সোমবার (২৮ মে) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের কক্ষে নীল দলের শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন (প্রমোশন) আটকানোর কারণ জানতে চাইলে তাদের অপমান করেন উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। এ সময় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া ও লাঞ্ছিত করা হয়।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, এদিন প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য দফতরে সব যোগ্যতা পূরণ করলেও অনৈতিকভাবে নীল দলের অনুসারী শিক্ষকদের প্রমোশন আটকে রাখার বিষয়ে দেখা করতে গেলে তাদের সঙ্গে কথাবলা বা বসতে না বলে ঘাড় ধরে দরজার বাইরে বের করে দেন উপাচার্য। এ সময় উপাচার্যের কক্ষের সামনে ঘণ্টা খানেক অবস্থান করেন তারা।
বিষয়টি ছড়িয়ে পরলে নীলদলের অন্য সদস্যরা সেখানে ছুটে গিয়ে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান।
নীল দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নিতাই কুমার ঘোষ, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমির শরীফ, মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক নূর নবী ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আনোয়ার হোসেনের পদন্নোতির সময় দীর্ঘদিন পার হলেও ভাইভা বোর্ডের কার্ড কেন ইস্যু করা হচ্ছে না এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে যান তারা।
কিন্তু তারা নীল দলের শিক্ষক তাই তাদের সঙ্গে কথাবার্তা না বলেই দরজা খুলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছেন উপাচার্য। তাই শিক্ষকরা অনশন করে প্রতিবাদ শুরু করেন।
তারা জানান, আগামী ৩০ মে এর মধ্যে যদি চার শিক্ষকের পদন্নোতি বোর্ডের কার্ড ইস্যু করা হয় তাহলে কঠোর আন্দোলনে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ওই দুই শিক্ষক।
এদিকে, শিক্ষক লাঞ্ছিতের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রশাসনিক ভবনে বাধা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বাংলানিউজের বেরোবি করেসপন্ডেন্ট মাহফুজুল ইসলাম বকুল ও যুগান্তরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাব্বি হাসান সবুজ। এছাড়াও ইত্তেফাকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোবাশ্বের আহমেদ, মানবজমিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইভান চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সদস্য তরিকুর ইসলাম পিয়াসও বাধাগ্রস্ত হন।
ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকরা উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সঙ্গে চেম্বারে দেখা করতে গেলে সাংবাদিকদের রুম থেকে বের করে দেয় উপাচার্যের পিএস আমিনুর রহমান ও পিএ আবুল কালাম আজাদ প্রক্টর (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. একেএম ফরিদুল ইসলাম। সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান এবং কথা বলতে পারবেন না বলে পাশ কাটিয়ে সাংবাদিকদের ধাক্কা দিয়ে চলে যান উপাচার্য।
এদিকে ভিসির চেম্বারের সামনে প্রক্টরের সঙ্গে দেখা করে বক্তব্য নিতে গেলে প্রক্টর সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে দফতরের গেট দিয়ে বের করে দেন।
এ বিষয়ের যুগান্তরের বেরোবি প্রতিনিধি রাব্বি হাসান সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চায় এটা বড় বাধা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমন লাঞ্ছিত হবো তা মেনে নেওয়া যায় না। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
নীল দলের সভাপতি ড. নিতাই কুমার ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী নীলদল করি, তাই আমাদের দোষ। ভিসিও একজন শিক্ষক, তিনি শিক্ষক হয়ে আরেকজন শিক্ষককে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারেন এটা কল্পনা করিনি। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামনে মুখ দেখাতে লজ্জাবোধ হচ্ছে আমার।
নীল দলের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের ইবনে তাহের বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর চেতনায় বিশ্বাসী নীল দলের শিক্ষকরা। আমরা অতীতেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সমসময় সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়ে নীল দল করি বলে ভিসি আমাদের নানান সময়ে হয়রানি করে পদোন্নতি আটকে দিয়েছে অনশনে নামতে বাধ্য করেছে। আজ আমাদের যেভাবে অপমান করেছে সেটা পুরো শিক্ষক সমাজকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার সামিল।
তিনি আরও জানান, নীল দলের শিক্ষকদের দল থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে জোরপূর্বক তা না হলে পদোন্নতি, শিক্ষাছুটিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন উপাচার্য।
জানা গেছে, সম্প্রতি গণিত বিভাগের প্রভাষক ইসমাইল হোসেনকে জোরপূর্বক নীল দল থেকে পদত্যাগ করায় উপাচার্য। তা না হলে তার পদোন্নতি দেওয়া হবে না তাই এ মর্মে ইসমাইল হোসেন নীল দল থেকে পদত্যাগ করে এবং তার পদোন্নতির ভাইভা কার্ড ইস্যু হয়। এদিকে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিয়ামুন নাহার নিমা নীল দলের শিক্ষক বিধায় তার শিক্ষাছুটি বাতিল করেছে উপাচার্য। পরে উপাচার্যকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা রিসিভ করেনি।
পরে উপাচার্যের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। অন্যান্য বিষয় আলোচনা করে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৮
জেআইএম/আরআইএস/