ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন

দেওয়ানগঞ্জ থেকে এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান ও গোলাম রাব্বানী নাদিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা থেকে: ভোটের প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা। শীতকে হার মানিয়ে মেয়র পদে ভোটযুদ্ধে নামা প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

ভোটারদের মন গলাতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

তবে সচেতন ভোটাররা প্রার্থীদের অতীত ও বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে মেতেছেন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও তারা প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দাঁড়িয়েছেন তিন প্রার্থী। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের শাহ নেওয়াজ শাহেনশাহ (নৌকা), বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী নূর নবী অপু (জগ) ও বিএনপির এ কে এম মূসা (ধানের শীষ)।

বিএনপির প্রার্থীকে নিয়ে ভোটারদের মাঝে তেমন মাতামাতি চোখে পড়েনি। তাদের মতে, এখানে আসল লড়াই হবে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে।

এ পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহ নেওয়াজ শাহেনশাহকে ঠেকাতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরাও। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জেতাতেই মরিয়া হয়ে কাজ করছেন। ফলে দিন যত গড়াচ্ছে পাল্টে যাচ্ছে ভোটের চিত্র।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর অবধি পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের দেওয়ানগঞ্জ বাজার, ৩ নং ওয়ার্ডের উত্তর কালিকাপুর, ৬ নং ওয়ার্ডের রেল কলোনি ও বেলতলীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই ধরা পড়ে।

এলাকার বিভিন্ন চায়ের স্টল, বিপণী বিতান, সবজি বাজারসহ সবখানে ভোটের আলোচনায় সরগরম হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় ভোটাররা জানান, ব্যক্তিগত যোগ্যতার মাপকাঠিতে বিবেচনা করেই তারা ৩০ ডিসেম্বর মেয়র পদে লড়াইয়ে নামা প্রার্থীদের ভোট দেবেন। শাহেনশাহ ও অপুর দিকেই তাদের সমর্থনের পাল্লা ভারী বলেও জানান ভোটাররা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মেয়র পদে এ নির্বাচনে দলের প্রার্থী শাহ নেওয়াজ শাহেনশাহকে চ্যালেঞ্জ করে এখানে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র নূর নবী অপু। তিনি জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা ও স্থানীয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রফিকুল ইসলামের ছেলে।

দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজের ভাতিজাকেই সমর্থন দিয়েছেন। তার বলয়ের নেতা-কর্মীরা এ কারণেই ভোটের মাঠে নীরব।

একই রকম আলাপ শোনা গেলো দেওয়ানগঞ্জ বাজার এলাকার শাহজাহান মিয়ার হোটেলে। সেখানে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ভোটের আলাপ করছিলেন কয়েকজন। নৌকার প্রার্থীকে ঠেকাতে ভেতরে ভেতরে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে বিএনপির একটি পক্ষের নেতা-কর্মীদের গাঁটছড়া বাঁধার কথাও বলছিলেন তারা।

পরিচয় দিয়ে সেই আড্ডায় যোগ দিতেই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ কথা ঘুরিয়ে ফেললেন। ষাটোর্ধ্ব এ মুক্তিযোদ্ধা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের হেলে পড়ার কথা জানালেন।

বর্তমান মেয়রের সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে অবৈধ কাজ কইরা অপুরে আমরাই পাস দিছি। এ প্রার্থী আওয়ামী লীগের না। এলাকার উন্নয়নের জন্যই সবাই নৌকায় ভোট মারবো।

তার সামনেই বসে থাকা আরেক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াদুদ দুদুকে মনে হলো এ আড্ডার মোড়ল। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ধানের শীষের লোকজনের মাঠে নামার ঘটনায় ভ্রুকুচকে তার জবাব, ‘বিএনপির বিভিন্ন লোক দলবদ্ধ হইয়া অপুর কাছ থেকে টাকা নিতাছে। কিন্তু ভোটটা তারা ধানের শীষেই দিবো।

এ সময় দরাজ কণ্ঠে তিনি গেয়ে উঠেন, ‘ধান আর নাইয়ে বাঁধছে যুদ্ধ, জগের খবর নাই। ’ সঙ্গে সঙ্গে টেবিল চাপড়ে তাল দিলেন আব্দুল করিম, ইউনুছ আলী বকুলসহ জনা পাঁচেক প্রবীণ ভোটার।

পথ চলতে গিয়ে একই এলাকার স্থানীয় উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনের শহীদ লাইব্রেরির মো. সাগর আলীও বললেন স্বতন্ত্র বিদ্রোহী প্রার্থী অপুর পক্ষে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীদের সুস্পষ্ট অবস্থানের কথা। তার ভাষ্যে, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী ভালো লোক। তার পক্ষে বিএনপির কিছু লোক কাজ করতাছে। ’

সাগরের সঙ্গে কথা শেষ করেই উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে কথা হলো স্থানীয় শ্রমিক দল সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। দলীয় গুটিকয়েক নেতা-কর্মীকে নিয়ে রোদে গা গরম করছেন তিনি।

বিএনপির লোকজন না কি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে, এমন আলাপ তুলতেই রাজ্জাকের সামনে চেয়ারে বসে থাকা এক ছাত্রদল নেতা বললেন, ‘দলের সাইনবোর্ড ওয়ালা কেউ জগের পক্ষে নাই। তবে নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যেই মূল লড়াই হবে। ’

পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের চুনিয়াপাড়া এলাকায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী অপু। এ সময় তার সঙ্গে দেখা গেলো বেশ কয়েকজন ছাত্রদল নেতা-কর্মীকে। তাদের একজন আরিফ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপি করি। আমাদের দলের প্রার্থীকে আমাদের পছন্দ হয় নাই। অপু ভাই ভালো লোক হওয়ায় তার পক্ষেই ভোট চাইতাছি। সুষ্ঠু ভোট হইলে ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে তিনিই জিতবেন। ’

জগ প্রতীকের প্রার্থী নূর নবী অপুও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে সবাই আমার সঙ্গে আছেন। নিরপেক্ষ ভোট হলে আমি জিতবো। এবং দেওয়ানগঞ্জকে মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো। ’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ নেওয়াজ শাহেনশাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিএনপির নেতা-কর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে প্রচারণা চালানোর বিষয়ে কথা না বললেও অভিযোগের আঙুল তুললেন দলীয় সংসদ সদস্য আবুল আজাদের দিকে।

ক্ষোভ ঝেড়ে তিনি বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ নির্বাচনে অর্থনৈতিকভাবে তার ভাতিজাকে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু ভোটাররা অপুকে চাচ্ছেন না। ’

এসব বিষয়ে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমি ভাতিজার পক্ষে অবস্থান নেইনি। অপু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাই তাকে ভোটে দাঁড় করিয়েছেন। তবে অপু একজন ভালো মেয়র। ’

১৯৯৯ সালের ১৩ জানুয়ারি দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে এটি ছিল ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। এ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২৬ হাজার ৭১৯ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এমজেএফ/

** নির্বাচনী চা!
** ‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’
** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।