শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এক পর্যায়ে সাধারণ ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়কসহ আন্দোলনকারীদের চারজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পূর্ণাঙ্গ মেয়াদের উপাচার্য ড. মেসবাহ উদ্দিন আহম্মেদ, দুই অনুষদের ডিন অধ্যাপক মনসুর মুসা ও ড. হাসিন অনুপমা আজহারী, রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মূর্ত্তজা আলী প্রমুখ।
আলোচনায় আন্দোলনকারীদের পক্ষে দাবি তুলে ধরেন সাধারণ ছাত্র পরিষদের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের সকল দাবি মেনে নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেয়। রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ছাত্রদের সকল যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে আছেন তিনিও। ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে ছাত্রদের সকল দাবি তুলে ধরবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর উপাচার্য পদে লায়লা পারভিন বানুর বৈধতা সংক্রান্ত রিট মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন আদালত। রিট পিটিশন নম্বর: ১৬৪৪৮/২০১৭। রায় হাতে পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সহায়তাদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বাদী পক্ষ রায় হাতে পান ৩ এপ্রিল, ২০১৯ তারিখে।
তবে এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি যদি আবার আপিল করে তাহলে উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হয়ে যাবে। ডা. লায়লা পারভিন বানু যেহেতু বিতর্কিত। সেহেতু ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে প্রয়োজনে তাকে বাদ দিয়েই উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা দশ দফা দাবি লিখিতভাবে পৌঁছে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। তাদের দাবিগুলো হলো—
১. বৈধ ভিসি নিয়োগের কমপক্ষে ২১ কার্যদিবস পর সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
২. ভিসি নিয়োগের আগে সকল প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।
৩.শুধু মাত্র ভিসি নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট অফিসিয়াল কার্যক্রমগুলো ছাড়া এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট উত্তোলনসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম ব্যতীত অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রমগুলো বন্ধ থাকবে।
৪. আলোচনা এবং আন্দোলন একই সাথে চলমান থাকবে।
৫. বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠেয় খেলায় ব্যাঘাত ঘটে এমন কোনো কার্যক্রমে ‘সাধারণ ছাত্র পরিষদের’ কোনো সমর্থন থাকবে না।
৬. ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার জন্য দ্রুত বৈঠকে বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পদে নিযুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন আন্দোলনকে ইস্যু করে আটকে রাখা যাবে না।
৮. আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, এর জন্য পরবর্তীতে কোনো জরিমানা আদায় করা যাবে না।
৯. আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার হয়রানিমূলক মামলা-মোকদ্দমা, বহিষ্কারাদেশসহ শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করতে পারবে না।
১০. যেহেতু ডা. লায়লা পারভিন বানুকে নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দ্বিমত পোষণ করেছেন এবং একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু দ্রুত নতুন করে যোগ্য তিনজন ব্যক্তির প্যানেল করে ভিসি পদে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৯
এমজেএফ