ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

এইচএসসি পরীক্ষা

ফরম ফিলাপের টাকা ফেরত চান অভিভাবকরা

দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
ফরম ফিলাপের টাকা ফেরত চান অভিভাবকরা

ঢাকা: উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার জন্য করা ফরম ফিলাপের টাকা ফেরত চান অভিভাবকরা৷ তাদের দাবি, যেহেতু পরীক্ষাই হয়নি সেহেতু ফরম পূরণের টাকা ফেরত দিতে হবে৷ তবে অভিভাবকদের এ দাবি মানতে নারাজ শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ৷ তারা বলছেন, ফরম পূরণ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া হয়েছে সেই কাজগুলো তারা করেছেন। এতে সেই টাকা খরচ হয়ে গেছে।

গত বুধবার (৭ অক্টোবর) অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পরীক্ষা বাতিল করা হলেও জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্র সুদীপ্ত পাল শুভর মা সঞ্চিতা পাল বাংলানিউজকে বলেন, পরীক্ষার যে রেজিস্ট্রেশন ফি আমরা আগেই জমা দিয়েছি, তা ফেরত পেলে আমাদের উপকার হয়। কারণ যেহেতু পরীক্ষা হবে না। টাকাটা ফেরত পেলে এই মহামারির মধ্যে লেখাপড়ার আনুষাঙ্গিক অন্যান্য খরচ বহন করা যেতো। সামনে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতিও রয়েছে।

বিএফ শাহীন কলেজের ছাত্রী সালমা আক্তারের মা ফরিদা বেগম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন ফি তো কলেজ থেকে জমা নিয়েছে পরীক্ষার আগেই। এখন যেহেতু পরীক্ষায় হবে না তাহলে রেজিস্ট্রেশন ফি রাখাটা অযৌক্তিক। আমরা এই টাকা ফেরত চাই৷

আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রী সামরীনা আমীরের বাবা আমীর খসরু বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফি যদি ফেরত দেয় তবে, তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য কিছু বই কিনে ফেলতে পারতাম। যদিও জানি না সেই পরীক্ষাও হবে কিনা৷ তারপরও এই মহামারির আকালে কিছুটা উপকার পেতাম আর কি! বাকিটা সরকারের বিবেচনা।

রাজবাড়ী সরকারি কলেজের ছাত্র নাফিস ফোয়াদ খানের মা নাসিমা খানম বলেন, যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা ভালোই হয়েছে৷ পরীক্ষা হলে নিশ্চয়ই আমার ছেলে ভালো রেজাল্ট করতে পারতো৷ করোনা পরিস্থিতির কারণে যেহেতু পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে না তাই আর কি বলার আছে ৷ ফরম ফিলাপের টাকা ফেরত পেলে ভালো হতো৷ তবে ফেরত না দিলে আর কি করার আছে৷

শিক্ষাবোর্ড থেকে জানা যায়, এইচএসসির ফরম পূরণের জন্য গত বছরের নভেম্বরে কেন্দ্র ফিসহ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ২৫০০ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীদের ১৯৪০ টাকা করে ফি ধরা হয়। এর মধ্যে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের বোর্ড ফি ১৬৯৫ টাকা, মানবিক ও বাণিজ্যে ১৪৯৫ টাকা করে এবং বিজ্ঞানে কেন্দ্র ফি (ব্যবহারিক ফি সহ) ৮০৫ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্যে ৪৪৫ টাকা করে নেওয়া হয়।

কেন্দ্র ফি থেকে থেকে ট্যাগ অফিসারের সম্মানীসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতে বলা হয়। কিন্তু যাদের ব্যবহারিক বিষয় আছে তাদের টাকার সঙ্গে প্রতি পত্রের জন্য আরো ২৫ টাকা করে দিতে হয়েছে। এছাড়া ব্যবহারিক উত্তরপত্র মূল্যায়নে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত পরীক্ষকের জন্য পত্র প্রতি ২৫ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়।

ফরম পূরণের জন্য একজন নিয়মিত শিক্ষার্থীকে প্রতি পত্রের জন্য ১০০ টাকা, ব্যবহারিক প্রতি পত্রের জন্য ২৫ টাকা, একাডেমিক/ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০ টাকা, সনদ ফি ১০০ টাকা, রোভার স্কাউট/গার্লস গাইড ফি ১৫ টাকা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা ধরা হয়েছিল।

পরীক্ষা বাতিলের পর অভিভাবকদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর নেওয়া রেজিস্ট্রেশন ফি এবং পরীক্ষার আগে ফরম পূরণের টাকা ফেরত চাওয়ার জবাবটা শিক্ষাবোর্ডের কাছ থেকে এসেছে ‘না’ বাচক৷

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা তো পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন এবং ফরম ফিলাপ করেছি। এগুলো (টাকা ফেরত) কেন বলছে? অনেকে বলছে কেন্দ্র ফি, কেন্দ্র ফি তো কেন্দ্রে চলে গেছে। আর আমরা তো কাজ করেছি।

আমরা রেজিস্ট্রেশনের কাজ করেছি, ফরম ফিলাপের কাজ করেছি, আমরা ফলাফল দেব, খাতা বানানো হয়েছে, প্রশ্ন তৈরি করেছি। এতে আমাদের সব টাকা তো খরচ হয়ে গেছে। ’

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি বলে আমরা কেন্দ্র ফি ফেরত চাই, ঠিক আছে কেন্দ্র ফি ফেরত চাইলে পরীক্ষা দাও! অষ্টমের জেএসসি-জেডিসি এবং মাধ্যমিকের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল থেকে এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ফল দেওয়া হলে তাতে সবাই উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। ’

পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তোমারা তো সবই পেয়ে যাচ্ছ। আর আমরা তো জায়গায় জায়গায় টাকা খরচ করেছি, এরা এটা বুঝতেছে না। ’

বাংলাদেশ সময় ১০১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
ডিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।