ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

কাদেরের আয় ফখরুলের তিনগুণ

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৮
কাদেরের আয় ফখরুলের তিনগুণ ওবায়দুল কাদের ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ফাইল ফটো

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বার্ষিক আয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চেয়ে প্রায় তিনগুণ। কাদেরের বছরে আয় ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৬৫১ টাকা। আর ফখরুলের আয় ১১ লাখ ৩১ হাজার ৪৩৩টাকা। এছাড়া কাদের বিএ (অনার্স) আর ফখরুল এমএ পাস করেছিলেন।

বড় দুই দলের দুই সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতা এমন তথ্যই দাখিল করেছেন আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায়।

ওবায়দুল কাদেরের বাবা মৃত মোশারফ হোসেন, মাতা ফজিলাতুন্নেছা, ঠিকানা: মোশারফ হোসেন বাড়ি, গ্রাম: বড় রাজপুর, ১নং ওয়ার্ড, বসুরহাট পৌরসভা, ডাকঘর: বসুরহাট, উপজেলা: কোম্পানীগঞ্জ, জেলা: নোয়াখালী।

তার নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী-৫।

হলফনামায় মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন- বর্তমানে তার নামে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। অতীতে ১২টি মামলা দায়ের হয়েছিল। যার মধ্যে নয়টি নিষ্পত্তি এবং তিনটিতে খালাস পেয়েছিলেন।

তিনি পেশা উল্লেখ করেছেন, বেসরকারি চাকরি (বর্তমানে এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে বেতন ভাতা পাই এবং বই ও পত্রপত্রিকায় লিখে আয় করি)।

আয়ের স্থানে তিনি উল্লেখ করেছেন- বাড়িভাড়া/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে বছরে আয় ১৩ লাখ ৬৮ হাজার, পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শক ইত্যাদি) ১২ লাখ ৬০ হাজার, বই লিখে আয় ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫১টাকা। মোট ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৬৫১টাকা। মাসিক গড় আয় ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮০৪ টাকা ২৫ পয়সা।

স্ত্রীর আয়ের স্থানে তিনি উল্লেখ করেছেন- বাড়ি ভাড়া/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে বছরে আয় ২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩৬ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৬০টাকা। পেশার স্থানে লেখা আছে প্রযোজ্য নয়, অন্যান্য আয় দেখিয়েছেন- ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫১৯ টাকা।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার নিজের নগদ টাকা আছে ৫৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণ ৮৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪২ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ১ কোটি ২৪ লাখ ২১ হাজার ২৭৮টাকা। বাস, ট্রাক, মোটর গাড়ি ও মোটরসাইকেল ইত্যাদি বিবরণী (পরিমাণ, অর্জনকালীন সময়ের মূল্যসহ) ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। এছাড়া ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২৫ তোলা স্বর্ণ আছে।

তিনি উপহার পাওয়া মোবাইল ব্যবহার করেন। তবে নিজের নামে ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র আছে।

স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে- স্ত্রীর হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা আছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণ ২৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৫৫ লাখ ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা। ব্যক্তিগত কোনো গাড়ি নেই। ১ লাখ টাকা মূল্যের ২০ তোলা স্বর্ণ আছে। ১২ হাজার টাকার (টিএন্ডটি ও মোবাইল) আছে। আছে ১ লাখ টাকার আসবাবপত্র।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- উত্তরায় অর্জনকালীন সময়ের ৫০ লাখ ৭৯ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি এবং পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে ৬০ শতাংশ অকৃষি জমি। ওবায়দুল কাদেরের নিজস্ব কোনো বাড়ি/এপার্টমেন্ট নেই। তবে স্ত্রীর অর্জনকালীন সময়ের ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার ৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে।

এদিকে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবা মির্জা রুহুল আমিন, মাতা ফাতেমা আমিন, ঠিকানা- মহল্লা: কালিবাড়ী, ওয়ার্ড নং: ৬, ডাকঘর: ঠাকুরগাও, থানা: ঠাকুরগাও সদর, উপজেলা: ঠাকুরগাও সদর, জেলা: ঠাকুরগাও। তার নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাও-১। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের আসনেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনি।

