ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‘আমিতো পড়তে চাই, আমি পড়বো’

রিফাত আলম রাজ, জবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৬
‘আমিতো পড়তে চাই, আমি পড়বো’ ইসরাফিল

জবি (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়): বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছেলেটির সঙ্গে মাঝে মাঝেই আমার দেখা হতো। চলতো কুশলাদি বিনিময়ও।

মাঝখানে বহুদিন দেখা নেই। হঠাৎ একদিন পুরান ঢাকার একটি মার্কেটের সামনে নাইট গার্ডের পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি তাকে।

ডাক দিলাম। আমাকে দেখে তাড়াহুড়া করে ছুটে এলো। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেমন আছ?’ এক গাল হাসি দিয়ে সে বলল, ‘ ভালই আছি। নতুন চাকরি পেয়েছি। পাঁচ হাজার টাকা বেতন। রাত আটটা থেকে সকাল আটটা ডিউটি। ভালই চলছে। ’এ সময় তার চোখ দিয়ে ঝরে পড়ছিলো অশ্রু। মনটা যেন কুকড়ে গেলে। খোলামেলা জানতে চাইলাম সব কিছু।

ইসরাফিলের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। ২০১৩ সালে এইচএসসি ভালভাবেই পাস করে ২০১৪-১৫ সেশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। পরিশ্রমের জমানো টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে যায় ইসরাফিল। কিন্তু সমস্যা হয় থাকা-খাওয়া আর জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির সেমিস্টার ফি ও অন্যান্য খরচ মেটানো নিয়ে।

সতেরোশ’ টাকার একটা টিউশনি দিয়ে মেস ভাড়া আর একবেলা খাবারই ঠিকমতো হয় না। তার ওপর যোগ হয় পড়াশোনার খরচ। টিউশন ফি ও ফর্ম পূরণের টাকা জোগাড় করতে না পারায় সেমিস্টার ফাইনালেও অংশ নিতে পারেনি সে। একটু হতাশ হয়েই শেষ পর্যন্ত নাইট গার্ডের চাকরিটা নেয় সে।

জিজ্ঞেস বললাম, ‘তোমার বাবা কি বলে’, সে বলল, ‘আমার বাবা আমার মাকে ছয় বছর আগে তালাক দিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করেন। এর কিছুদিন পর আমার মা আরেক জনকে বিয়ে করেন। ফলে আলাদা হয়ে যান তারা। আলাদা হয়ে যাই আমরা দুই ভাই বোনও। ছোটবেলায় বাবা মায়ের এভাবে আলাদা হবার কারণ বুঝতে না পারলেও আমরা যে একেবারই একা হয়ে গিয়েছিলাম তা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম। গ্রামের বাড়িতে যাওয়া আসা নেই বললেই চলে। পরে স্থানীয় লোকদের সহায়তায় আমরা দুই ভাইবোন একটা এতিমখানায় ভর্তি হই। বোন থাকত বালিকা শাখায় আর আমি থাকতাম বালক শাখায়। বোনের বিয়ে হয়েছে কিছুদিন আগে। এতিমখানা আর  পাড়া প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় বিয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল।

তবে সকল সমস্যাকে হার মানিয়েও লেখাপড়া অব্যাহত ছিলো বলে জানায় ইসরাফিল। কিন্তু এখন অর্থনৈতিক সমস্যা তাকে ঘিরে ধরেছে। নিজের পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার খরচ যোগানোই এখন ইসরাফিলের জন্য কঠিন।

এভাবেই অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ঝরে পরতে হচ্ছে একজন প্রকৃত মেধাবীকে। যে কি না শত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েও সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির সন্তানদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলো।

কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি নন ইসরাফিল। বললো, ‘ভাই আমি তো পড়তে চাই। আমি পড়বো। ’

বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।