গেল ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন। এ নির্বাচনে মিশা সওদাগর ও ডিপজল প্যানেল নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল।
কিন্তু এক মাস না পেরোতেই বেঁকে বসলেন এই অভিনেত্রী। সোজা চলে গেলেন আদালতে। আইনজীবী ধরে করিয়েছেন রিট। চাইছেন শিল্পী সমিতির নতুন এই কমিটির ফলাফল স্থগিত করা হোক! গত মঙ্গলবার (১৪ মে) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নিপুণের হয়ে রিটটি করেছেন আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায়।
আগামী ১৯ মে রিটের শুনানি হবে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চে। এমন কাণ্ড ঘটেছিল গত মেয়াদের নির্বাচনেও। তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েও চেয়ারে বসতে পারেনি ভোটে নির্বাচিত জায়েদ খান। নতুন মেয়াদের নির্বাচনে একই পথে হেঁটেছেন নিপুণ। মালা পরিয়ে বরণের ২৬ দিন পর কেন রিট করলেন নিপুণ?—এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মিডিয়া পাড়ায়।
তবে নিপুণের রিট আমলে নিচ্ছে না শিল্পী সমিতি। এমনটাই জানিয়েছেন সহ-সভাপতি ডি এ তায়েব। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় কার্যকরী সভা শেষে সংবাদমাধ্যমকে এমনটাই জানান তিনি। আমলে না নেওয়ার কারণও ব্যাখা করেছেন তিনি। তায়েব বলেন, রিট আমরা আমলে নিচ্ছি না। কারণ, রিট হওয়ার মতো ঘটনাই ঘটেনি। সমিতির সদস্য এমন যে, কেউ চাইলেই রিট করতে পারে। তার মানে বিনা কারণে এবং যুক্তহীনভাবে বলবে, সেটা তো হবে না। আমরা আইন দিয়ে আইনকে লড়ব।
সঙ্গে তায়েব যোগ করলেন নিপুণের ভাষাগত অনেক সমস্যা আছে। সে প্রসঙ্গে বলেছেন, তার কিছু ভাষাগত সমস্যা আছে। সম্মানিত সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত পড়াশোনা নিয়ে যেসব কথা বলেছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন শিল্পীর মুখে আমরা এটা আশা করি না। জাতির কাছে একজন সম্মানিত মানুষকে তিনি হেয় করেছে। এতে আমরা খুব ব্যতীত।
ডিপজলকে ‘অশিক্ষিত’ বলে নিপুণের মন্তব্য সহজ ভাবে নিচ্ছে না শিল্পী সমিতি। সাংগঠনিকভাবে দেখছেন তারা। কারণ, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিল করেছিলেন নিপুণ আক্তার। গণমাধ্যমে শিল্পী সমিতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন নিপুণ। এবার একই কারণে সদস্যপদ হারাতে পারেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে তায়েব বলেন, এটা আমরা সহজে নিচ্ছি না। কার্যকরী সভায় বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়েছে। আমরা অ্যাকশনে যাব। এটা সহজভাবে নিচ্ছি না কারণ, এটা শুধু সাধারণ সম্পাদককে ছোট করা হয়নি, নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ডকেও ছোট করা হয়েছে। শিল্পী সমিতি নিয়ে যিনি এমন নিষ্ঠুর কথা বলেছেন তাকে আমরা ৭ দিনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেব। সন্তোষজনক উত্তর না এলে তার সদস্যপদ বাতিল করা হবে।
চলচ্চিত্রের সংকটকাল উল্লেখ করে এই অভিনেতা বলেন, এমনিতেই চলচ্চিত্রের দূর সময়। তার মধ্যে এতদিন পর এসে যে, প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা দুঃখজনক। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের দিন নিপুণ ডিপজল ভাইকে মালা পড়িয়ে বলেছিলেন—ডিপজল ভাই আমার বাপের মতো। আবার তাকেই অশিক্ষিত বলে হেয় করার প্রবণতা দেখিয়েছে। তার কথা ও কাজে মিল পাচ্ছি না।
সঙ্গে তায়েব এও বললেন, আমরা ধারণা করছি ওনার মাথায় সমস্যা আছে কিনা। আমাদের মনে হচ্ছে তার (নিপুণ) চিকিৎসার প্রয়োজন। তার কথা ও কাজের মধ্যে মিল নেই। সংবিধানে লেখা আছে কেউ যদি শিল্পী সমিতির কোনো কর্মকর্তাকে হেয় করে কথা বলে তাহলে তার সদস্যপদ স্থাগিত করা যাবে। এছাড়াও অনেকগুলো কারণ আছে যার জন্য তার সদস্যপদ বাতিল হওয়ার মতো। তাকে আমরা তিন বার চিঠি দেব। তিনবারের মধ্যে সন্তোষজনক উত্তর না এলে তাকে বহিস্কার হবে। কোনো অশিল্পীকে আমরা রাখব না।
প্রসঙ্গত, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসা নিয়েও দ্বন্দ্বে জড়ান নিপুণ এবং চিত্রনায়ক জায়েদ খান। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পর মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৪
এনএটি