ঢাকা: সরকার নির্ধারিত শর্তপূরণে ব্যর্থ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যারা নিজস্ব ক্যাম্পাসে এখনো যায়নি, একাধিক ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের জন্য সরকার ১ বছর সময় বেধে দিয়েছে।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকার আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নিজস্ব ক্যাম্পাসে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী।
আইন অমান্যকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তারা আইন অনুসারে সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে না পারলে ১ বছর অতিক্রান্তে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিবন্ধসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উচ্চশিক্ষা প্রসারের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেক বিদেশি উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য এখন বাংলাদেশে ছুটে আসছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে সংশ্লিষ্ট আইনকানুন মেনে চলার জন্য তিনি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান।
উচ্চ শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আইনের আধুনিকায়নসহ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান শিক্ষাদানের মহৎ কাজকে বাণিজ্য হিসেবে বিবেচনা না করে অর্জিত অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের পথ সুগম করতে ব্যয় করার জন্য আহবান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ১৯৭২ সালে দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার, আজ তা ৩১ লাখ। তিনি বলেন, উচ্চ শিক্ষার প্রসারে সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে এ অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সমাজে যে অসহিষ্ণুতা বিরাজ করছে তা বেদনাদায়ক। ইস্ট ওয়েস্টের গ্রাজুয়েটরা সততা, দক্ষতা ও দেশপ্রেমের মহামন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তার বক্তৃতায় বিশ্বব্যাপী জরিপে বাংলাদেশ আশাবাদী দেশ হিসেবে শীর্ষস্থান লাভ করার কথা উল্লেখ করে বলেন, অনেক বড় বড় বিশ্বশক্তির বিরোধীতা সত্ত্বেও আশাবাদী তরুণরাই এ দেশকে স্বাধীন করেছে। আজকে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বও তাদের।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ড. জাফর ইকবাল বলেন, সফলতা বলে কিছু নেই যদি ব্যর্থতা না থাকে। অনেক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে তবেই সফলতা দেখা দেয়। তাই কর্মজীবনে হতাশ না হয়ে তাদেরকে আশাবাদী হতে হবে। একই সঙ্গে অন্যের জন্য কিছু করতে পারার যে আনন্দ, মানব জীবনের ছোট্ট আয়ুষ্কালে সেই আনন্দ উপভোগের জন্য গ্রাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানান ড. জাফর ইকবাল।
এদিকে, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শর্তপূরণ করায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী সনদ দিয়েছে সরকার।
অনুষ্ঠানে তিন জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণ পদকসহ মোট ১ হাজার ৩১১ জন শিক্ষার্থীকে সনদ প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এম শহিদুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও শিক্ষক-কর্মকর্তা, গ্রাজুয়েট ও তাদের অভিভাবকরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সমাবর্তন শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন শিক্ষামন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস