ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

১৩ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও বেরোবিতে চাকরি না পাওয়ার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১
১৩ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও বেরোবিতে চাকরি না পাওয়ার অভিযোগ

রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) সেকশন অফিসার পদে চাকরি দেওয়ার নামে ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। টাকা নিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রুবেল সাদী।

অভিযুক্ত তিন ব্যক্তি হলেন বেরোবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান পলাশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কম্পিউটার অপারেটর শেরেজামান সম্রাট এবং মাস্টাররোল কর্মচারী গুলশান আহমেদ শাওন।  

ভুয়া নিয়োগপত্র, মেডিক্যাল টেস্ট সার্টিফিকেট, ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ এবং দুই লাখ টাকা লেনদেনের সাত মিনিট পাঁচ সেকেন্ড ও ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডের দু’টি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে।  

প্রথম ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রংপুরের জাহাজ কোম্পানি মোড় এলাকার মিতালী হোটেলে ভুক্তভোগী লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করছেন সম্রাট, শাওন এবং পলাশ। চাকরি প্রত্যাশীর চাকরি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে শেরেজামান সম্রাট বলছেন, ‘আপনার চাকরি দিতে না পারলে আমাকে খেসারত দিতে হবে। ’

এরপর রুবেল সাদীকে দেখা যায় সম্রাট এবং শাওনের হাতে দু’টি টাকার বান্ডল তুলে দিতে। এসময় চাকরি প্রত্যাশীকে বলতে শোনা যায় ‘ভাই বিসমিল্লাহ বলে দু’জন (সম্রাট এবং শাওন) মিলে একবার টান (গোনা) দেন। ’ এরপর সম্রাট এবং শাওন দুই বান্ডল টাকা গোনেন। টাকা গোনা শেষ হয়ে গেলে সম্রাট একপর্যায়ে দাঁড়িয়ে পলাশকে স্যার সম্বোধন করে বলেন, ‘ঢুকালাম স্যার ঢুকালাম। ' 

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, রুবেল কবে থেকে অফিস করতে পারবেন- চাকরি প্রত্যাশীর লোকজনের পক্ষ থেকে সম্রাটকে এমন প্রশ্ন করা হলে সম্রাট বলেন, ‘রুবেল সকাল বেলা থেকেই অফিসে বসতে পারবেন। ’

এ সময় সম্রাট চাকরি প্রত্যাশীর লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘টাকাগুলো এখন ভার্সিটির অন্যজনকে দিতে হবে। এটা কি পকেটে রাখার জিনিস?’   

অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অনেকগুলো টাকার ফাইল নিয়ে বিস্কুট ও কোল ড্রিংকসে পানাহার করতে করতে লেনদেন করছেন অভিযুক্ত সম্রাট ও চাকরি প্রত্যাশী। ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিওতে টাকা নেওয়ার পর টেবিলে রেখে পরে কাপড়ের ব্যাগে ঢোকানোর প্রস্তুতিও দেখা যায়। তবে গোপনে ভিডিও ধারণ করায় তাদের কথাবার্তাগুলো অনেকটা অস্পষ্ট।  

ভুক্তভোগীর দাবি, সেদিন তিনি ১০ লাখ টাকা সম্রাটের ব্যক্তিগত কোনো অফিসে দিয়েছিলেন।

অভিযোগপত্রে দেখা যায়, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বাসিন্দা রুবেল সাদীকে সেকশন অফিসার-০২ পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১৬ লাখ টাকার চুক্তি করেন অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেই চুক্তি অনুযায়ী তিন ধাপে ১৩ লাখ টাকা দেন রুবেল সাদী। বাকি টাকা যোগদানের সময় পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

কিন্তু টাকা নেওয়ার পরও চাকরি দিতে টালবাহানা শুরু করেন তিন কর্মকর্তা-কর্মচারী। একপর্যায়ে তাদের চাপ দিলে বাধ্য হয়ে নিয়োগপত্রের একটি ফটোকপি দিয়ে যোগদান করতে বলা হয় তাকে।

সেই নিয়োগপত্র নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, এটি ভুয়া নিয়োগপত্র। পরে ঘুষের টাকা ফেরত চাইলে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রুবেলের।

এ বিষয়ে রুবেল সাদী বলেন, আমি তিন দফায় ১৩ লাখ টাকা দিয়েছি৷ কিন্তু তারা আমাকে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণা করেছেন। মূলত সম্রাট এ বিষয়ে মূল ভূমিকা পালন করেছেন। তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছি৷ এছাড়া মামলা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছি।  

তবে মূল অভিযুক্ত শেরেজামান সম্রাট বলেন, আমার ধান ও ভুট্টার ভালো ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসায়িক লেনদেনের ভিডিও ধারণ করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মনিরুজ্জামান পলাশ ও গুলশান আহমেদ শাওনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।