ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

এক যুগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
এক যুগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: হাটি হাটি পা করে এক যুগ পার করলো দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষার আদর্শ বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার পার করে একযুগ পূর্ণ করা বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের ফলাফল ও একাডেমিক শৃঙ্খলা এখন নতুন সৃষ্টি হওয়া যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে রোল মডেল বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের ইতিহাসে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এটি-যা স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে আবারও অবনমন, এরপর ফের কলেজ এবং তা থেকে বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়া একমাত্র উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সময়ের বিবর্তনে মাত্র সাড়ে ৭ একরের ছোট্ট একটি ক্যাম্পাসে ২০ হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বুননের এক বৃহৎ পরিধি হয়ে দাঁড়িয়েছে জবি।

ইতিহাস বলে, ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল দিয়ে শুরু হয় আজকের জবির শুরুটা। ১৮৭২ সালে বালিয়াটির জমিদার কিশোরী লাল রায় তার বাবা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে এ বিদ্যাপীঠের নামকরণ করেন। ১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে উন্নীত হয়।

এক সময় এটিই ছিলো ঢাকার উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আইএ, আইএসসি, বিএ (পাস) শ্রেণি ছাড়াও ইংরেজি, দর্শন ও সংস্কৃতিতে অনার্স এবং ইংরেজিতে মাস্টার্স কোর্স চালু হয় এখানে। তবে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা ও বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন এবং সংগ্রামে শামিল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। রয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-তে সামরিক সরকারের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ’৬৬-এর ছয়দফা দাবি, ’৬৮-এর এগারো দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ পাস হয়। এরপর একই বছরের ২০ অক্টোবর এক আদেশে জগন্নাথ কলেজকে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে’ রূপান্তর করে তৎকালীন সরকার।

এরপর একযুগের পথচলায় জবি দেখিয়েছে তার সামর্থ্য। হলবিহীন দেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নানা সঙ্কটের দ্বারে দাঁড়িয়েও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা একের পর এক সাফল্য দেখিয়েছেন। বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলেও এ মুহূর্তে বেশ সফলতা দেখিয়েছে জবি।

এছাড়া অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারেও বেশ ভালো করছেন জবির শিক্ষার্থীরা। ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কিংবা তাদের অভিভাবকদের পছন্দে থাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ম ব্যাচের ছাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, সঙ্কটের শেষ নেই, এরপরও প্রাপ্তি অনেক। যা জবি তার এক যুগে দেখিয়েছে। অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তা পেরেছে কিনা তা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে জবি উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এক যুগ পার হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স এক অর্থে ১২ বছরপূর্ণ হয়নি। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরের পর ২০১১ সাল পর্যন্ত এখানে কলেজের শিক্ষকরাই ছিলেন।

‘বয়স সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে; এক. ক্যালেন্ডার ভিত্তিক বয়স, দুই. মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক বয়স। এদিক বিবেচনা করলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স মাত্র ৬ বছর। তবে জন্মের তারিখ হিসাব করলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১২ বছর। ’

তিনি বলেন, বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে। শিক্ষকরাও মেধাবী। অর্থাৎ মানবসম্পদের কোনো সঙ্কটের বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। কেবলমাত্র মেধার উপর ভিত্তি করেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোর প্রায় ক্ষেত্রেই এ নবীন বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান রানার আপের।

অবকাঠামোগত সঙ্কট জগন্নাথের মূল সমস্যা উল্লেখ করে ড. মীজানুর বলেন, প্রকৃত অর্থে গবেষণা করার মতো ল্যাবরেটরি নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু সেই পরিমাণ আকর্ষণ তৈরি করা, লাইব্রেরিতে যথেষ্ট জার্নাল, বইয়ের ব্যবস্থা করা যায়নি। আশা করা যায়, আগামী ডিসেম্বর মাসের পর থেকে আমরা হাইস্পিড ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হবো। এতে আন্তর্জাতিক জার্নাল, প্রকাশনা ও গবেষণা সংশ্লিষ্ট কাজে দ্রুত সংযোগ ঘটবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবরকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এবার সেই নিয়মের কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে। এবার ২০ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আয়োজন দু’দিন পিছিয়ে দেওয়া হেয়ছে।

এছাড়া মায়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন বাদ দেওয়া হয়েছে। হয়নি প্রতিবারের মতো আলোকসজ্জাও।

রোববার (২২ অক্টোবর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও যুগপূর্তি উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা ও  বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে প্রশাসন। যেখানে পারফর্ম করবে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল দলছুট।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
ডিআর/ওএইচ/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।