মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটউটে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গণভবনে এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেবেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিভুক্ত করার চেষ্টা রয়েছে সরকারের।
সবশেষ ২০১০ সালে প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এবার ২০১৮ সালের নীতিমালার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়। সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে বাছাই করে প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
দীপু মনি বলেন, নীতিমালার অধীনে হাওর, চর, পার্বত্য এলাকা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, নারী শিক্ষার বিষয় বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
গত জুন মাসে এমপিওভুক্তি ঘোষণার কথা থাকলেও পরিপূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা তৈরির জন্য বিলম্ব হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বাজেট বরাদ্দ পেয়েছি। এই জুলাই মাস থেকেই এমপিও কার্যকর হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনলাইনে আবেদন পাওয়ার পর পাসের হার, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা- এসব বিষয় বোর্ডের কাছে নিয়ে নানাভাবে পর্যালোচনা ও ক্রস চেক করা হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কাছে নথি পাঠানো হয়। যেহেতু বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সংসদে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের সাধারণ দাবি ছিল এমপিওভুক্তি; কাজেই বিষয়টি নির্ভুল করতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও যাচাই-বাছাই করে তারপর প্রধানমন্ত্রী সই করেছেন।
আবেদন করা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠান এবার এমপিওভুক্ত হবে। গত বছর ১৬শ’র কিছু বেশি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছিল। এবার হবে প্রায় তার দ্বিগুণ।
মন্ত্রী বলেন, এমপিওভুক্ত হয়ে গেলো মানে সারাজীবনের জন্য নয়, এবার এমপিওভুক্ত করার পর প্রতিবছর সব প্রতিষ্ঠানকে মান ধরে রাখতে হবে। মান ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে তার এমপিও স্থগিত থাকবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত আবার মান অর্জন করে।
নন-এমপিও শিক্ষকদের সাক্ষাৎ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নন-এমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী যারা আছেন, তারা দীর্ঘদিন থেকেই এমপিওভুক্তির জন্য আন্দোলন করছিলেন। আমরা বরাবরই তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওই শিক্ষকরা দাবি করছেন যে, সব স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠানকেই এমপিওভুক্ত করা হোক। প্রয়োজনে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। একটা সময় হয়তো সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে চেষ্টা করবো সবাইকে দিতে পারি কি-না, সেটি হতে পারে। আবার, অনেকের চিন্তা আছে, জনগণের টাকা যাকে দেবো, সে যোগ্য কি-না, সেটিও দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী, শিক্ষক না থাকে, পাসের হার ঠিক না থাকে, অর্থাৎ শিক্ষাদানের সমস্যা থাকলে তারা কি এমপিও পাওয়ার দাবি রাখেন? কাজেই স্বীকৃতি পেলেই এমপিও দিতে হবে, এই দাবিটি বোধ হয় যুক্তিযুক্ত নয়।
নন-এমপি শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা কখনোই চাই না, আমাদের শিক্ষকরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামুক। আমরা তাদের বিভিন্ন সময়ে আশ্বস্ত করেছি, আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, আমরা দেখলাম, তারা আবার আন্দোলনে নেমেছেন। অনশনের ঘোষণা দেওয়ার পরে আমি দেশের বাইরে থেকে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, দেশে ফিরে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিকভাবেই তাদের অনেকেই দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করছেন, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত নেই। শিক্ষক হিসেবে যে বেতন তারা পান, সেটি হয়তো যথেষ্ট নয়। তাদের সেই অসুবিধা বুঝি ও এ নিয়ে সহমর্মিতাও রয়েছে। কিন্তু, নীতিমালার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আবার নীতিমালা আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। তবে, চলমান প্রক্রিয়ায় নীতিমালা সংশোধনের সুযোগ নেই। খেলা শুরুর পর গোলপোস্ট চেঞ্জ করতে পারেন না!
তিনি বলেন, এই নীতিমালার অধীনে প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত হয়ে যাক, এর পরপরই নীতিমালা সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করবো। সেখানে আপনাদের সবাইকে সম্পৃক্ত করবো, আপনাদের সবার মতামত নেবো ও নীতিমালা আরও উন্নত করার চেষ্টা করবো।
মন্ত্রী বলেন, এবার যোগ্য বিবেচিত একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির বাইরে থাকবে না। যে প্রতিষ্ঠান যোগ্য, তাকে এমপিওভুক্ত করছি; এটুকু আমরা নিশ্চিত করছি। আর এখন থেকে প্রতিবছরই এমপিওভুক্ত করা হবে।
শিক্ষকদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি অনুরোধ জানিয়েছে, আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী সুবিধাজনক সময়ে তাদের সময় দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসোইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৯
এমআইএইচ/একে