প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান।
শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যেসব শিক্ষার্থীরা মেসে থাকেন তাদের অধিকাংশই মেস ছেড়ে নিজ বাড়িতে চলে যায়।
সংকটের এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মেস ও বাসা ভাড়া। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে মেস ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মালিকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছেন। যেসব শিক্ষার্থী মেসে অবস্থান করছেন ভাড়া বাবদ তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা আদায় করছেন। যারা মেসে নেই মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধের জন্য তাগিদ দেওয়া শুরু করেছেন।
মেসের বর্ডারদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী টিউশন বা খণ্ডকালীন চাকরি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালান। আবার অনেকে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারও চালান। কিন্তু করোনা মহামারিতে এসব শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। পরিবারের আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা মেসের ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজশাহী মহানগরীতে মেস ভাড়া মওকুফ করলে দরিদ্র-অসহায় শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন। পুরো ভাড়া মওকুফ সম্ভব না হলে মেস মালিকদের কথা মাথায় রেখে অর্ধেক ভাড়া কমানো উচিত। এতে মেস মালিক ও মেসের বর্ডার উভয় পক্ষই উপকৃত হবেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল হক বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। অনেকেই টিউশন বা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে নিজের খরচ বহন করেন। কিন্তু এখন সেই পথ বন্ধ। এ অবস্থায় মানবিক বিবেচনায় মেস মালিকদের উচিত ভাড়া মওকুফ করা।
রাজশাহী কলেজের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তাদের জীবন ধারণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। কিভাবে মেসের এতো টাকা পরিশোধ করবো। মেস মালিকদের মেসের ভাড়া মওকুফ করার দাবি জানাচ্ছি।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান বলেন, আমাদের মেস মালিক বলেছেন ১ থেকে ৪ তারিখের মধ্যে ভাড়া দিলে জরিমানা লাগবে না। না হলে যত দিন পার হবে ততদিনের দৈনিক ১০ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
মেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে কিছু শিক্ষার্থীর ভাড়া মওকুফ ও কিছু শিক্ষার্থীর জন্য কিছুটা শিথিলের পক্ষে আমি। পুরোপুরি মওকুফ করলে মেস মালিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হবে। কারণ তাদের পরিবার চলে মেসের ভাড়ায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, মেস মালিকদের সঙ্গে ভাড়া মওকুফের বিষয়ে কথা বলেছি কিন্তু তাদের তেমন সাড়া পাইনি। পুরোপুরি মওকুফ না করে যদি শিথিলের ব্যাপারে মেস মালিকদের কাছে প্রস্তাব রাখা হয় তবে হয়তো আমরা ভালো ফলাফল পেতে পারি বলে আমি আশাবাদী।
তবুও যারা দরিদ্র ও একদম ভাড়া দেওয়া সম্ভব না সেসব শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া যাতে মওকুফ করা হয় সে বিষয়ে মেস মালিক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবো।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক বলেন, মেস ভাড়া মওকুফের ব্যাপারে এ ধরনের সরকারি কোনো নির্দেশনা এখনও নেই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারো ওপর কোনো নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ মেস মালিকের কাছে নিজের সমস্যার কথা তুলে ধরে এর সমাধান করে নিতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২০
এসএস/এএটি