ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মোট জিপিএ ৮ নাকি ৯, দোলাচলে মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছুরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৯
মোট জিপিএ ৮ নাকি ৯, দোলাচলে মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছুরা প্রতীকী ছবি

ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে বিপাকে পড়েছেন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনেকে। এবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) মিলিয়ে মোট জিপিএ কত লাগবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। ভর্তির ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা ২০১১ পাল্টে ২০১৭ সালের নতুন নিয়ম কার্যকর করতে গেলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, ২০১৭ সালের নীতিমালার অনুযায়ী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে মোট জিপিএ দরকার ৯। অন্যদিকে ২০১১ সালের নীতিমালা অনুযায়ী মোট জিপিএ দরকার হতো ৮।

ভর্তির ক্ষেত্রে মোট জিপিএ ৮ থেকে ৯ করায় গতবছর আট শিক্ষার্থী হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্টে মে মাসে রিটকারীদের পক্ষে রায় দেন। আদেশে বলা হয়, নীতিমালা ২০১৭ এর ২.২ অনুচ্ছেদ অবৈধ। অনুচ্ছেদটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট জিপিএ ৯ লাগবে বলে নিয়ম করেছিল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। পরে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ১৪ আগস্টের রায় স্থগিত করে।

এদিকে বিএমডিসি তড়িঘড়ি করে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের জন্য ভর্তি বিজ্ঞাপন দেয়। বিজ্ঞাপনে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে মোট জিপিএ ৯ চাওয়া হয়। আর এতে এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে জিপিএ ৯ এর কম কিন্তু ৮ এর বেশি যারা পেয়েছে এমন শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বেকায়দায়। যদি আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন তবে বেকায়দায় পড়া শিক্ষার্থীরা কীভাবে পরীক্ষা দেবেন এবং দিতে পারলেও প্রস্তুতির ঘাটতির কথা বলছেন অনেকে।

ভর্তিচ্ছু কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীরা মেডিক্যাল কলেজে পড়তে চাইলে মোট জিপিএ দরকার হয় ৭ বা সমান নম্বর। কিন্তু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নিয়ম ভিন্ন। দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দুই নিয়মকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন অনেকে। অথচ বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস পড়ে গিয়ে নিজ দেশে চিকিৎসক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রথম ধাপেই পাস করছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে মোট জিপিএ ৬ বা ৫০ শতাংশ নম্বর হলেই মেডিক্যাল কলেজে পড়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। শুধুমাত্র পাকিস্তানে দরকার হয় জিপিএ ৮ বা ৭০ শতাংশ নম্বর। আর আমাদের দেশে সাধারণের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদেরও দরকার হয় জিপিএ ৯। বিএমডিসি, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তে দেশের অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে এমবিবিএস পড়তে চলে যাচ্ছেন। আখেরে তা দেশের ক্ষতিই বয়ে আনবে বলে মত তাদের।

তারা আরও জানান, গত বছর ভারতে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পান। তা থেকে ৮ লাখ জনকে নির্বাচিত করা হয়। পরে এখান থেকে যাচাই-বছাইয়ের মাধ্যমে ১ লাখ ভর্তির সুযোগ পান।

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামের তুলনায় শহরের ছেলেমেয়েদের জিপিএ ভালো থাকে। এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, শহরে বসবাস করা শিক্ষার্থীরা ভালো কোচিং বা শিক্ষকদের কাছে পড়ার সুযোগ পান যা গ্রামের শিক্ষার্থীদের চেয়ে তাদের এগিয়ে রাখে।

ভর্তি পরীক্ষায় যেন গ্রামের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও অংশ নিতে পারেন সেজন্য ওই আট শিক্ষার্থী রিট করেছিলেন। এতে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। অন্যথায় মোট জিপিএ ৯ চাওয়া হলে অনেকেই বিদেশে পড়তে চলে যাবে। যার ফলে মেধা পাচার তো হবেই, বাংলাদেশ হারাবে বিপুল অংকের অর্থও।

এ সমস্যা সমাধানে ভর্তিচ্ছু বহু শিক্ষার্থীরা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা হিসেবে মোট জিপিএ ৮ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, উন্নত স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বে ভারতের অনেক সুনাম রয়েছে। ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন তারা। এরপর গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষা লাভের পর সুনামের সঙ্গে সর্বোন্নত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন সেই শিক্ষার্থীরা। তারা যদি ৫০ শতাংশ নম্বর প্রাপ্তদের মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে পারে তাহলে বাংলাদেশ কেন দিতে পারবে না?

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৯
এইচএডি/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।