ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

শিক্ষা

শিক্ষকদের আন্দোলনে অচল জাবি

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
শিক্ষকদের আন্দোলনে অচল জাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রী প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ ও অন্যান্য অসঙ্গতি দূর করার দাবিতে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষা কার্যক্রম। সোমবার (১১ জানুয়ারি) দু’একটি বিভাগের ক্লাশ-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও অধিকাংশ বিভাগের নিয়মিত ক্লাশ-পরীক্ষা হয়নি।



বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত শুধুমাত্র  নৃবিজ্ঞান বিভাগে একটি টিউটরিয়াল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত বাংলা বিভাগে একটি ক্লাশ, দর্শন বিভাগের একটি উপস্থাপনা ও জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে একটি ক্লাশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়া জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে একটি টিউটরিয়াল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধিকাংশ বিভাগে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হলেও শিক্ষকরা ক্লাশ নেননি।

তবে বিভাগগুলোতে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলতে দেখা গেছে।

২০১৫ সালের ৮ জুন শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন কাঠামো প্রণয়নের দাবিতে এবং প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামোয় অসম্মানজনক সুপারিশের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন’ ঘোষিত কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

সে সময় শিক্ষকদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিলো- শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়নের ঘোষণা ও এর বাস্তবায়ন, সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা সিনিয়র সচিবদের সমতুল্য করা, অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা পদায়িত সচিবের সমতুল্য করা এবং সহযোগী, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের বেতন কাঠামো ক্রমানুসারে নির্ধারণসহ শিক্ষকদের যৌক্তিক বেতন স্কেল ও মর্যাদা নিশ্চিত করা।

পরবর্তীতে ১৬ আগষ্ট রোববার একই দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান ধর্মঘট, কর্মবিরতি ও স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২৩ আগস্ট রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় নতুন কলা ও মানবিক অনুষদের সামনে তারা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং ৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কর্মবিরতি ও র‌্যালি কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।
 
একইদিন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মন্তব্যের প্রতিবাদে বুধ ও বৃহস্পতিবার পূর্ণদিবস সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে শিক্ষক সমিতি।

পরে ১৩ সেপ্টেম্বর রোববার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন তারা। একই দাবিতে ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন এবং ০৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সবশেষ সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন শুরু করেছে। মূলত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকেই তারা এই কর্মসূচি পালন করছেন।

এদিকে শিক্ষকদের চলমান এই আন্দোলনে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে শিক্ষকরা দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন। শিক্ষকদের এই আন্দোলনের ফলে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সেশন জটে পড়তে যাচ্ছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ ও কর্মকাণ্ড কাম্য নয়।

নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রেহেল ফেরদৌস শাহ বলেন, শিক্ষকরা সমাজের উঁচু স্তরের মানুষ। তারা ইচ্ছা করলেই সরকারের উঁচু পর্যায়ে কথা বলে এই বিষয়গুলো সমাধান করতে পারেন। তাদের সেই সুযোগও আছে। কিন্তু তা না করে ক্লাশ পরীক্ষা বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন। যা অনৈতিক এবং অগ্রহণযোগ্য। আশা করি শিক্ষার্থীদের জিম্মি না করে শিক্ষকরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করবেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. খবির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫
ওও/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।