তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গতবারের চেয়ে অনুপস্থিতির পরিমাণ কমেছে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পৌঁছতে ডিআরভুক্ত হওয়া অবধি ঝরে পড়ার হার ২৬.২৩ ভাগ।
২০১৬ সালের প্রাথমিক স্তরের সমাপনী পরীক্ষা দেওয়ার তিন বছর পর শনিবার ২ নভেম্বর অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি ) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অংশ নেওয়া এ পরীক্ষার্থীরা গত তিন বছর আগে প্রাথমিকের সমাপনীতে অংশ নিয়েছে। এরপর মাঝের দুইটি শ্রেণি অতিক্রম করে আজকের পরীক্ষা দিয়েছে।
গত বছর (২০১৮) পরীক্ষা না দেওয়ার সংখ্যা ছিল ১৩৭ জনের মতো। ২০১৬ সালে প্রাথমিক সমাপনীতে পরীক্ষার্থী ছিল ৫ হাজার ৬৮০। জেএসসিতে এসে কমেছে ১২৮৩ জন। ঝরে পড়ার হার ২৮.২২ ভাগ। অভাব-অনটনে ছেলেরা, বাল্য বিয়ের কারণে মেয়েরা ও অন্যান্য কিছু কারণেও এ অঞ্চলের এসব শিশু শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবন থেকে ছিটকে পড়েছে। এমন তথ্যই মিলেছে অনুসন্ধানে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালে মধুপুর উপজেলার প্রাথমিক স্তরের স্কুল পর্যায়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ৪ হাজার ৮৯০ জন শিক্ষার্থী ডিআর ভুক্ত হয়েছিল। যেখানে মেয়ে ছিল ২ হাজার ৫৮২ এবং ছেলে ছিল ২ হাজার ৩০৮। কিন্ত সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪ হাজার ৭৬২ শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেই ঝরে পড়েছে ১২৮ শিশু। পরীক্ষার ফলাফলে ৪ হাজার ৭৫১ জনের মতো উত্তীর্ণ হয়। পাসের হার শতকরা ৯৯.৭৬ ভাগ। অনুত্তীর্ণরাও যুক্ত হয় ঝরে পড়ার তালিকায়।
পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে মাদরাসা স্তরের পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। একই শিক্ষা বর্ষে ছেলে ৩৬৯ ও মেয়ে ৪২০ জন মিলে মোট ৭৮৯ শিশু শিক্ষার্থী ডিআর ভুক্ত হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় এ শাখার সাড়ে ৬ শ’র মতো পরীক্ষার্থী। কিন্তু পরীক্ষার আগেই এক্ষেত্রে ঝরে যায় শতাধিক। ওই দুই স্তরের শিক্ষার্থীরাই তিন বছর পর চলতি বছর ২০১৯ সালের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
স্কুল পর্যায়ে উপজেলার ৩৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৬১৪ জন ডিআরভুক্ত হয়েছে। গতবারের চেয়ে এ সংখ্যা প্রায় তিনশ’র মতো কম।
মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাণী ভবানী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও শোলাকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় এই তিনটি কেন্দ্রে তারা পরীক্ষায় বসেছে । মাদরাসসহ চারটটি কেন্দ্রে অনুপস্থিত ৭৯ জনের মধ্যে ৫৫ জন মেয়ে ও ২৪ জন ছেলে।
অভিভাবক পর্য়ায়ে যোগাযোগ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে, মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। সংসারের অভাব-অনটন দূর কারার লক্ষ্যে দুই-চার পয়সা রোজগারে ছেলেরা কাজে লেগে গেছে। কেউবা অজ্ঞাত কারণে প্রবেশপত্র নেয়নি। বনাঞ্চলের জলছত্র নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে এমনটা জানিয়েছেন, কালিয়াকুড়ি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওবায়দুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন প্রধান শিক্ষক।
এদিকে হিসাবে বেরিয়ে এসেছে, গত তিন বছরে স্কুল পর্যায়ে ১ হাজার ২৮০ জন ঝরে পড়েছে। শতকার হিসেবে ঝরে পড়ার হার ২৮ ভাগেরও বেশি।
এমন অবস্থার কারণ জানাতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, এই চিত্র সত্যি উদ্বেগজনক। এজন্য প্রথমত অসেচতনতা দায়ী। এরপর অভাব-অনটন ও কন্যা দায়গ্রস্ততা থেকে মুক্তির জন্য পরিবার মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়া এ উদ্বেগ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। যা কখনো কম্য নয়; এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০, নভেম্বর ০৩, ২০১৯
এমএমইউ