ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে না পেরে ৩০ মিনিটের আবশ্যকতা?

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে না পেরে ৩০ মিনিটের আবশ্যকতা?

ঢাকা: পাবলিক পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতির আবশ্যকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবক, পরীক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থীরা। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নিলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরতে না পেরে সাধারণ পরীক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগের অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, পাবলিক পরীক্ষায় ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের উপস্থিত হতে হবে।
 
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আসন্ন জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছিল ওই সভায়।

এ ঘোষণার পরে অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে কেউ কেউ এই উদ্যোগকে সাধুবাদও জানিয়েছেন।
 
বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তারা প্রশ্ন ফাঁস আগে বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

আরও জানতে পড়ুন: ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিতি: ব্যতিক্রমে ছাড়
ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যাললের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ফেরার পথে বেইলি রোড এলাকায় আরাফাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ৩০ মিনিট বেশি হয়ে গেছে। ১৫ মিনিট করা উচিত ছিল।
 
রাস্তায় যানজট হতে পারে, এতে কেউ হলে ঢুকতে না পারলে তারা পরীক্ষা দেওয়া হবে না- প্রশ্ন রেখে আরাফাত বলেন, প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে কঠোর হতে হবে।
 
তবে তারই সহপাঠী মামুন ভিন্ন মত ব্যক্ত করে বলেন, ঠিকই আছে। আগে ঢুকলে আর প্রশ্ন নিয়ে কেউ কথা বলতে পারবে না। এখন তো মোবাইল ফোনেই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়।
 
স্মার্টফোনের ব্যাপকতা এবং ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকসহ অন্য মাধ্যমে খুব সহজেই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।
 
অভিযোগ রয়েছে, পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলে স্মার্টফোনে ছবি তুলে শিক্ষক বা সংশ্লিষ্টরা বাইরে পাঠিয়ে দেন। আর তা নিয়ে সমাধান করে ভেতরে প্রবেশ করেন পরীক্ষার্থীরা।
  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক অভিভাবকের মেয়ে এবার জেএসসি পরীক্ষা দেবে। তিনি তার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া এক নাতিকে নিয়ে এসেছেন স্কুলের পরীক্ষার জন্য।
 
পুরান ঢাকার জিনজিরা এলাকার এই নারী অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, আগে ঢুকলে ছেলে-মেয়েদের দুঃচিন্তা থাকে না। বাইরে থাকলে নানা রকম টেনশন থাকে।  
 
সেগুনবাগিচা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী বাদল বাংলানিউজকে বলেন, আমি আগামীবার জেএসসি পরীক্ষা দেব। যখন বলবে তখন হলে ঢুকবো। তবে প্রশ্ন যেন ফাঁস না হয় সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
 
পরীক্ষার কিছু সময় আগে কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁস হলে তা নিয়ে যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো টেনশন না থাকে সে জন্য ৩০ মিনিট আগে প্রবেশের নির্দশনাকে ইতিবাচতক হিসেবে দেখছেন ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ফোরামের নেতা জিয়াউল কবীর দুলু।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোনোভাবেই তো প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় দেখেছি পরীক্ষা শুরুর আগে বা ৫/১০ মিনিট পরেও ছেলে মেয়েরা পরীক্ষার হলে ঢোকে। তারা কেন্দ্রের আশেপাশে জটলা হয়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দেশে সমাধান করে প্রবেশ করে। এতে যারা প্রশ্ন পায় তারা লাভবাবন হয়, আর যারা পায় না তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
 
৩০ মিনিটের সিদ্ধান্ত ‘মন্দের ভালো’ হলেও আপাতত তা স্বাগত জানিয়ে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান জিয়াউল।
 
ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক অভিভাবক বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই মেনে নিবো। তবে কোনো দুর্ঘটনায় যদি ৩০ মিনিট আগে প্রবেশ না করে সে দিকে ছাড় দিতে হবে।
 
বিশেষ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ৩০ মিনিটের নির্দেশনাকে ছাড় দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ব্যতিক্রম কিছু থাকলে কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেবে, পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে।
 
বুধবার (২৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বলেন, আইন করা ছাড়া তো বাধ্যতামূলক করা যায় না, আমরা আবশ্যিকভাবে নিচ্ছি।
 
‘তবে কেউ একটা অ্যাক্সিডেন্টে পড়ে গেল, সেক্ষেত্রে তো বিবেচনা করতে হবে। সে রকম এক্সসেপশন থাকতে পারে। ’
 
সচিব বলেন, আমরা চাই প্রকৃত মূল্যায়ন। কোনো রকম অসাধু পন্থা যাতে না হয়। আমাদের যে প্রজন্ম পরীক্ষা দিচ্ছে, এরাই দেশটাকে পরিচালনা করবে। ওদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
 
শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আধাঘণ্টা আগে উপস্থিতির বিষয়টি শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত হয়েই গেছে। ধীরে ধীরে আমরা বাস্তবায়ন করবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।