ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

অস্বচ্ছতার অভিযোগে জাবিতে রেজিস্ট্রার নিয়োগ বোর্ড স্থগিত

জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২২
অস্বচ্ছতার অভিযোগে জাবিতে রেজিস্ট্রার নিয়োগ বোর্ড স্থগিত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): অস্বচ্ছতার অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) রেজিস্ট্রার নিয়োগ বোর্ড বসার নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা আগে তা স্থগিত হয়েছে।

রোববার (২৬ জুন) বিকেল ৩টার দিকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য জাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘সিলেকশন কমিটিতে চ্যান্সেলর মনোনীত দু’জন সদস্য না থাকা, বোর্ড বসার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের ইন্টারভিউ কল করা এবং একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত দুজন সদস্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এই বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘রেজিস্ট্রারের পদ অধ্যাপকের পদের সমান। এ ধরনের মিটিং সাধারণত প্রার্থীদের তিন সপ্তাহ সময় দিয়ে ডাকা হতো। অপরিপক্কভাবে মিটিং কল করার কারণে এ ইন্টারভিউ বোর্ডটি বাতিল হয়। এটা আসলে দুঃখজনক। ’

এর আগে, পছন্দের প্রার্থীকে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দিতে তোড়জোড় করার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় নিয়োগ বোর্ড বসার কথা থাকলেও প্রার্থীরা জানতে পারেন মাত্র ৬ ঘণ্টা আগে। তাছাড়া বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নিজেই এ পদের একজন প্রার্থী হয়ে ইন্টারভিউ কল চিঠি ইস্যু করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ১৬ জুন রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ পরিচালক ও শারীরিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে রেজিস্ট্রার বাদে অন্য দুটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

রেজিস্ট্রার পদে আবেদন করেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. আবুল কালাম আজাদ, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (স্টোর) তাজনাহার বেগম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আবু হাসান, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি-২) এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (কাউন্সিল) এ বি এম কামরুজ্জামান।

এদের মধ্যে দু’জন প্রার্থী রোববার দুপুর ১২টায় উপাচার্য বরাবর অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে ‘রেজিস্ট্রার নিয়োগ বোর্ড’ বাতিলের আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রার্থীর আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আমি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য একটি পত্র পেয়েছি। নিয়োগ পরীক্ষার দিন ইন্টারভিউ কার্ড দেওয়া প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয়। তাছাড়া প্রায় এক বছর আগে আহুত বিজ্ঞপ্তির নিয়োগ পরীক্ষা এতদিন পর আহ্বান করাও বিধেয় নয়। উপরন্তু, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয় সময়টুকুও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অনেকটা গোপনীয়তার সঙ্গে এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান আহ্বান করা হয়েছে। ’

আবেদনপত্রে তিনি দাবি করেন, ‘ইন্টারভিউ কার্ড যিনি ইস্যু করেছেন, তিনি নিজেও একজন প্রার্থী। আরেকজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। তিনিও একজন প্রার্থী। তারা যথাযথ প্রস্ততি নিয়ে ইন্টারভিউ দেওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন। কিন্তু আমি তা পাইনি। তাই আমার পক্ষে আজকের ইন্টারভিউ বোর্ডে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। ’

আরেক প্রার্থী নিয়োগ বোর্ড বাতিলের আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘হঠাৎ করে নিয়োগ বোর্ডের খবর শুনে আমি অত্যন্ত অবাক ও মর্মাহত হয়েছি। গত সিনেট সভায় সব সেশন বেনিফিট (চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ামাত্র অবসরে যাওয়া) বাতিল হয়। তাহলে দুদিন পর সেশন বেনিফিট বাতিল হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে রেজিস্ট্রারের পদোন্নতি রেগুলার করা সম্ভব? সেশন বেনিফিট বাতিলের দুদিন পর এই বোর্ড স্ববিরোধী। ’

এদিকে প্রার্থীদের পাঠানো চিঠির একটি কপি গণমাধ্যমের কাছে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, চিঠিটি গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) ইস্যু করা। সেখানে বলা হয়েছে, ‘গত বছরের ১৬ জুন তারিখের আবেদনের প্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিটির সভা আগামী ২৬ জুন বিকেল সাড়ে ৩টায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে তার অফিস কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। ’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য ৮ সদস্যের একটি নিয়োগ বোর্ড গঠন করতে হয়। যার প্রধান হন উপাচার্য। এই বোর্ডে উপাচার্য ছাড়া একাডেমিক কাউন্সিল থেকে মনোনীত দুজন, সিন্ডিকেট থেকে মনোনীত দুজন, আচার্য কর্তৃক মনোনীত দুজন ও উপাচার্য মনোনীত একজন সদস্য থাকেন।

নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ বোর্ডে উপাচার্যের মনোনীত সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, সিন্ডিকেট মনোনীত সদস্য হিসেবে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির ও সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ।

এছাড়া একাডেমিক কাউন্সিলের মনোনীত সদস্য হিসেবে রয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম। একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত এ দুই সদস্যদের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।