ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ফ্রি ফায়ার-পাবজি আসক্তি, বই বিমুখ শিক্ষার্থীরা

জয়ন্ত জোয়ার্দ্দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২১
ফ্রি ফায়ার-পাবজি আসক্তি, বই বিমুখ শিক্ষার্থীরা

মাগুরা: করোনা মহামারির কারণে বন্ধ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে চলছে অনলাইনে লেখাপড়া।

একদিকে অবসর অন্যদিকে অনলাইনের অবাধ ব্যবহার উঠতি বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে ফ্রি ফায়ার বা পাবজি নামক গেমের আসক্তিতে।  

গেম দুইটি যুব সমাজের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় ধীরে ধীরে তাদের ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যয়বহুল এই গেমস দুইটি হয়ে উঠেছে বই বিমুখ ছাত্রদের অবসর বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু।

অনেক অভিভাবকের অভিযোগ, ফ্রি ফায়ার গেমে আসক্তদের খাওয়া-ঘুম তো নেই-ই বরং তাদের সময় নেই কারোর সঙ্গে গল্প বা কথা বলার। এভাবে চললে তারা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া ফ্রি ফায়ারে ব্যবহৃত বিভিন্ন চরিত্র ও অস্ত্র ব্যবহৃত হয়, যা সম্পর্কে অনেক পেশাদার সন্ত্রাসীরাও ওয়াকিবহাল নয়।  
এই খেলার এক একটা চরিত্র কিনতে অন্তত ৪০০-৫০০ টাকা খরচ করতে হয় তাদের। এই অর্থ তারা কোথা থেকে সংগ্রহ করে তা নিয়েও আতঙ্কিত অনেক অভিভাবক। ছোট বাচ্চারা বাবা-মার কাছে জেদ ধরে টাকা আদায় করে। না দিলে আত্মহত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটতে পারে। মায়ের সঙ্গে অনেকের বাগবিতণ্ডার জেরে মারামারির মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।

শহরের কেশব মোড়ের একজন অভিভাবক সুকান্ত মিত্র বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইন্টারনেট ব্যবহার করেই তো এসব খেলতে হয়। আর ইন্টারনেট ডাটার যে দাম কি করে পেরে উঠবে অভিভাবকরা? তাছাড়া এই খেলার খেলোয়াড়রা যেভাবে কথা বলে তা দেখলে মনে হবে পাগল। সারাদিন বকাবকি করে। সারাদিনের এই বকাবকি তাদের ঘুমের ঘোরেও প্রভাব ফেলে। দিনে ব্যবহৃত বিভিন্ন রকমের শব্দ ঘুমের ঘোরেও বলতে শোনা যায়। ’

অভিভাবক সুজন শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মূলত এই খেলার সুযোগ এসেছে সরকার অনলাইন ক্লাস শুরু পদ্ধতি থেকে। ক্লাসগুলো যদি অনলাইনে না দিয়ে কোনো টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সর্বশেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতো, তবে আমার মনে হয় ভালোই হতো। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘অনেক ছেলে-মেয়েরা অনলাইন ক্লাসের নাম করে নতুন মোবাইল কিনেছে। কিন্তু ক্লাসে তাদের বিন্দুমাত্র মনোযোগ নেই। ’
মাগুরার একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাজহারুল হক লিপু বাংলানিউজকে বলেন, আমার মনে হয় এভাবে চলতে দেওয়াটা ভালো ফল বয়ে আনবে  না। দেশ, সমাজ, জাতি অতিদ্রুত ধ্বংসের কবলে পড়তে যাচ্ছে। ব্লু -হোয়েলের মতো ভয়ঙ্কর রূপ নেওয়ার আগেই এই খেলা বন্ধ করা দরকার। সরকারের উচিত এই ব্যাপারেটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা।

জানা যায়, শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আলোচনায় ওই দুই গেমের আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম দুটি বন্ধে দুই মন্ত্রণালয় থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি সত্য যে ওই দুটি গেম কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করেছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই দুটি গেম কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে বন্ধ করতে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। তাই ধীরে সুস্থে বিকল্প পদ্ধতিতে গেম দুটি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে হ্যাঁ, যারা এ ধরনের গেমে আসক্ত তারা ভিপিএনসহ নানা বিকল্প উপায়ে গেমটি খেলতে পারে। আমরা সেসবও বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।