ময়মনসিংহ: তপ্ত দুপুর। মাথার উপর গনগনে সূর্য।
শনিবার (৩০ মে) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর ময়মনসিংহের স্কুলগুলোর দৃশ্য ছিল অনেকটাই এরকম। স্কুলগুলোতে যেন বইছে আনন্দের ফল্গুধারা।
প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবার পর উচ্ছ্বসিত মেধাবীরা একে অপরের গলা জড়িয়ে দেয় জয়ধ্বনি। তাদের হর্ষধ্বনিতে কেঁপে উঠে স্কুলগুলোর আঙিনা। চলে সাফল্যের মিষ্টি মুখের পর্ব। গর্বিত শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে প্রিয় শিক্ষকদের মিষ্টি মুখ করান।
নিজেদের মেধা, শিক্ষকদের দক্ষতা এবং অভিভাবকদের অনুপ্রেরণা ও সর্বোপরি সচেতনতাই এ সাফল্য দিয়েয়েছে- মনে করছে ময়মনসিংহের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মেধাবী প্রজন্ম। এসব মেধাবীদের চোখে-মুখে দেখা গেছে নতুন স্বপ্নের আনাগোনা। কেউ হতে চায় ডাক্তার আবার কেউবা ইঞ্জিনিয়ার।
ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন বুশরাত সাইফ রায়না। তার স্বপ্ন চিকিৎসক হবার। স্বপ্নপূরণের পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়ায় হাসিমুখে বলেন, একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় কর্মের মাধ্যমে। তাই দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করতেই চিকিৎসক হতে চাই।
ঢাকা বোর্ডে অষ্টম স্থান দখল করেছে শিক্ষা নগরীর গর্ব ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। আর এ স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন সাদত রিজওয়ান আলম শাওন। এ মেধাবী শিক্ষার্থী বলেন, স্যারদের কথা শুনতাম। ক্লাস ফাঁকি দিতাম না। তবে আমাদের এ সাফল্যের পেছনে মা-বাবার অবদানও অনেক। ভবিষ্যতে আমি চিকিৎসক হতে চাই।
ময়মনসিংহ ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই কৃতি শিক্ষার্থী আবরিতা আলম মারিয়া ও পার্থ সারথী সাহা। তাদেরও উচ্চাকাঙ্ক্ষা চিকিৎসক হবার। নিজেদের সাফল্যের পেছনের গল্পে তারা বলেন, বাবা-মা সব সময় আমাদের নজরে রাখতেন। শিক্ষকরা উৎসাহ দিতেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ভাল ফলাফল করবো, করেছি।
ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পূর্ণেন্দু কুমার রায় জানান, তার প্রতিষ্ঠানের ভালো ফলাফল সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুব্যবস্থাপনার কৃতিত্ব।
ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুছ ফারুকী বলেন, শিক্ষকদের প্রচেষ্টা, অভিভাবকদের সহযোগিতা ও শিক্ষার্থীদের কঠোর অধ্যয়নের ফলেই এ ফলাফল এসেছে। আমাদের দায়িত্বই হল ক্লাসে ছাত্রদের পাঠদানে মনযোগী করা। আমি দারুণ খুশি।
ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিরিন আক্তার বানু বলেন, ছাত্র-শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমার প্রতিষ্ঠান ভাল ফলাফল অর্জন করেছে। আমি আমার স্কুলের এ ফলাফলে খুশি। আগামীতেও যেন এ রেজাল্টের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারি সে ব্যাপারে আমরা আরও বেশি মনোযোগী হবো।
এদিকে, ফল প্রকাশের পর শিক্ষা নগরীতে আনন্দ বন্যার প্রভাব দেখা গেছে মিষ্টির দোকানগুলোতে। ফলাফলকে ঘিরে দোকানগুলোতে মিষ্টির সরবরাহ এবং চাহিদা বেড়ে যায়।
শহরের মিষ্টির দোকানগুলোতে সকাল থেকেই ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। মিষ্টি দোকানিরাও এ সময় কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বাড়িয়ে দেন। তবুও প্রয়োজনের তাগিদেই মিষ্টি কিনে নেয় তারা।
শহরের ঐতিহ্যবাহী রুম থ্রি’র ম্যানেজার নুরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনের চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি মিষ্টি উৎপাদন করা হয়েছে শনিবার। মিষ্টি বিক্রিও জমেছে বেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৫
এইচএ/