রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম. আবদুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শুনানি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও প্রধানমন্ত্রীর দফতর বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে এ শুনানির আয়োজন করে ইউজিসি।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ইউজিসির মিলনায়তনে উপাচার্যের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য শুনানিতে যাননি।
উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ইউজিসির তদন্ত কমিটিকে ‘কর্তৃত্ববিহীন ও বেআইনি’ দাবি করে শুনানিতে যাননি। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া অসুস্থতা দেখিয়ে এতে অংশ নেননি।
শুনানিতে অংশ না নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য। শিক্ষকরা বলছেন, ‘শুনানিতে না যাওয়ায় যারা দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন, তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হলো। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইউজিসি এ শুনানি করেছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে উপাচার্য পরোক্ষভাবে সরকারকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন। শুনানিতে না যাওয়ায় উপাচার্যের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। ’
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সরকার আদিষ্ট হয়ে ইউজিসি এ তদন্ত করেছে। অভিযোগকারীদের সব অভিযোগ সত্য নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে তার (উপাচার্য) উচিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া। কিন্তু সেটি না করে এটাকে (তদন্তের শুনানি) অবৈধ, ৭৩ এর অধ্যাদেশের কথা বলে প্রকারান্তে সরকারকেই চ্যালেঞ্জ করে বসেছেন উপাচার্য। শুনানিতে অংশ না নেওয়ার মাধ্যমে উপাচার্যের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। ’
জানা যায়, চলতি বছরের গত ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত সংবলিত ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে দাখিল করেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একাংশ।
অভিযোগপত্রে মোট ১৭টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়। এতে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য এবং উপাচার্য কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে ধোঁকা দেওয়া ও শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করে উপাচার্যের মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ দেওয়া, এডহক ও মাস্টার রোলে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য, উপাচার্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে দুর্নীতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩ লঙ্ঘন করে বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি নিয়োগ ইত্যাদি অভিযোগ উল্লেখ করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইউজিসি অভিযোগগুলো তদন্তে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটি উভয়পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনে এ উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করেছিল।
তবে গত ৯ সেপ্টেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসির ডাকা গণশুনানিকে বেআইনি, আদালত অবমাননাকর ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্বের শামিল বলে উল্লেখ করে উপাচার্য এম আবদুস সোবহান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, ‘উপাচার্যের উচিত ছিল শুনানিতে অংশ নেওয়া। উভয়পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনের মাধমে সত্য তথ্য বেরিয়ে আসত। শুনানির পরিবর্তে সরাসরি সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিকতর মানহানিকর হতো। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, ‘ইউজিসির তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের ভাষ্যমতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশিত হয়ে ইউজিসি এ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। ইউজিসির মাধ্যমে না করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ তদন্ত কমিটি গঠন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তা আরও বেশি মানহানিকর হতো। ’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘উপাচার্যের শুনানিতে অংশ নেওয়া উচিত ছিল। এতে করে দু’পক্ষের তথ্য উপস্থাপনের ফলে সত্য তথ্য বেরিয়ে আসত। শুনানিতে না যাওয়ার ফলে যারা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন, তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হলো। একদিক থেকে উপাচার্যের শুনানিতে অংশ না নেওয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকেও অবমাননা করার শামিল। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
এসআই