হলফনামায় তিনি পেশা উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ী ও পরামর্শক।

বর্তমান ফৌজদারি মামলার পূর্ণাঙ্গ তালিকা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পাওয়া যায়নি। তবে ‘আংশিক’ তালিকা অনুযায়ী ৩৮টি মামলার মধ্যে তিনটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি।

অতীতে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছিল সাতটি। ছয়টিতে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। আর একটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের পর নথিজাত করা হয়েছে।

আয়ের খাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন- কৃষিখাত থেকে বছরে আয় ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা। বাড়িভাড়া/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া খাতে ফখরুলের কোনো আয় না থাকলেও এ খাতে তার স্ত্রী বছরে আয় করেন ৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৮৮টাকা। তিনি ব্যবসা থেকে আয় করেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৯৭৪টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ১ লাখ ৪১ হাজার ১৮১/৮৭ টাকা। তার স্ত্রী শেয়ার থেকে ৮৪ হাজার ৮৯৫ টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে বছরে আয় করেন ২০ লাখ টাকা। পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শক ইত্যাদি) থেকে বছরে আয় করেন ৬ লাখ টাকা। চাকরি করে বছরে সম্মানী ভাতা পান ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। তার স্ত্রী চাকুরি থেকে বছরে আয় করেন ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪০ টাকা। তিনি বছরে ব্যাংক সুদ পান ২ হাজার ৮০৫টাকা। তার স্ত্রী ব্যাংক সুদ থেকে ২৬ হাজার ৯০৭ টাকা এবং ডিপিএস থেকে পান ১১ লাখ ১৯ হাজার ৩৮৮টাকা।

মির্জা ফখরুলের বছরে আয় ১১ লাখ ৩১ হাজার ৪৩৩টাকা। মাসিক গড় আয় ৯৪ হাজার ২৮৬ টাকা।

অস্থাবর সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন- নগদ টাকা আছে ৪২ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৫/৩২ টাকা। তার স্ত্রীর হাতে আছে ৫ হাজার ৩১২ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৮১/৭৮ টাকা। তার স্ত্রীর আছে ২১ লাখ ৭২ হাজার ৮৭০/৭৪ টাকা। দি মির্জাস প্রা. লিমিটেডে উত্তরাধিকার সূত্রে তার শেয়ার আছে ৬৫৮টি।

নিজের নামে ফখরুলের সঞ্চয়পত্র না থাকলেও স্ত্রীর নামে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। স্ত্রীর কাছ থেকে প্রাপ্ত একটি প্রাইভেটকার আছে। তার স্ত্রীর ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ১৪০ টাকার একটি গাড়ি আছে। আছে ১০ ভরি সোনা, যা বিয়ের সময় দান হিসেবে পেয়েছেন। এছাড়া তার স্ত্রীর ২ লাখ টাকার স্বর্ণ আছে।

১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১টি টিভি, ২টি ফ্রিজ, ১টি এসি, ২টি ডেকসেট আছে। এছাড়া তার স্ত্রীর ১ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে।

১ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের খাট, সোফা সেট ও ডাইনিং টেবিল আছে। স্ত্রীর ১ লাখ টাকার আসবাবপত্র আছে।

স্থাবর সম্পদের হিসেবে উল্লেখ করেছেন- অর্জনকালীন মূল্যের ৬০ হাজার টাকার ৫ একর কৃষি জমি আছে। তার স্ত্রীর আছে অর্জনকালীন মূল্যের ৫০ হাজার টাকার জমি। ৫ লাখ টাকার অর্জনকালীন সময়ের মূল্যের ৪ শতক অকৃষি জমি। স্ত্রীর আছে ৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা মূল্যের ৫ কাঠা অকৃষি জমি।

অর্জনকালীন ১০ লাখ টাকার দোতলা বাসার একাংশ আছে। নিজের কোনো এপার্টমেন্ট না থাকলেও তার স্ত্রীর ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের এপার্টমেন্ট আছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৮
ইইউডি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।