ঢাকা: করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে চলতি বছর প্রাথমিক ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের পর উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষাও বাতিল করেছে সরকার।
এইচএসসি পরীক্ষার পরিবর্তে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফলের গড়ের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বুধবার (০৭ অক্টোবর) দুপুরে অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এসময় যুক্ত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন। এদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন এবং অনিয়মিত পরীক্ষার্থী দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন।
অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নানা রকম ভাগ রয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তাদের মধ্যে এক বিষয়ে যারা অনুত্তীর্ণ হয়েছিলেন তাদের সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন, দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ২২৪ জন এবং সব বিষয়ে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫১ হাজার ৩৪১ জন। আর নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের বাইরে সংখ্যা তিন হাজার ৩৯০ জন। ফলাফল উন্নয়নের জন্য আবারো পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৭২৭ জন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে বা কখন পরীক্ষা নেওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ হবে- এর কোনো নিশ্চয়তা নেই তা আমরা সবাই বুঝতে পারছি। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কীভাবে পরীক্ষা গ্রহণ বা পরিকল্পনাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
এইচএসসি পরীক্ষার জন্য যেসব বিষয় খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হয় সেটি হলো যেকোনো পরিমার্জনসহ পরীক্ষা পদ্ধতির যথার্থতা এবং নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখা, পরীক্ষা চলাকালীন সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি কীভাবে এড়ানো বা হ্রাস করা যায়, বিদ্যমান প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে পরীক্ষা নেওয়া যায় সেটিও আমাদের ভাবতে হচ্ছে।
সাতটি বিষয়ে ১৩টি পত্রে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করতে হয় জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা গ্রহণের জন্য কমপক্ষে ৩০-৩২ কর্মদিবসের প্রয়োজন হয়। দুই হাজার ৫৭৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রে এ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। এক্ষেত্রে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে পরীক্ষা নিতে গেলে আমাদের দ্বিগুণ কেন্দ্র প্রয়োজন পড়বে। বিদ্যমান কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র প্যাকেটজাত করে পাঠানো হয়েছিল। আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। প্যাকেট ভেঙে নতুন প্যাকেট করার সুযোগ নেই, কেন্দ্র দ্বিগুণ করতে হলে যে জনবল তাও দ্বিগুণ করতে হবে। বর্তমান সময়ে এসব করা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিষয় বা পরীক্ষা কমিয়ে হয়তো পরীক্ষা নেওয়া যায়। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে বিষয় কমিয়ে পরীক্ষা নেব হয়তো দেখা গেল কোনো পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি ভালো। তাতে দেখা গেল কোনো পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আবার পরীক্ষা নেওয়ার সময় কোনো পরীক্ষার্থী বা তার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলো।
অন্যান্য দেশের পরিস্থিতিও দেখেছি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভারতেও সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি বোর্ডের আওতায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কোভিড-১৯ শুরুর আগেই শুরু করেছিল এবং তিনটি পরীক্ষা গ্রহণের পর স্থগিত করা হয়। এছাড়াও হংকং, চীনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে আমাদের পরীক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সবার জীবনের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সার্বিক বিবেচনায় আমরা বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিয়ে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরীক্ষা না নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন শিক্ষা বোর্ডসমূহের জন্য একেবারেই নতুন, ফলে কীভাবে মূল্যায়ন করা হলে ফল দেশে এবং বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা, এ বিষয়গুলো আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা এইচএসসি পরীক্ষার্থী তারা দুটি পাবলিক পরীক্ষা- জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষা পার করে এসেছে। সে দুটির ফলাফল গড় অনুযায়ী এইচএসসিতে ফল নির্ধারণ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের বেশকিছু শিক্ষার্থী এসএসসিতে যে বিভাগে পাস করে তারা আবার এইএসসিতে বিভাগ পরিবর্তন করে। যারা বিভাগ পরিবর্তন করেছে তাদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আমরা একটা পরামর্শক কমিটি গঠন করছি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানও থাকবেন। তাদের পরামর্শে বিভাগ পরিবর্তনকারীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দীপু মনি বলেন, আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে পারবো। যাতে জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির বিষয়গুলো শুরু হতে পারে।
মূল্যায়নের ক্ষেত্রে জেএসসি এবং এসএসসির কত শতাংশ করে নেওয়া হবে- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এই পরামর্শক কমিটি সেটি নির্ধারণ করবেন।
পরীক্ষা না হওয়ায় চাকরিতে প্রবেশে এসব শিক্ষার্থী বৈষম্যের শিকার হবে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমরা একাত্তর সালে যে রকম পরিস্থিতে ছিলাম, এখনও প্রায় আমাদের জীবনযুদ্ধ চলছে। এবার সমস্যাটা বৈশ্বিক। সারা পৃথিবীতে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারেনি। যারা চাকরি দাতা তারাও বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন, তাদের মেধার ভিত্তিতে চাকরির বিষয়টি নির্ভর করবে। সেক্ষেত্রে হয়তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন ও ভর্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অবশ্যই সেটি দেখা হবে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় কেউ প্রেডিকক্টেড গ্রেড করেছে কেউ আগের পরীক্ষার ফলাফল দেখে মূল্যায়ন করেছে। কাজেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষার্থীর ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ নেই।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিগুলোকে অনুসরণ করতে যাচ্ছি। আমরা যদি এইচএসসি পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করি, তাহলে আন্তর্জাতিক পরীক্ষা আছে এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো একটা মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈষম্যের শিকার হওয়ার কারণ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২০/ আপডেট ১৫১৩ ঘণ্টা/
এমআইএইচ/এইচএডি