ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): ঈদের ছুটিতে চিরচেনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসকে একদমই অচেনা লাগে। থাকে না চিরাচরিত সেই প্রাণচাঞ্চল্য।
টিএসসি, ডাকসু, মধুর ক্যান্টিন কোথাও চোখে পরে না শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত আড্ডাবাজি। হলগুলোও একদম ফাঁকা হয়ে পড়ে।
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে গ্রামে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ঢাবিতে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন।
ঈদ উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটি পেলেও অনেকেরই যাওয়া হয় না নিজ দেশ কিংবা পরিবারের কাছে। কারও পরীক্ষার ব্যস্ততা অনেকেই আবার ব্যক্তিগত কারণে দেশে যান না। তাই অন্য দশটি দিনের মতোই ঈদের দিনটিও কেটে যায় তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার পিজে হার্টজ আন্তর্জাতিক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান জানান, এই হলে সব মিলিয়ে প্রায় ১৪০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী থাকেন। এর মধ্যে মুসলিম ধর্মাবলম্বী ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের শিক্ষার্থীও আছেন।
মালয়েশিয়া, ফিলিস্তিন, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও সোমালিয়ার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন। তবে নেপালি শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় এখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীই বেশি।
তিনি বলেন, হলে অবস্থানরতদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ২০ জনের মতো।
ঈদ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাইসের সঙ্গে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন তিনি।
বাংলানিউজকে জানালেন, ঈদের পরপরই পরীক্ষা। তাই এবার ঈদে দেশে যাওয়া হচ্ছে না।
‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার ইচ্ছা থাকলেও দেশে যেতে আসতে অনেক সময় নষ্ট হবে। তাতে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ঘাটতি দেখা দেবে। তাই এবার আর দেশে যাচ্ছি না,’ বলেন তিনি।
তবে ঈদে কেনাকাটা করবেন বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ রাইস।
তার সঙ্গেই যেন সুর মেলালেন কাশ্মিরের একই বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আসিফ। তার ভাষ্য মতে, ‘পরীক্ষার কারণে যেতে পারছি না। কারণ পড়াশুনার অনেক চাপ। তাই ক্যাম্পাসেই ঈদ করতে হবে। ’
তবে তাকে কেনাকাটার বিষয়ে ততোটা আগ্রহী মনে হল না। প্রসঙ্গটা তুলতেই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে তিনি বলেন,‘ শপিং করা কী খুব জরুরি!’
গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শেষ পর্বের ছাত্র নেপালি ছাত্র গৌরব ব্রজচারিয়া।
এ সময়কালে ঈদে কখনও দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়নি তার। বেশির ভাগ ঈদেই তাকে হাসপাতালে ডিউটি করতে হয়েছে। এবার ডিউটি না থাকলেও ঈদের পরপরই পরীক্ষা। তাই এবছরও কাজে লাগছে না তার দীর্ঘ ঈদ ছুটি।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পূজার সময় তো মাত্র একদিন ছুটি থাকে। তাই দেশে যাওয়ার সুযোগ হয় না। ঈদে বেশি দিন ছুটি থাকলেও নানা ঝামেলায় যাওয়া হয় না। আর এবারতো পরীক্ষা।
ঈদের দিন বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য হলের পক্ষ থেকে বিশেষ কী ব্যবস্থা থাকছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা ঈদের দিনে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করবো। দুপুরে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই হলে থাকেন না। তাই রাতে তাদের জন্য বিশেষ ডিনারের আয়োজন করা হবে।
রমজান মাসেও মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য হলের পক্ষ থেকে ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যাদের পরীক্ষা কিংবা অন্যান্য কোন সমস্যা নেই তারা এরইমধ্যে দেশে ফিরে গেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৫
এসএ/এমএ