ঢাকা: প্রযুক্তির আধুনিকতার সংস্পর্শে কৃষি কাজে এসেছে আমূল পরিবর্তন। চারা রোপন থেকে শুরু করে ফসল মাড়াই, সংরক্ষণ সবখানেই পরিবর্তনের ছোঁয়া।
আর আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষির সব কিছুর সঙ্গে শিশু শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পাঠ্যপুস্তক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
পুষ্টি, সচেতনতা, শস্যের বিভিন্ন দিক, মাটির পরীক্ষাসহ নানা বিষয় লিপিবদ্ধ থাকবে এ পাঠ্যপুস্তকে।
ইতোমধ্যে প্রাথমিক কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে। এ লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই ক্যাটাগরিতে দুটি পুস্তক তৈরি হবে। তবে এগুলো একেবারেই ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। কোনো ব্যবহারিক বা পরীক্ষা থাকবে না।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) পাঠ্যপুস্তক দুটি তৈরির কমিটির চেয়ারম্যান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মো. নাজমুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এ পুস্তক দুটি তৈরির কার্যক্রম। একটি খসড়া তৈরির কাজ শেষের দিকে। অবশ্য এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আর ৯ম থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আরেকটি পাঠ্যপুস্তক তৈরির প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে। পুস্তকের বিষয়বস্তু নিয়ে খসড়াটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি কমিটির হাতে দেওয়া হবে। সেখান থেকে অনুমতি পেলেই কেবল পুস্তক দুটি তৈরি সম্ভব হবে। পুস্তক দুটিতে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় থাকবে।
কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শিশুদের পাঠ উপযোগী যেন হয়, এ বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে পুস্তক দুটি তৈরিতে। দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরাও সতকর্ততার সঙ্গে কৃষি ভিত্তিক বিভিন্ন লেখা লিখছেন। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা থাকবে এতে।
মোট কথা, সহজ বাংলায় কৃষির সব কিছু তুলে ধরা হচ্ছে। পুস্তকে বিভিন্ন লেখার পাশাপাশি ছবিও দেওয়া থাকবে যা দেখে যেন কৃষকরা পদক্ষেপ নিতে পারেন।
কমিটি সূত্র জানায়, পুস্তক দুটিতে অনেক ব্যবহারিক বিষয় থাকবে। যা পড়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারের সবাইকে বোঝাতে পারবে। এতে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও পাওয়া যাবে। কৃষি কি, কীটনাশক ও বীষ প্রয়োগের মাত্রা ও প্রভাব, ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ, ধাপ, কৃষির নতুন নতুন উদ্ভাবনের কথা, সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ, কৃষির নতুনত্বসহ বিভিন্ন দিক উল্লেখ থাকবে।
কৃষকরা মনে করছেন, এই পুস্তক থেকে শিশু শিক্ষার্থীরা যেমন কৃষি সম্পর্কে জানতে পারবেন অন্যদিকে কৃষকেরাও ইচ্ছে করলে বই পড়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
নাটোর জেলার কৃষক ফরহাদ আলীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হলে শুরুতেই তিনি এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানান। তিনি বাংলানিউজ বলেন, কৃষি বদলে গেছে ঠিক। কিন্তু গ্রাম পর্যায়ে এখনো অনেক কৃষক আছেন যারা সচেতন নয়। সঠিক পদ্ধতি জানার অভাবে প্রতিদিনই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তিনি জানান, পুস্তকের মাধ্যমে সচেতন হওয়ার সুযোগও আছে। বিশেষ করে যেসব কৃষকরা ভালোভাবে বই পড়তে পারেন না তারা তাদের ছেলেমেয়েদের মাধ্যমে জানতে পারবেন। আর ছবি থাকলে তো আরও ভালো হবে। তবে পুস্তকটি যেন সব শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয় এই দাবিও জানালেন এ কৃষক।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৭ ঘণ্টা, ১১ জুলাই, ২০১৫
একে/কেএইচ