ঢাকা: প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের নতুন ভবনে বাস করছেন শিক্ষকেরা। আর সেখানেই জমিয়ে তুলেছেন রমরমা কোচিং ব্যবসা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে সোমবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। স্কুল ভবনে কোচিং বাণিজ্যের বিষয়েও তিনি অবহিত নন।
স্কুলের পূর্বপাশের ভবনে কে থাকছেন, জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, একজন ডিডি এবং শিক্ষক থাকেন।
এই ভবন কি শিক্ষকদের বসবাসের জন্যে নির্মাণ করা হয়েছিল কি?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন হলো এসেছি, জানি না পুরোপুরি।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে স্কুলভবনে বসবাস করা আট জন শিক্ষকের নাম পাওয়া যায়।
এরা হচ্ছেন, বাংলার শিক্ষক শিশির মল্লিক, কৃষি শিক্ষার শিক্ষক রবিউল ইসলাম, বিজ্ঞানের শিক্ষক ইমরুল হাসান, কামরুল হাসান, মো. শাহজাহান, চারু ও কারুকলার শিক্ষক শ্যামল কুমার দত্ত, শারীরিক শিক্ষার আবু নোমান, ইসলাম ধর্মের শিক্ষক শামসুল হক।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারি (এপিএস) মন্মথরঞ্জন বাড়ৈর প্রচ্ছন্ন ছায়াতেই প্রভাব খাটিয়ে স্কুলের ভবন দখল করে কোচিং করিয়ে আসছেন এসব শিক্ষক।
মন্মথরঞ্জন বাড়ৈর কলেজবন্ধু শিশির মল্লিকের নেতৃত্বেই গভঃল্যাব স্কুলে চলছে কোচিং বাণিজ্য। এছাড়া, রবিউল ইসলামও স্কুলটিতে বেশ প্রভাবশালী।
তবে সূত্র জানিয়েছেন, মন্ত্রীর এপিএস’এর সান্নিধ্যে থাকা এসব শিক্ষক বিভিন্ন সময় ওই ভবনে ক্লাস শুরু করতে বাধা দেন। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষকরা সব জানলেও চুপ করে থাকতে হয়।
এ বিষয়ে ড. শিশির মল্লিকের মোবাইলে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ফলাফলের উপর অভিভাবকদের রীতিমতো জিম্মি করে তাদের সন্তানদের কোচিংয়ে ভর্তি করাতে বাধ্য করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, বাংলার শিক্ষক শিশির মল্লিকের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে এ কোচিং বাণিজ্য।
দেশের খ্যাতনামা এ স্কুলে সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, ভেতরে প্রবেশ করলে পূর্ব পাশের লাল ভবনের বারান্দা এবং জানালায় ঝুলছে শুকাতে দেওয়া কাপড়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন তলা এ ভবনে পরিবারসহ বাস করছেন বেশ ক’জন শিক্ষক। অনেক জানালায় আবাসিক ভবনের মতোই ঝুলছে পর্দা।
অথচ স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে নির্মিত করা হয়েছিল এ ভবন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে কার্যক্রম এখনো শুরুই হয়নি। এরই মধ্যে প্রায় এক বছর ধরে সেখানে বাস করছেন স্কুলের কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক। একটি ক্লাসরুমে নিজেরা বাস করছেন, আরেকটিতে স্কুলের টেবিল আর বেঞ্চ ব্যবহার করে চালাচ্ছেন রমরমা কোচিং ব্যবসা।
২০১২ সালের জুন মাসে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক নীতিমালায় বলা হয়, সরকারি, বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন।
নীতিমালা জারির পরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়া অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গভঃ ল্যাবরেটরি স্কুলের এই আট শিক্ষকের ৩ জনেরই নাম ছিল। এরা হচ্ছেন শ্যামল কুমার দত্ত, সামসুল হক এবং ড. শিশির মল্লিক।
প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি শিক্ষার্থীদের জন্যে ১৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়। সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাশ নেয়া হয়।
৬ষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, মাসে ২৫০০ টাকা করে কোচিংয়ের জন্যে দিতে হচ্ছে তাকে। এভাবে ক্লাস অনুযায়ী, ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে জানান অভিভাবকেরা। গড়ে একজন শিক্ষক ছয়টি করে ব্যাচ পড়ান। মাসে এসব শিক্ষকের আয় প্রায় দেড় থেকে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময় ০৯৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