ভুল তথ্যের এনআইডি পাওয়ায় সংশোধনের ভোগান্তি যেমন সেবাগ্রহীতার, তেমনি কর্মঘণ্টার অপচয় নির্বাচন কমিশনেরও। তাই সংস্থাটি সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে এবং সেবাগ্রহীতার ভোগান্তি কমাতে হাতে নিয়েছে নতুন উদ্যোগ।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে প্রথমবারের মতো একটি ‘বিশেষ’ কাজ সম্পন্ন করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। আর তা হলো নিজের সব তথ্য নিজেকেই পরখ করে নেওয়ার সুযোগ দেবে ইসি। অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইসির লোকবল তথ্য সংগ্রহ করলেও নিবন্ধনের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই তার তথ্যের প্রুফ দেখে দিতে হবে।
চলমান হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে ১৩ মে পর্যন্ত। আর ২৫ মে থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম। রেজিস্ট্রেশনের সময় সংশ্লিষ্ট তথ্যদাতাকে রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে গিয়ে দশ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে হবে। সবকিছু সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তার দেওয়া তথ্যের একটি প্রিন্ট কপি দেবেন। যেখানে ভুল আছে কিনা দেখে ওই ব্যক্তিকে স্বাক্ষর করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন সেই স্বাক্ষরসহ ফরমের স্ক্যান করা কপি সার্ভারে সংরক্ষণ করবেন। ফলে ইসিকে দোষারোপের আর কোনো সুযোগ থাকবে না।
ইসির সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসের স্বাক্ষরিত এমন নির্দেশনা এরইমধ্যে সব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- নিবন্ধন কেন্দ্রে ডাটা এন্ট্রির পর আবশ্যকীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তার নাম/পিতা/মাতা/স্বামী/স্ত্রীর নাম ও জন্ম তারিখ ইত্যাদি তথ্যের একটি প্রিন্ট কপি প্রুফ করে দেওয়ার জন্য দেবেন। এক্ষেত্রে প্রিন্ট কপি দেখিয়ে তাতে কোনো ভুল থাকলে তা লিখে নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর নেবেন। এরপর নিবন্ধন ফরম, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও জন্ম সনদের সঙ্গে ডাটাবেজে সংযুক্ত করবেন স্বাক্ষর করা ফরমের ওই কপিটিও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাদের অক্ষরজ্ঞান নেই, তারা অন্যের সহায়তায় এই কাজটি সম্পন্ন করবেন। স্বাক্ষরের বদলে তাদের কাজ থেকে নেওয়া হবে টিপসই।
মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এই উদ্যোগটি এবারই প্রথম নেওয়া হয়েছে। এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে ভুলের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। এছাড়া ইসির দিকে আঙুল তোলার সুযোগও থাকবে না। যেহেতু সুযোগটা থাকছে, তাই নিজের তথ্যগুলো নিজেই চেক করে নিলে ভালো হবে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এটি খুব ভালো একটি উদ্যোগ। এনআইডিতে ভুল থাকলে ভোগান্তিটা সেবাগ্রহীতারই হয়। তাই নিজের তথ্য নিজে পরখ নেওয়ার সুযোগ থাকায় ভুলের সংখ্যা কমে আসবে।
ইসি কর্মকর্তারা আরো বলেন, এই উদ্যোগের ফলে ব্যক্তি তথ্যের নিরাপত্তাও আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। কেননা, এই ব্যবস্থার ফলে কেউ আর ভুল তথ্য দিয়ে এনআইডি সংশোধনের অপচেষ্টা করতে পারবেন না। কেননা, ব্যক্তি নিজেই তার তথ্যের সঠিকতা যাচাই করে স্বাক্ষর করবেন। আর সেই কপি ইসির সার্ভারে থাকবে। এতে পরে ভুল হয়েছে বলার আর কোনো সুযোগই পাবেন না কেউ।
এবার ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম, সেসব নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছে ইসি। ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়াদের নাম ২০২০ সালে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর তাদের বয়স এখনো ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি, তাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
২৩ এপ্রিল থেকে ১৩৫ উপজেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম চলছে। অবশিষ্ট উপজেলাগুলোয় তথ্য সংগ্রহের সময়সূচি পরে জানাবে ইসি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস