছুর দুটি পছন্দক্রম ফরমসহ জরিমানা আদায় রশিদের কপি বাংলানিউজের হাতে রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ওয়েবসাইটের ত্রুটির কয়েকটি স্ক্রিনশটও রয়েছে।
এদিকে পছন্দক্রম পূরণের সময় ওয়েবসাইটের ত্রুটির কথা জানিয়ে অনেক ভর্তিচ্ছু-অভিভাবক ঢাবির জনসংযোগ দফতরে ফোনও করেছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন দফতরের পরিচালক ড. নুর-ই ইসলাম।
জানা গেছে, ওই ভর্তিচ্ছু গত ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অনলাইনে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী কলেজ ও বিষয় পছন্দক্রম অনুযায়ী যাবতীয় তথ্যাদি পূরণ করে সাবমিট করেন। এরপর ডাউনলোড লিঙ্ক এলে তিনি ডাউনলোডও করেন। কিন্তু ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় ডাউনলোড নিশ্চিত হয়েছে কিনা তিনি জানতে পারেননি। এরই মধ্যে ভর্তির ওয়েবসাইটে ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে, পরবর্তী সময় তিনি তার চয়েস ফরম ডাউনলোডের জন্য চেষ্টা করেও আর ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারেননি।
১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাবি ভর্তির ওয়েবসাইট সচল হলে ওই শিক্ষার্থী ভর্তি ওয়েবসাইটে তার নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে লগইন করে পছন্দক্রম ডাউনলোডের লিঙ্ক খুঁজে পাননি। পরে তার এক অভিভাবক ভর্তি অফিসে যোগাযোগ করলে তাকে জানানো হয়, তার পছন্দক্রম ওয়েবসাইট গ্রহণ করেনি।
বিষয়টি জানতে পেরে এ প্রতিবেদক ঢাবির কেন্দ্রীয় অফিসে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ভর্তি অফিসের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান ওয়েবসাইটে ত্রুটির ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ওই ভর্তিচ্ছু পছন্দক্রম পূরণ করে ডাউনলোড করেনি। কারণ একবার ডাউনলোড করা হলে ওই লিঙ্ক থেকে যতবার খুশি ডাউনলোড করা যাবে।
ওয়েবসাইটে ত্রুটির ব্যাপারে কয়েকজন ভর্তিচ্ছুর অভিযোগ এবং ডিন অফিসের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওই শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে বলেন, যে বলেছে ওয়েবসাইটে সমস্যা ছিল, তাকে আমার কাছে ধরে নিয়ে আসেন।
এক পর্যায়ে তিনি এবং শরীফ নামে অন্য এক শিক্ষক এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন।
তবে ‘মেইনটেন্যান্সের কারণে’ ওয়েবসাইট ‘কিছুদিন’ বন্ধ ছিল বলে বাংলানউজের কাছে স্বীকার করেন অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ।
এ ব্যাপারে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ওয়েবসাইট মেইনটেন্যান্স এর কারণে গত সপ্তাহে বন্ধ ছিল। ঠিক কতদিন বন্ধ ছিল জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে পারেন নি।
ভর্তিচ্ছুদের সমস্যার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি ডিন অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন।
ওয়েবসাইটে সমস্যার ব্যাপারটি পরোক্ষভাবে স্বীকার করে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম বাংলানউজকে বলেন, যাদের পছন্দক্রম পূরণ করতে সমস্যা হয়েছে তাদের ডিন অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ওই শিক্ষার্থী ঢাবির জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন বরাবর সাদা কাগজে আবেদন করেন।
এরপর নির্দিষ্ট ফরমে দুইশ টাকা জরিমানা আদায় সাপেক্ষে তাকে আবার পছন্দক্রম পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে গার্হ্যস্থ অর্থনীতি কলেজ সমূহের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সাক্ষাৎকারও শুরু হয়েছে ৭ মার্চ। চলবে ১২ মার্চ পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৫